• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

উত্তরের ১০ জেলায় ফের বন্যা


নিজস্ব প্রতিবেদক আগস্ট ১২, ২০১৭, ১০:৫৬ পিএম
উত্তরের ১০ জেলায় ফের বন্যা

ঢাকা: বর্ষার ভারী বর্ষণ ও ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নদ-নদী ও হাওরের পানি বাড়ছে। ফলে নতুন করে বন্যায় দেশের উত্তরের ১০ জেলার অনেক অঞ্চল তলিয়ে গেছে। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আগামী ৭২ ঘণ্টায় বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে। ফলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা রয়েছে। 

শনিবার(১২ আগস্ট) সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজারের ভাটি এলাকায় অনেক পুকুর বন্যার পানিতে ডুবে মাছ ভেসে গেছে। বন্যাদুর্গত এলাকাগুলো হাজার হাজার হেক্টর জমির রোপা আমন ধানের চারা নষ্ট হচ্ছে।

তিস্তা, ধরলা, সুরমা, কুশিয়ারাসহ দেশের বিভিন্ন নদীর পানি আগামী কয়েকদিন বাড়বে বলে জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। এরইমধ্যে পঞ্চগড়, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, লালমনিরহাট, দিনাজপুর, নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, শেরপুরে বন্যা পরিস্থিতির অবনতিতে লাখ লাখ মানুষের দুর্ভোগের খবর পাওয়া যাচ্ছে।

গত তিন-চার দিনের টানা বৃষ্টিপাত ও ভারতের গজলডোবো ব্যারাজের সবগুলো গেট খুলে দেওয়াসহ উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ধরলা, ব্রহ্মপুত্র, দুধকুমার ও তিস্তাসহ কুড়িগ্রা‌মের সবক‌টি নদ-নদীর পা‌নি বেড়েছে। পানি বেড়ে নিম্নাঞ্চল প্লা‌বিত হ‌য়েছে। ধরলা নদীর পা‌নি বেড়ে কু‌ড়িগ্রাম ফে‌রিঘাট প‌য়ে‌ন্টে বিপদসীমার ২২ সে‌ন্টি‌মিটার ওপর ‌দি‌য়ে প্রবা‌হিত হ‌চ্ছে। সদর উপ‌জেলার যাত্রাপুর, পাঁচগাছী ইউ‌নিয়নসহ ধরলা, ব্রহ্মপুত্র ও দুধকুমার নদ তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লা‌বিত হয়ে‌ছে। পা‌নি‌তে তলিয়ে গেছে এসব এলাকার হাজার হাজার একর রোপা আমন ক্ষেত।   

ভারী বর্ষণ আর ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তিস্তা ব্যারাজে ডালিয়া পয়েন্টে ফের বন্যা দেখা দিয়েছে। বন্যার কারণে নীলফামারী সদর ও ডিমলা উপজেলার ৫৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। শনিবার (১২ জুলাই) সকাল ৬টায় তিস্তার পানি বিপদসীমার ২৫ সেন্টিমিটার ও সকাল ৯টায় বিপদসীমার (৫২ দশমিক ৪০ মিটার) ২৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে তিস্তা ব্যারাজের সব (৪৪টি) স্লুইস গেইট খুলে দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।

ভারিবর্ষণ ও উজানের পানিতে পঞ্চগড় শহরসহ জেলার পাঁচ উপজেলা প্লাবিত হয়েছে। আকস্মিক এ বন্যায় অনেকেই প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র রেখে আশ্রয় কেন্দ্রে চলে গেছেন। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোয় খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি ও পয়ঃনিস্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় শিশু, নারীসহ লোকজন মানবেতর জীবনযাপন করছেন। ভারী বৃষ্টিতে জেলায় করতোয়া, মহানন্দা, ডাহুক, ভেরসাসহ সবকটি নদীর পানি বেড়ে গেছে। ফলে বন্যা আরও বাড়ার শঙ্কা করছেন জেলার অধিবাসীরা। প্লাবিত এলাকাগুলোয় পুকুরের লাখ লাখ টাকার মাছ ভেসে গেছে।

