• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ইউপি নির্বাচন: মনোনয়ন বাণিজ্যের বিরুদ্ধে সরকারি দল


নিজস্ব প্রতিবেদক এপ্রিল ২৫, ২০১৬, ১০:৩৫ এএম
ইউপি নির্বাচন: মনোনয়ন বাণিজ্যের বিরুদ্ধে সরকারি দল

সোনালীনিউজ রিপোর্ট

দেশজুড়ে চলছে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। ওই নির্বাচনে সরকার দলীয় প্রার্থী মনোনয়নে বিপুল অংকের আর্থিক লেনদেনের ঘটনা ঘটেছে অভিযোগ উঠেছে। এ পরিস্থিতিতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষ মনোনয়ন বাণিজ্যে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের কথা জানানো হয়েছে। এমনকি সেজন্য তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে।

তদন্তে দলের কারোর বিরুদ্ধে মনোনয়ন বাণিজ্যের প্রমাণ পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। ক্ষমতাসীন দল সংশ্লিষ্ট একাধিক দায়িত্বশীল সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সারাদেশে তৃণমূলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নমিনেশন বিক্রির ঘটনা এখন ওপেন সিক্রেট। দলীয় মনোনয়ন পেতে ইউপি চেয়ারম্যান প্রার্থীরা জেলা-উপজেলা নেতাদের কাছে ধরনা দিচ্ছে। তদবিরের জন্য ভিড় জমাচ্ছেন দলীয় এমপিদের সংসদ ভবন কিংবা ন্যাম ভবনের কার্যালয়েও। কেউ কেউ দলীয় হাইকমান্ডের সাথে ঘনিষ্ঠ নেতাদের বাড়িতেও যাচ্ছেন।

অর্থাৎ যে যেভাবে পারছে মনোনয়ন পাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে চেষ্টা চালাচ্ছে। বিশেষ কওে নৌকার মনোনয়নকে কেন্দ্র করে চলমান মনোনয়ন বাণিজ্যের পরিণামে তৃণমূলে আওয়ামী লীগ খণ্ড-বিখণ্ড হওয়ার উপক্রম হয়েছে। ইতিমধ্যে মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগে দেশের বিভিন্ন স্থানে দলীয় কার্যালয় ভাঙচুর ও প্রতিবাদ-বিক্ষোভের ঘটনা ঘটেছে।

আর মনোনয়ন বাণিজ্যের পরিণামে অতীতে কোনো নির্বাচনেই আওয়ামী লীগকে এতো বিপুলসংখ্যক বিদ্রোহী প্রার্থীরও মুখোমুখি হতে হয়নি। নির্বাচন নিয়ে নিজেদের মধ্যে এতো ব্যাপক খুনোখুনি ও মারামারির ঘটনা ঘটেনি। এসব ঘটনায় বিব্রত দলের হাইকমান্ড। সে প্রেক্ষিতে মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ তদন্তের নির্দেশ দেযা হয়েছে।

সূত্র জানায়, তৃণমূলে ইউপি প্রার্থী মনোনয়ন বাণিজ্যের প্রধান টার্গেটই ছিলো বিত্তশালীরা। সেজন্য শুধুমাত্র টাকার বিনিময়ে ত্যাগী ও দলীয় কর্মীদের কাছে গ্রহণযোগ্য প্রার্থীকে পাশ কাটিয়ে অনেককে নৌকা প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হয়। সেক্ষেত্রে দলীয় প্রভাবশালীরা দলের স্থানীয় ইউনিয়ন কমিটিকে চাপ দিয়ে স্বাক্ষর নিয়ে উপজেলা ও জেলা কমিটিকে ম্যানেজ করে প্রার্থী চূড়ান্ত করার অভিযোগ উঠেছে।

আর একক প্রার্থী দিতে না পারলে বা কোনো রকম তালিকায় নিজের পছন্দের প্রার্থীর নাম পাঠিয়েই ওই প্রভাবশালীরা কেন্দ্রে এসে তদবির শুরু করেন। এই সুযোগে অনেকেই মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে হাতিয়ে নিচ্ছেন ক্ষমতাসীন দলের টিকিট। আর টাকার সামনে গৌণ হয়ে পড়ছে রাজনৈতিক অতীত ও দলীয় আনুগত্য।

সূত্র আরো জানায়, বিশেষ সুবিধা (বাণিজ্য) নিয়ে বিতর্কিত লোকদের দলীয় মনোনয়ন দেয়ায় স্থানীয় পর্যায়ের নেতাদের বিরুদ্ধে কেন্দ্রে বিস্তর অভিযোগ জমা পড়েছে। ওসব অভিযোগে বলা হয়েছে, কোথাও ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতারা দলের ত্যাগী নেতাকে মনোনয়ন দিলেও পরে সংশ্লিষ্ট জেলার প্রভাবশালী নেতারা মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে ধরনা দিয়ে ত্যাগী কর্মীর মনোনয়ন বাতিল করে দিচ্ছে।

তৃণমূলের নেতাদের নমিনেশন বাণিজ্যের কারণে জনপ্রিয়তা থাকার পরও মনোনয়ন না পাওয়ায় অনেকেই বিদ্রোহী প্রার্থী হচ্ছেন। আবার অনেকে রাগে-ক্ষোভে দল ছাড়ছেন। ফলে প্রতি ধাপেই মোট সংখ্যার প্রায় অর্ধেক ইউপিতে বিদ্রোহী প্রার্থী মাঠে থাকছে। তাছাড়া মনোনয়ন বাণিজ্য ও বিদ্রোহীদের কারণে অভ্যন্তরীণ খুনোখুনির ঘটনাও আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে।

এদিকে চলমান ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী মনোনয়নে অর্থ বাণিজ্য খতিয়ে দেখতে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কমিটির তদন্তে কারোর বিরুদ্ধে মনোনয়ন বাণিজ্যের প্রমাণ পেলে বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সেক্ষেত্রে কারোই রেহাই কিংবা ক্ষমা নেই। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের এই কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন।

অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন─ ইদানীং মনোনয়ন না পেলে বঞ্চিতদের পক্ষ থেকে বলা হয় রাজাকার পুত্র মনোনয়ন পেয়েছে কিংবা অর্থের বিনিময়ে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। 

এসব কথাবার্তা বাস্তবে যতটা না সত্য তার চেয়ে বেশি অপপ্রচার। বিষয়টি তদন্ত করতে একটি কমিটি করা হয়েছে। ওই কমিটি এসব বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছে। তবে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের মনোনয়ন প্রক্রিয়া চুলচেরা বিশ্লেষণের মাধ্যমে হচ্ছে। প্রথমে এটা স্থানীয় ইউনিয়নের বর্ধিত সভায় ভোটাভুটির মাধ্যমে পাস হয়। এরপর উপজেলা এবং সর্বশেষ জেলা কমিটির বর্ধিত সভায় মনোনয়ন চূড়ান্ত হয়।

তারপর ছয় জনের স্বাক্ষরকৃত ফরম কেন্দ্রে পাঠানো হয়। তবে এর ব্যত্যয়ও কিছু ঘটেছে। কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায় কোনো ফরমে সভাপতি স্বাক্ষর করেননি। কোনো কমিটির সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষর করেননি। কোথায় হয়ত জেলা কিংবা উপজেলা কমিটির স্বাক্ষর নেই। আওয়ামী লীগ একটি বড় দল। এখানে মতভেদ থাকবেই। কাজেই পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে প্রার্থীর তৃণমূলের সমর্থন আছে কিনা।

সোনালীনিউজ/আমা

Wordbridge School
Link copied!