• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

উদ্বিগ্ন আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড


নিজস্ব প্রতিবেদক মার্চ ৯, ২০১৬, ০২:৩২ পিএম
উদ্বিগ্ন আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড

বিশেষ প্রতিনিধি

দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাকর্মীরা। মূলত ইউনিয়ন পরিষদ ও সদ্যসমাপ্ত পৌরসভা নির্বাচন ঘিরেই এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। ইউপি নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক ত্যাগী ও দলের প্রতি নিবেদিত নেতারা মনোনয়ন পাননি। এরই বহিঃপ্রকাশ হিসাবে ক্ষুব্ধ ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের একটি বড় অংশই দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে পৌর নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নির্বাচন করে। ইউপি নির্বাচনেও একই অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। এ অবস্থায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড উদ্বিগ্ন। আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, তৃণমূলের নির্বাচনকে ঘিরে প্রায় সারাদেশেই আওয়ামী লীগের মধ্যে দ্বিধাবিভক্ত মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। তৃণমূল নেতাকর্মীরা আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে বর্তমানে দলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বকে আশঙ্কাজনক মনে করছেন। কারণ এ দ্বন্দ্বের জের ধরে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন স্থানে এখন পরস্পরের মুখোমুখি হচ্ছে। চলছে বহিষ্কার, মিছিল, মানববন্ধন, প্রতিবাদ সমাবেশ ও পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি। দেশের বিভিন্ন স্থানেই এখন আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগ। অর্থাৎ যেসব স্থানে ক্ষমতাসীন দলের বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছে সেসব স্থানেই আসন্ন ইউপি নির্বাচনে সহিংসতার আশঙ্কা করছেন খোদ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও। ইতিমধ্যে নির্বাচন কমিশনের সাথে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে এই আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়। কারণ জয় পেতে সরকারি দলের নেতাকর্মীরা নিজেরাই সংঘাতে লিপ্ত হতে পারেন বলে সুনির্দিষ্টভাবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সংশ্লিষ্টরা ইসিকে জানিয়েছেন।

সূত্র জানায়, আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনের প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপ মিলিয়ে এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের ৭৭৬ বিদ্রোহী প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আর গতবছর অনুষ্ঠিত পৌর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী মেয়র প্রার্থী ছিলেন ৫৯ জন। তাদের মধ্যে ১৭ জন জয়ী হন। তবে দলের পক্ষ থেকে তাদের সবাইকেই কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছে। কোথাও কোথাও স্থানীয়ভাবে বিদ্রোহীদের বহিষ্কারও করা হয়েছে। তাছাড়া দলের নির্দেশ অমান্য করে প্রার্থী হওয়ায় সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগ ২৬ নেতাকে বহিষ্কারের সুপারিশ করেছে। এ সংক্রান্ত তালিকা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের কাছে পাঠানো হয়েছে।

সূত্র আরো জানায়, পৌরসভা ও ইউপি নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানেই আওয়ামী লীগের মধ্যে কোন্দল প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে। বিগত পৌরসভা নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন না পেয়েও স্বতন্ত্র নির্বাচন করে বিপুল ভোটে জয়ী হন চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রাজিন। বিএনপি-জামায়াত অধ্যুষিত ওই এলাকায় স্বতন্ত্র প্রার্থী রাজিন একাধিকবার প্রতিপক্ষের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে- শুধুমাত্র গ্রুপিংয়ের কারণে ক্ষমতাসীন দল থেকে রাজিন দলীয় মনোনয়ন পাননি। বরং জেলা আওয়ামী লীগ তৃণমূলের সুপারিশ উপেক্ষা করে একজন নিষ্ক্রিয় কর্মীকে দলীয় মনোনয়নের জন্য সুপারিশ করে। আর ওই নিষ্ক্রিয় কর্মীই মনোনয়ন পান। ফলে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করলে কারিবুল হক রাজিন ছাড়াও সংসদ সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম রাব্বানী এবং সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমানকে বহিষ্কার করে মইন উদ্দিন ম-ল ও আবদুল ওদুদের নেতৃত্বাধীন জেলা কমিটি। বর্তমানে এই নিয়ে শিবগঞ্জে প্রতিবাদমুখর আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। প্রতিদিনই সেখানে বিক্ষোভ মিছিল-সমাবেশ চলছে। তারা ওই বহিষ্কারকে অবৈধ বলে আখ্যায়িত করে আওয়ামী লীগকে রক্ষার দাবি জানিয়ে আসছেন। এর বিপরীতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরে মইন উদ্দিন ম-ল ও আবদুল ওদুদের সমর্থকরা পাল্টা মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে। এই নিয়ে দু’পক্ষই এখন মুখোমুখি। একইভাবে ইউপি নির্বাচন ঘিরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার হরিপুরে দলীয় মনোনয়ন দেয়াকে কেন্দ্র করে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী ছায়েদুল হকের সাথে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। মন্ত্রী হরিপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ফারুক মিয়াকে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা দেন। কিন্তু তাতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের একাংশের নেতাকর্মীরা। তাদের অভিযোগ- ফারুক মিয়া সেখানকার চিহ্নিত রাজাকার তাজুল ইসলাম তাইজুদ্দিনের ছেলে। এ নিয়ে মন্ত্রীর সাথে অনেকটা প্রকাশ্যেই দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছেন দলীয় নেতাকর্মীরা। তাছাড়া গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন ওই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহবুবুর রহমান খান ফারুক মাস্টার। ওই ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান সাবেক ছাত্রনেতা ও আওয়ামী লীগ নেতা খায়রুল আলম। তার পিতা আবদুল বাতেন ম-ল দু’দফা চেয়ারম্যান ছিলেন। বংশ মর্যাদা, দলের নিবেদিত কর্মী ও জনসমর্থন থাকা সত্ত্বেও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাননি খায়রুল আলম। ফলে বাধ্য হয়ে তিনি বিদ্রোহী স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন এবং জয়ী হবেন বলে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। এই বিদ্রোহী প্রার্থীর অভিযোগ- তিনি গ্রুপিংয়ের শিকার হয়েছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেই তিনি নির্বাচনে জয়ী হবেন। হুমকি-ধমকির কাছে মাথানত করবেন না এবং নির্বাচন থেকেও সরে দাঁড়াবেন না।

এদিকে তৃণমূল নির্বাচনে মনোনয়ন নিয়ে সারাদেশে ক্ষমতাসীন দলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব নিয়ে উদ্বিগ্ন নন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ। তার মতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ একটি বড় দল। সেখানে প্রতি ইউনিয়নেই ৩-৪ জন যোগ্য প্রার্থী রয়েছেন। তাদের একজন মনোনয়ন পেলে অন্যরা মনোক্ষুণ্ণ হবেন এটাই স্বাভাবিক। সাংগঠনিক উপায়েই দলের দ্বন্দ্ব-কলহ নিরসনের আশাবাদ ব্যক্ত করেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অন্যতম এ নীতিনির্ধারক।

অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, আওয়ামী লীগ একটি বড় দল। এখানে মনোনয়নের জন্য প্রতিযোগিতা থাকবেই। তবে পৌর নির্বাচনে যেভাবে বিদ্রোহ নিয়ন্ত্রণ ও দ্বন্দ্ব নিরসন করা হয়েছে তা ইউপিতেও করা হবে।

সোনালীনিউজ/এমএইউ

Wordbridge School
Link copied!