• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ইউপি নির্বাচনে ভয়ে প্রার্থী হচ্ছেন না বিএনপি নেতার


নিজস্ব প্রতিবেদক মার্চ ৫, ২০১৬, ০১:০৬ পিএম
ইউপি নির্বাচনে ভয়ে প্রার্থী হচ্ছেন না বিএনপি নেতার

বিশেষ প্রতিনিধি

আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি)নির্বাচনে প্রায় দু’শো আসনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছেন।এসব আসনে বিএনপি নেতা-কর্মীরা প্রার্থী হতে চাননি।এতগুলো আসনে বিএনপির প্রার্থী না পাওয়ার ঘটনা রাজনীতি বিশ্লেষকদের ভাবিয়ে তুলেছে। শুরু হয়েছে এর নেপথ্যের কারণ অনুসন্ধান।

অনুসন্ধানে উঠে এসেছে বিএনপি প্রাথীদের ভেতরে একটি অজানা ভয় কাজ করছে। তারা মনে করছেন ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ হলে তারা মামলা-হামলা ও রাজনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।এই পরিস্থিতি কাজে লাগিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করেই চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগের টিকিট পাওয়া তৃণমূল নেতারা।কিন্তু ক্ষমতাসীন দলের নীতি নির্ধারকরা তা স্বীকার করতে চান না। তারা এর জন্য বিএনপির সাংগঠনিক দুর্বলতা ও তাদের ভুল রাজনৈতিক কৌশলকে দায়ী করছেন।

আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের দাবি, বিএনপির নেতাকর্মীদের ভয় দেখাতে হচ্ছে না। দলটির নেতাকর্মীরা নিজেরাই ভয় পেয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াচ্ছে। সাংগঠনিকভাবে দুর্বল হয়ে বিএনপির এ নাজুক অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। দলের অভ্যন্তরে সৃষ্ট দুর্বলতা আড়াল করতে বিএনপি আওয়ামী লীগের উপর দোষ চাপাচ্ছে। বিএনপির প্রার্থীরা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হবে এটাই স্বাভাবিক।

আওয়ামী লীগের কয়েকজন শীর্ষ নেতা জানান বিএনপির প্রার্থীদের উপর হামলা ও মনোনয়ন পত্র জমায় বাধাদান করা দলের নীতি-নির্ধারণী সিদ্ধান্ত নয়। বরং দল থেকে সংঘাত সংষর্ঘ এড়ানোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তবু নির্বাচনকে ঘিরে বিভিন্ন জায়গায় কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা হয়তো ঘটছে। তারা বলছেন, অতীতের স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর নির্বাচনের সঙ্গে তুলনা করলে বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা অস্বাভাবিক নয়। এগুলো সাংগঠনিক শক্তি দিয়ে মোকাবেলা করতে হয়।

এসব ঘটনা অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এ পর্যন্ত যতগুলো ইউনিয়নে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন সেখানে দেখা গেছে বিএনপি প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দেননি। বিএনপি মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার সাহস না করায় অন্য রাজনৈতিক দলের কেউও ওই সব ইউনিয়নে মনোনয়নপত্র জমা দেননি। ফলে আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ের সুযোগ তৈরি হয়েছে।

সভাপতিমণ্ডলীর দুই জন সদস্য বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ভয়-ভীতির ঘটনা, বাধাদানের ঘটনা একটু থাকবে। এটা রাজনীতির বাইরের কোনো ঘটনা নয়। তাই বলে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানো কোনো রাজনৈতিক দলের আদর্শ নেতাকর্মীর উচিত নয়। এটি সংগঠনের দুর্বলতার প্রমাণ করে।সংগঠনের দেউলিয়াত্ব প্রমাণ করে।

এ প্রসঙ্গে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপির রাজনীতিতে যে সংকটের ছায়া তা থেকে দলটি বেরিয়ে আসতে পারছে না। বিএনপির মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। তারা বলছে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নাকি বাধা দেয়া হচ্ছে, আসলে কেউ বাধা দেয়নি। তিনি বলেন, তারা নিজেরাই নিজেদের জন্য বাধা। অবশ্য, ক্ষমতাসীন দলের মধ্যম সারির নেতারা বিএনপির নেতাকর্মীদের ভেতরে ভয়,আওয়ামী লীগের জয় হিসেবে দেখছেন!

আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিভিন্ন ইউনিয়নে ইতিমধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় বিজয়ী হওয়ার পেছনের ঘটনা অনুসন্ধানে উঠে এসেছে ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ হলে বিএনপির নেতাকর্মীরা মামলা-হামলা ও রাজনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন। আর এই ভয়ই আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে অনীহা তৃণমূল বিএনপির নেতাকর্মীদের। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করেই চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগের টিকিট পাওয়া তৃণমূল নেতারা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিএনপির তৃণমূলের অধিকাংশ নেতাকর্মী আস্থার সংকটে ভুগছেন। দলটিতে রাজনৈতিক যে সংকট দেখা দিয়েছে তা সহজে কাটবে না বলে মনে করেন তারা। তাই বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচন করার সাহস-মানসিকতা দুটোই হারিয়ে ফেলেছেন তৃণমূল নেতাকর্মীরা।

খানিকটা ভিন্নভাবে হলেও এরসঙ্গে অনেকটা একমত পোষণ করেছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কয়েকজন নেতা। তারা বলেন, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থীদের বিজয়ী হওয়ার পেছনে দু’টি কারণ আমরা খুঁজে পেয়েছি। এরমধ্যে অন্যতম বর্তমান সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ও শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আপামর জনসাধারণ অভিভূত। তাই আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীর উপরে সকলের আস্থা-বিশ্বাস থাকায় অন্য কোন দলের প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে সাহস পাচ্ছেন না। অপরটি হল, বিএনপির ভুলের রাজনীতিতে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা দলটির উপর আস্থা হারিয়ে ফেলেছেন। ভোট চাইতে জনগণের কাছে যাওয়ার সাহসও দেখাতে পারছেন না এই মুহূর্তে বিএনপির তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবউল আলম হানিফ সাংবাদিকদের বলেন, বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীরা চরম আস্থার সংকটে পড়েছেন। বিএনপির নেতৃত্বের উপর তারা বিশ্বাস স্থাপন করতে পারছেন না বলেই ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিএনপির কেউ প্রার্থী হতে রাজি হচ্ছেন না। তাই আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা বিভিন্ন ইউনিয়নে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হচ্ছেন। ভয় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিএনপির প্রার্থীরা ভোট চাইতে জনগণের কাছে যেতে ভয় পাচ্ছেন। এ কারণেও চেয়ারম্যান প্রার্থী হতে রাজি হচ্ছেন না বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীরা।

জানতে চাইলে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজি জাফরউল্যাহ বলেন, ভয়ে বিএনপির নেতাকর্মীরা প্রার্থী হচ্ছেন না এটা সত্য! তবে এই ভয় আওয়ামী লীগ প্রদর্শন করছে না। গত ৭-৮ বছরের তাদের দলের কৃতকর্মের কারণে বিএনপির প্রার্থীরা জনগণের কাছে কিভাবে ভোট চাইতে যাবেন সেই ভয় পাচ্ছেন। এই ভয় থেকেই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার মানসিকতা হারিয়ে ফেলেছেন। তিনি বলেন, আমরা খোঁজ-খবর নিয়ে দেখেছি।কিন্তু বিএনপির প্রার্থীদের ভয়-ভীতি প্রদর্শন করেছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এ তথ্য পাওয়া যায়নি।

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, দুই একটি ইউনিয়নে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা বিএনপির চেয়ারম্যান প্রার্থীদের ভয়-ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগ করেছেন।তবে অধিকাংশ ইউনিয়নে বিএনপির নেতাকর্মীরা প্রার্থী হতে চাচ্ছেন না মামলা-হামলার কারণে। এই ভয় থেকেই নির্বাচন বর্জন করছেন।প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপে নির্বাচনে এ পর্যন্ত প্রায় দুইশ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।

সোনালীনিউজ/এমএইউ

Wordbridge School
Link copied!