• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ঋণে সুদের হার কমলেও বাড়ছে স্প্রেড


নিজস্ব প্রতিবেদক ফেব্রুয়ারি ৩, ২০১৬, ০৫:১৯ পিএম
ঋণে সুদের হার কমলেও বাড়ছে স্প্রেড

বিশেষ প্রতিনিধি

আন্তঃব্যাংক প্রতিযোগিতা ও ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে কমতে শুরু করেছিল ঋণে সুদের হার। একই সঙ্গে কমে আমানত ও ঋণে সুদের ব্যবধানও (স্প্রেড)।কিন্তু হঠাৎ করেই ব্যত্যয় দেখা দেয় স্প্রেডে, আকষ্মিকভাবেই তা বেড়ে যায়। গেল নভেম্বর ও ডিসেম্বরে স্প্রেড বেড়ে দাঁড়ায় ৪ দশমিক ৮১ ও ৪ দশমিক ৮৪ শতাংশে। গেল অক্টোবরের চেয়ে এ হার ৭ শতাংশ বেশি।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য মতে, গত জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে ঋণে সুদহার কমেছে ৩৯ শতাংশ। একই সময়ে আমানতে সুদহার কমেছে ৪৪ শতাংশ। হিসাবে আমানতে সুদহার ৫ শতাংশ বেশি কমেছে। এসময় ঋণ ও আমানতের বিপরীতে সুদহারের স্প্রেডে কম-বেশি সমতা ছিল। গেল নভেম্বর থেকে স্প্রেড ফের বাড়তে শুরু করে। ডিসেম্বরে আরো বেড়ে যায়। সার্বিকভাবে ঋণে সুদহার কমার পরও বাড়ছে স্প্রেড।

ঋণ ও আমানতের সুদহার নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ২০১৫ সালের ডিসেম্বর মাসের ওপর তৈরি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, স্প্রেড বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ৮৪ শতাংশ; যা আগের নভেম্বর ও অক্টোবর মাসে ছিল যথাক্রমে ৪ দশমিক ৮১ ও ৪ দশমিক ৭৭ শতাংশ। অর্থাৎ টানা দুই মাস ধরে বাড়ছে স্প্রেড।

২০১৫ সালের জুলাই-ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতি মাসেই ধাপে ধাপে কমেছে ঋণে সুদের হার। যেখানে জুলাইতে ছিল ১১ দশমিক ৫৭, আগস্টে ১১ দশমিক ৫১, সেপ্টেম্বরে ১১ দশমিক ৪৮, অক্টোবরে ১১ দশমিক ৩৫, নভেম্বরে ১১ দশমিক ২৭ এবং সর্বশেষ ডিসেম্বর মাসে তা খানিকটা কমে দাঁড়িয়েছে ১১ দশমিক ১৮ শতাংশে। 

স্প্রেড বাড়ার কারণ জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. বিরূপাক্ষ পাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘ব্যাংকিং খাতে লিকুইডিটি (তারল্য) থাকার কারণে ডিপোজিটে সুদহার একটু বেশি কমেছে। অন্যদিকে ঋণে সুদহার ধারাবাহিকবাবে কমছে। তবে এটা ডিপোজিট কমার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কমেনি। এ কারণেই আসলে গড় সুদহার অর্থাৎ স্প্রেড একটু বেড়েছে। দুটোর একটা সমন্বয় হয়ে এলেই মোট স্প্রেড আবার কমবে।’

‘এনপিএল (নন পারফরমিং লোন- খেলাপি ঋণ) কমে এলে এবং এ সেক্টরের যত বেশি আধুনিকায়ন হবে স্প্রেড তত কমবে। দুটোর কারণেই আসলে যে কোনো ব্যাংকের কস্ট অব ফান্ড (পরিচালন ব্যয়) কমে যাবে। সেটা হলে এমনিতেই সুদহার কমবে। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে আসলে ৪ শতাংশের ওপরে স্প্রেড থাকা উচিত নয়’, বললেন এ অর্থনীতিবিদ।

একই সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে কমেছে আমানতের সুদহারও। জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত আমানতের সুদহারের ক্ষেত্রে যে চিত্র দেখা গেছে তা হলো- ৬ দশমিক ৭৮, ৬ দশমিক ৭৪, ৬ দশমিক ৬৬, ৬ দশমিক ৫৮, ৬ দশমিক ৪৬ এবং সর্বশেষ ডিসেম্বরে এসে দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ৩৪ শতাংশে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ব্যাংকিং খাতে এমনিতেই অনেক বেশি তারল্য জমে রয়েছে। সরকার এ খাত থেকে ঋণ নেয়া বন্ধ করে দিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকও রিভার্স রেপোতে চাপ দিচ্ছে, ব্যাংকগুলোর টাকা নিচ্ছে না। একটা সংকট তো এখানে তৈরি হয়েছে। সার কথা হচ্ছে, ঋণ বিতরণ বৃদ্ধি অর্থাৎ বিনিয়োগ বাড়ানো। এটার কারণে ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের আমানত সংগ্রহ করছে কিন্তু খুবই কম রেটে। একেবারে কমিয়ে এনেছে আমানতে সুদহার। কিন্তু ঋণের সুদহার তো আর চাইলেই এক লাফে কমানো যায় না। এটার জন্য সময় প্রয়োজন।’

এদিকে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ঋণে সর্বোচ্চ ১৪ শতাংশ এবং আমানত নেয়ার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৭ শতাংশ হারে সুদ নেবে ও দেবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে করা এমওইউ চুক্তির আওতায় তারা এটি বাস্তাবায়ন শুরু করেছে। যা আগে ছিল ১৬ ও ৮ শতাংশ।

এ বিষয়ে বিরূপাক্ষ পাল বলেন, ‘গত সোমবার থেকেই তো রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো ঋণে ও আমনতে নতুন সুদহার কার্যকর করার কথা রয়েছে।’ তবে সার্বিকভাবে ঋণে সুদহার যে পর্যায়ে রয়েছে তাতে করে বিনিয়োগের পরিবেশ তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন এ অর্থনীতিবিদ।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ডিসেম্বর মাসে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর ঋণে গড় সুদহার দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ০৮ শতাংশে, বেসরকারি ব্যাংকগুলোর ১১ দশমিক ৬৫ শতাংশ, বিশেষায়িত ৯ দশমিক ৬২ শতাংশ এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোর ৯ দশমিক ৭৪ শতাংশে। অন্যদিকে আমানতে সুদহারের ক্ষেত্রে দেখা গেছে সরকারি ব্যাংকগুলো গড়ে ৬ দশমিক ৩৮ শতাংশে, বেসরকারি ৬ দশমিক ৫১, বিশেষায়িত ৭ দশমিক ৮৪ ও বিদেশি ব্যাংকগুলো ২ দশমিক ৫৯ শতাংশ সুদ দিয়ে ঋণ আমানত সংগ্রহ করছে।

প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালের মার্চ মাসে স্প্রেড ৫ শতাংশের নিচে নেমে আসে। আর ব্যাংকিং খাতে ১ লাখ কোটির উপরে জমে রয়েছে তারল্য। সেই তুলনায় কমে গেছে ঋণ বিতরণ। আবার সরকারও ব্যাংক খাত থেকে টাকা না নিয়ে সঞ্চয়পত্র থেকে প্রয়োজনীয় টাকা নিচ্ছে।

সোনালীনিউজ/এমএইউ

Wordbridge School
Link copied!