• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

আইপিএলের সেরা ‘উদীয়মান’ মুস্তাফিজ


স্পোর্টস ডেস্ক মে ৩০, ২০১৬, ১০:১৬ এএম
আইপিএলের সেরা ‘উদীয়মান’ মুস্তাফিজ

ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) ক্রিকেটের এবারের আসরের শিরোপা জিতে নিয়েছে সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ। রবিবার (২৯ মে) রাতে টানটান উত্তেজনার ফাইনালে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুকে ৮ রানে হারিয়ে প্রথমবারের মতো এই আসরের শিরোপা জিতেছে দলটি। একই রাতে দারুণ এক ইতিহাস গড়েছেন হায়দ্রাবাদের হয়ে খেলা বাংলাদেশের তরুণ পেসার মুস্তাফিজুর রহমান। ক্যারিয়ারের প্রথম আইপিএলেই ‘সেরা উদীয়মান খেলোয়াড়’র পুরস্কার জিতে নিয়েছেন বাংলাদেশের সাতক্ষীরা থেকে উঠে আসা এই বোলিং বিস্ময়। আইপিএলের নয় বছরের ইতিহাসে প্রথম বিদেশি ক্রিকেটার হিসেবে এই পদক জয়ের ইতিহাস গড়লেন বাংলাদেশের কাটার মাস্টার।

গত বছর পাকিস্তানের বিপক্ষে টি২০ ক্রিকেট দিয়ে আন্তর্জাতিক তথা বিশ্ব ক্রিকেটের প্রতিযোগিতামূলক আঙিনায় আগমন ঘটেছে মুস্তাফিজুর রহমানের। প্রথম ম্যাচেই সফল ছিলেন তিনি। অফ কাটারের সফল প্রয়োগে ওই ম্যাচে নিয়েছিলেন ২ উইকেট, সঙ্গে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন পৃথক পরিচয়ে।

সে যে পথ চলা শুরু : এরপর একে একে ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দলের বিপক্ষেও অফ কাটারের জাদু দেখিয়ে মুস্তাফিজ রাতারাতি বনে গিয়েছিলেন সুপারস্টার। সাফল্যের সেই ধারায় এশিয়া কাপ ও টি২০ বিশ্বকাপেও দ্যুতি ছড়িয়ে লিকলিকে গড়নের এই পেস বোলারটি পেয়েছেন বিশ্বব্যাপী ‘কাটার মাস্টার’ উপাধি। তার বোলিং প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে আইপিএলের দল সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ ১ কোটি ৪০ লাখ ভারতীয় রুপিতে মুস্তাফিজকে কিনে নিয়েছিল আইপিএলের নিলাম অনুষ্ঠানে।

দেশের বাইরে এটাই ছিল কোনো ক্রিকেট আসরে মুস্তাফিজের প্রথম অংশগ্রহণ। তাতে শুরু থেকেই উজ্জ্বল ছিলেন তিনি।

আসরজুড়ে হায়দ্রাবাদের সাফল্যের অন্যতম কারিগর ছিলেন বাংলাদেশের এই বোলিং সেনসেশন। একদিকে টি২০ ক্রিকেটের মতো ফরম্যাটে কম রান দেওয়ার বিরল ক্ষমতা, অন্যদিকে অফ কাটার ও নিখুঁত ইয়র্কারের সমন্বয়ে অসাধারণ বোলিং বৈচিত্র্যে বিশ্বসেরা ব্যাটসম্যানদের বোকা বানানোর পারদর্শিতা; আইপিএলের শুরু থেকেই মুস্তাফিজ ছিলেন পাদপ্রদীপের আলোয়। চারদিকে ভূয়সী প্রশংসা চলছিল তাকে ঘিরে। তাই আসরের সেরা উদীয়মান খেলোয়াড় নির্বাচনের ভোটাভুটিতে ছিল মুস্তাফিজের নামও। শেষ অব্দি ভক্তদের রায়ে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েছেন তিনি।

