• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

আইনসিদ্ধ নয় বলে এনজিওর বীমা ব্যবসা বন্ধের উদ্যোগ


নিজস্ব প্রতিবেদক মার্চ ২৯, ২০১৬, ০৩:০৭ পিএম
আইনসিদ্ধ নয় বলে এনজিওর বীমা ব্যবসা বন্ধের উদ্যোগ

সোনালীনিউজ রিপোর্ট

দেশে কর্মরত বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলো (এনজিও) দীর্ঘদিন ধরেই ক্ষুদ্রঋণ প্রদানসহ বিভিন্ন লাভজনক ব্যবসার পাশাপাশি বীমা ব্যবসা করে আসছে। কিন্তু আইনসিদ্ধ না হওয়ায় এনজিওগুলোকে বীমা ব্যবসা বন্ধ করতে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) পক্ষ থেকে একাধিকবার জানানো হয়েছে। কিন্তু দুটি আইনের সাংঘর্ষিক বিধান থাকায় মাইক্রো ক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি (এমআরএ) এই বিষয়ে কোনো পদক্ষেপই নিতে পারছিল না।

সম্প্রতি সাংঘর্ষিক আইনটি বাতিলে এনজিও খাতে আমানতকারী নিরাপত্তা তহবিল গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে এমআরএ। আইডিআরএ ও এমআরএ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, এমআরএ আইনের ২৫ নম্বর ধারা অনুযায়ী ক্ষুদ্র ঋণদানকারী এনজিওগুলো বীমা সেবা দিতে পারবে। তবে তার পূর্ণ বিবরণ, আদায়কৃত প্রিমিয়াম, গ্রাহকের দাবি পরিশোধ এবং প্রতিষ্ঠানের আর্থিক সক্ষমতার বিবরণ কর্তৃপক্ষের কাছে দাখিল করতে হবে। কিন্তু দেশের তৃণমূল পর্যায়ে এনজিওগুলোর বীমা ব্যবসা সম্প্রসারণ হলেও এ থেকে ঠিক কী পরিমাণ প্রিমিয়াম আদায় হয়েছে এবং কত দাবি পরিশোধ করা হয়েছে এমআরএতে তার কোনো তথ্য নেই।

এ পরিস্থিতিতে এনজিওগুলোর বীমা কার্যক্রমে স্বচ্ছতা আনতে এবং সাধারণ গ্রাহকদের স্বার্থে আমানতকারী নিরাপত্তা তহবিল গঠন, সংরক্ষণ ও পরিচালনা-সংক্রান্ত একটি নীতিমালা চূড়ান্ত করেছে এমআরএ। ওই নীতিমালা অনুযায়ী এনজিওর সংগৃহীত আমানতের ওপর নির্ধারিত ফি প্রদানপূর্বক একটি তহবিল গঠন করা হবে। যা সংরক্ষণ ও পরিচালনার দায়িত্ব থাকবে এমআরএ পরিচালনা বোর্ডের ওপর। তহবিলের অর্থ সরকার অনুমোদিত কোনো খাতে বিনিয়োগ করা যাবে। আর তহবিলের আয়-ব্যয়ের হিসাব প্রচলতি সরকারি বিধি-বিধান অনুসারে যথাযথভাবে সংরক্ষণ করতে হবে।

সূত্র জানায়, কোনো ক্ষুদ্র ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠান নিবন্ধন সনদ পাওয়ার দিন থেকেই আমানতকারী নিরাপত্তা তহবিলের আওতাভুক্ত হবে। ন্যূনতম ঝুঁকিপূর্ণ এনজিওকে সংগৃহীত আমানতের ওপর দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ, কম ঝুঁকিপূর্ণ প্রতিষ্ঠানকে দশমিক ১০ শতাংশ, মধ্যম ঝুঁকিপূর্ণ প্রতিষ্ঠানকে দশমিক ১৫ শতাংশ এবং উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ প্রতিষ্ঠানকে দশমিক ২০ শতাংশ বার্ষিক ফি কর্তৃপক্ষ বরাবর নির্ধারিত সময়ে দিতে হবে।

কারণ সরকারের কাছ থেকে নিবন্ধন সনদপত্র গ্রহণ করার সময় এনজিওগুলো লিখে থাকে─ এটি একটি অলাভজনক, অরাজনৈতিক ও স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান। কিন্তু অলাভজনক প্রতিষ্ঠানের আড়ালে নিবন্ধন শর্ত লঙ্ঘন করে এনজিওগুলো বিভিন্ন ধরনের লাভজনক ব্যবসা-বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। ব্যাংক-বীমা, হাউজিং ঋণ, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ, বস্ত্র উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ, হাসপাতাল-ক্লিনিক, কৃষিপণ্য, মৎস্য, পশুপালন, সিএনজি স্টেশন, শিল্প-কারখানা, আমদানি-রফতানি ও ছাপাখানাসহ বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা-বাণিজ্যের বাজার দখল করছে ওসব এনজিও প্রতিষ্ঠান।

তাছাড়া এনজিওগুলো নানা ধরনের ব্যবসা করলেও সরকারের কাছ থাকে পাচ্ছে বিশেষ সুবিধা। কারণ সেবামূলক প্রতিষ্ঠান হওয়ায় ওসব প্রতিষ্ঠানের সরকারকে কোনো ধরনের রাজস্ব দেয়ার বিধান নেই। এজন্য বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন এদিকটায় সরকারের নীতিনির্ধারণী মহলের নজরদারি বাড়ানো জরুরি।

সূত্র আরো জানায়, সাম্প্রতিক সময়ে এদেশে কর্মরত অনেক এনজিওই গ্রাহকদের আমানত সংগ্রহ করে লাপাত্তা হয়ে গেছে। আবার অনেক প্রতিষ্ঠান কার্যক্রম বন্ধ করে দিচ্ছে। এ অবস্থায় অনেক গ্রাহকই বিভিন্ন ভুয়া এনজিওর ফাঁদে পা দিয়ে সর্বশান্ত হয়েছেন। তাছাড়া এনজিওগুলো কোন প্রক্রিয়ায় প্রিমিয়ামের টাকা আদায় করছে তাও কারোর জানা নেই। ফলে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। বিষয়টি নিয়ে বেশ কয়েকবার আইডিআরএ এবং বাংলাদেশ ব্যাংক আলোচনায় বসেছে। তাতে এনজিওগুলোর এই ধরনের কার্যক্রমকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে মানি লন্ডারিং হিসেবেও আখ্যা দেয়া হয়।

এ প্রসঙ্গে এমআরএ পরিচালক মো. সাজ্জাদ হোসাইন বলেন, বীমা আইনে অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের বীমা ব্যবসা করার নিয়ম না থাকলেও এমআরএ আইনে বাধা নেই। এ সুযোগে অনেক এনজিও গ্রাহকদের বীমাসেবা দিয়ে আসছে। যদিও এই সংক্রান্ত প্রিমিয়াম আয় বা দাবি পরিশোধের রেকর্ড এমআরএর কাছে নেই। তবে নিরাপত্তা তহবিলটি কার্যকর হলে ক্ষুদ্র ঋণদানকারী সংস্থার সরাসরি বীমাসেবা দেয়ার বিধানটি বাতিল হবে। কারণ তহবিলটি পরিচালনা করবে নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ।

সোনালীনিউজ/আমা

Wordbridge School
Link copied!