লালমনিরহাট জেলার পাঁচটি উপজেলায় আকস্মিক বন্যায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন প্রায় দেড় লাখ মানুষ। স্থানীয়রা জানান, শুকনা খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। গবাদি পশু-পাখি নিরাপদে রাখার জায়গা নিয়েও বিপাকে পড়েছেন লোকজন।

দীর্ঘস্থায়ী বন্যার পর গত দুই সপ্তাহে পানি কমলেও, বৃষ্টির কারণে আবারও বাড়তে শুরু করেছে মৌলভীবাজারের হাকালুকি ও কাউয়াদীঘি হাওরের পানি। স্থানীয়রা জানান,  কুশিয়ারা নদী এবং হাকালুকি, কাউয়াদীঘি ও হাইল হাওরে পানি বৃদ্ধির কারণে মৌলভীবাজার জেলার ৫টি উপজেলার ৩৫টি ইউনিয়নে বন্যা দেখা দিয়েছে। এতে বড়লেখা, জুড়ী, কুলাউড়া, রাজনগর ও সদর উপজেলার তিন লাখেরও বেশি মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। 

মৌলভীবাজারের বন্যাদুর্গত কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখা উপজেলায় খোলাবাজারে চাল বিক্রির (ওএমএস) কার্যক্রম বন্ধ থাকায় ও ভিজিএফ বন্ধ করে দেওয়ায় দুর্ভোগ বৃদ্ধির অভিযোগ করেছেন বানভাসী মানুষ। কুলাউড়া ভুকশিমইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান মনির বলেন, ‘মানুষের বাড়িঘর থেকে বন্যার পানি নামা শুরু করেছিল। গত কয়েকদিনের থেমে থেমে বৃষ্টি ও শুক্রবার রাত থেকে টানা বৃষ্টির কারণে আবারও হাওরে পানি বাড়তে শুরু করেছে।’ তিনি আরও বলেন,  ‘বানভাসী মানুষ বোরো ফসল হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। ওএমএস চালুর পর কিছু মানুষ কম দরে চাল কেনার সুযোগ পেয়েছিলেন। পরে তা-ও বন্ধ হয়ে যায়। এখন কোরবানির ঈদে ভিজিএফ বন্ধ থাকবে। মানুষের ভোগান্তি আরও বেড়ে গেছে।’

প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জে সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ৭৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়ে কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বন্ধ রয়েছে ৬টি উপজেলার দুই শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বেশ কয়েকটি উপজেলায় সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু বক্কর সিদ্দিক ভুইয়া জানান, মেঘালয় থেকে আসা পানি ও অতিবৃষ্টির কারণে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। নতুন নতুন এলাকা পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। বিপদসীমার ২০০ সেন্টিমিটার ওপরে বইছে হবিগঞ্জের খোয়াই নদীর পানি। পানি বাড়তে থাকায় শহরের লোকজনের মধ্যে আবারও আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে নেত্রকোনার সবকটি নদীর পানি বেড়ে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, শনিবার সকালে নেত্রকোনার সুমেশ্বরী নদীর পানি বিরিশিরি পয়েন্টে বিপদসীমার ১৪০ সেন্টিমিটার, কংস নদীর পানি জারিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ৫৫ সেন্টিমিটার, উবধাখালি নদীর পানি কলমাকান্দা পয়েন্টে বিপদসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

দুই দিনের টানা বর্ষণ ও ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে শেরপুরের জেলার নালিতাবাড়ী উপজেলার পাহাড়ি নদী ভোগাইয়ের অন্তত ১৩টি স্থানে তীব্র ভাঙন শুরু হয়েছে। নদীর তীর গড়িয়ে প্লাবিত হচ্ছে চেল্লাখালী নদীর পানিও। এতে পৌরসভাসহ এ উপজেলার অন্তত অর্ধশত গ্রাম বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। শনিবার ভোর থেকে দেখা গেছে, পাহাড়ি নদী চেল্লাখালীর তীর উপচে বিপদ সীমার ওপর দিয়ে ঢলের পানি আশপাশের গ্রামে প্রবেশ করছে। এতে ফসলি জমি, ঘরবাড়ি তলিয়ে গেছে এবং পুকুরের মাছ ভেসে গেছে বানের পানিতে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/আতা

Wordbridge School
Link copied!