মোট ৮৩.২ শতাংশ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন মুস্তাফিজ। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের লোকেশ রাহুল (রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর খেলোয়াড়) পেয়েছেন ৬.৩ শতাংশ ভোট। অনলাইন ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত এই পদক জয়ের লড়াইয়ে আরও যারা শামিল ছিলেন তারা হলেন-ভারতের জাসপ্রিত বুমরা, মুরুগান অশ্বিন, শিভিল কৌশিক, ক্রুনাল পান্ডে, বারিন্দার সরন, রিশব পন্ট এবং অস্ট্রেলিয়ার কেন রিচার্ডসন ও অ্যাডাম জাম্পা। শেষ অব্দি ২১ বছর বয়সী মুস্তাফিজ সবাইকে টপকে জিতে নিয়েছেন টি২০ ক্রিকেটে বিশ্বের সবচেয়ে বড়, দীর্ঘস্থায়ী ও আকর্ষণীয় আসরের সেরা উদীয়মান খেলোয়াড়ের পুরস্কারটি। ফাইনাল শেষে তার হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে এই পদক ও প্রাইজমানি।

আসরের শুরু থেকেই হায়দ্রাবাদের বোলিং শক্তির অন্যতম ভরসা ছিলেন মুস্তাফিজ। সব ম্যাচেই তাকে ঘিরে ‘ডেথ ওভার’ বা শেষ দিকের ওভারগুলোতে যুদ্ধজয়ের পরিকল্পনা সাজিয়েছে হায়দ্রাবাদ। ইনজুরির কারণে কোয়ালিফায়ার-২ ম্যাচটি খেলা হয়নি মুস্তাফিজের। ফলে ফাইনালে তার অংশগ্রহণ নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল। তবে সেই অনিশ্চয়তা দূর করে ঠিকই মাঠে নেমেছিলেন কাটার মাস্টার। ম্যাচে ৪ ওভার বোলিং করে ৩৭ রান দিয়ে নিয়েছেন শেন ওয়াটসনের উইকেট।

এটি ছিল আসরে মুস্তাফিজের ১৭তম উইকেট। এই রাতে খানিকটা খরুচে বোলিং স্পেল সঙ্গী হলেও পুরো আসরে কিন্তু অন্তত ২০ ওভার বোলিং করেছেন এমন বোলারদের মধ্যে মুস্তাফিজের ইকোনমি রেটই (৬.৯০) সেরা। এই আসরের সেরা বোলারদের (উইকেট শিকারের বিবেচনায়) তালিকায় তিনি রয়েছেন ৫ নম্বরে। শীর্ষে রয়েছেন তারই হায়দ্রাবাদ সতীর্থ ভারতীয় পেসার ভুবনেশ্বর কুমার; ২৩ উইকেট নিয়ে। আসরজুড়ে মুস্তাফিজের বলে একাধিক ক্যাচ ড্রপ হয়েছে। তা না হলে হয়তো সেরা উদীয়মান খেলোয়াড়ের মতো সেরা উইকেটশিকারী বোলারটিও হতে পারতেন মুস্তাফিজ।

সব মিলিয়ে সফল এক আইপিএল মিশন শেষ করলেন মুস্তাফিজুর রহমান। টি২০ ক্রিকেটের প্রতিযোগিতামূলক এই আসরে নিজে যেমন প্রশংসিত হয়েছেন, তেমনি গর্বিত করেছেন বাংলাদেশকে, ১৬ কোটি বাংলাদেশিকে।

প্রসঙ্গত, আইপিএলের আগের আসরগুলোতে সেরা উদীয়মান খেলোয়াড়ের পুরস্কার ভারতীয়রাই জিতেছে। মুস্তাফিজ তাই প্রথম ভিনদেশি বা বিদেশি ক্রিকেটার হিসেবে এই পদক জয়ের কৃতিত্ব দেখালেন।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!