• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

এনজিও তহবিলের তথ্যাদি সরকারকে জানাতে হবে


সোনালীনিউজ রিপোর্ট মে ৮, ২০১৬, ১১:০২ এএম
এনজিও তহবিলের তথ্যাদি সরকারকে জানাতে হবে

সরকারকে না জানিয়ে দেশের সামাজিক কাজের জন্য কোনো বেসরকারি সংস্থাই বিদেশিদের কাছ থেকে অর্থ নিতে পারবে না। বিদেশি ব্যক্তি, সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান এদেশের কোনো বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও) বা সুধীসমাজধর্মী প্রতিষ্ঠানকে অর্থ সহায়তা করতে চাইলে সরকারকে তা জানাতে হবে।

এমনকি জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অর্থায়নের ক্ষেত্রেও এই শর্ত বহাল থাকবে। তাছাড়া কোন কাজে কী পরিমাণ অর্থ ছাড়ের প্রতিশ্রুতি রয়েছে এবং কখন তা ছাড় করা হবে তার বিস্তারিত তথ্যও সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগকে (ইআরডি) জানাতে। এমন বিধান রেখেই ইআরডি সম্প্রতি জাতীয় উন্নয়ন সহযোগিতা নীতিমালার খসড়া প্রণয়ন করেছে। এখন তার ওপর বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মতামত নেয়া হচ্ছে। মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পর নীতিমালাটি কার্যকর করা হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, নানা  উন্নয়ন কর্মকান্ডের কথা বলে এনজিও ও সুধীসমাজভুক্ত সংস্থাগুলো প্রতি বছরই বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে বিপুল পরিমাণ তহবিল পেয়ে থাকে। বেসরকারি সংস্থাগুলো ওই অর্থ কোথায়, কিভাবে ব্যবহার করছে তার সঠিক তথ্য সরকারের কাছে নেই। কিছু এনজিওর বিরুদ্ধে জঙ্গি কার্যক্রমে অর্থায়নের অভিযোগ যেমন রয়েছে। 

তাছাড়া অনেক এনজিওই বৈদেশিক সহায়তার অর্থ এনে জনকল্যাণে সঠিকভাবে ব্যয় করছে না। এমন পরিস্থিতিতে জাতীয উন্নয়ন নীতিমালা প্রণয়নের পাশাপাশি এইমস সফটওয়্যার স্থাপন করছে ইআরডি। সেখানে ৩৫টি উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার অনুদানের সব তথ্য থাকবে। বাংলাদেশের এনজিও ও সুধীসমাজভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর কোন উন্নয়ন সহযোগী কী উদ্দেশ্যে, কখন কতো টাকা সহায়তা দেবে তার সব তথ্যই তাতে থাকবে।

তবে বর্তমানে সরকারিভাবে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে উন্নয়ন সহযোগী থেকে যেসব ঋণ ও অনুদান সহায়তা পাওয়া যায় শুধু সেসব তথ্যই সংরক্ষণ করা হয়। কিন্তু উন্নয়ন সহযোগীরা এনজিওর মাধ্যমে কী পরিমাণ অর্থ অনুদান দিয়ে থাকে তার কোনো তথ্যই সরকারের কাছে নেই। এনজিওর মাধ্যমে প্রতিবছর কতো অর্থ আসে তা দেশের সাধারণ মানুষ জানে না। ফলে ওসব টাকায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির ঘাটতি রয়েছে। সেজন্য এনজিওর অনুদানের তথ্য সংরক্ষণে এইমস পদ্ধতি চালু করা হচ্ছে।

সূত্র জানায়, ১৯৯০ সালে এনজিওবিষয়ক ব্যুরো কার্যক্রম শুরুর পর প্রায় আড়াই হাজার এনজিওর নিবন্ধন দিয়েছে। আর ২০১২ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন এনজিও ৫৩২ কোটি ডলার বৈদেশিক সহায়তা পেয়েছে। তারা ১৯ হাজার ৩২টি প্রকল্পের বিপরীতে ওই পরিমাণ অর্থ পায়। তবে ওই অর্থ রাষ্ট্রের কতোটুকু উপকারে এসেছে, কী পরিমাণ দারিদ্র্য কমেছে তার কোনো তথ্য সরকার কিংবা এনজিওগুলোর কাছেও নেই।

বর্তমানে এনজিওগুলো বিদেশি অর্থের পাশাপাশি সরকারি তহবিলও ব্যবহার করছে। এ পরিস্থিতিতে জাতীয় উন্নয়ন নীতিমালার খসড়ায় বলা হয়─উন্নয়নপ্রক্রিয়ায় বেসরকারি ও জনহিতৈষীমূলক বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার উদ্দেশ্যে সরকারি তহবিল ব্যবহারের লক্ষ্যে মিশ্র অর্থায়ন পদ্ধতি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা যেতে পারে।

এ ধরনের অর্থায়নের উদাহরণ হতে পারে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারি, প্রযুক্তি হস্তান্তর, অভিবাসীদের দ্বারা প্রেরিত অর্থের সর্বোচ্চ ব্যবহার, পুঁজিবাজারের উন্নয়নের ক্ষেত্রে সহায়ক পরিবেশ তৈরি, বেসরকারি খাতের উন্নয়ন, রাজস্ব আয় বৃদ্ধির ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সক্ষমতা তৈরি, বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি প্রভৃতি ক্ষেত্রে প্রদত্ত সহায়তা।

সব উন্নয়ন সহযোগী, সুধীসমাজ ও বেসরকারি খাতই সমন্বয় কৌশলের অন্তর্ভুক্ত হবে। সমন্বয় ও সংলাপ ফোরামের উদ্দেশ্য হবে পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা ও এর সাথে সংশ্লিষ্ট কর্মসূচিগুলোর যৌথ বাস্তবায়ন, এ-সংক্রান্ত নীতিগত সংলাপ আয়োজন ও সম্পদের কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত করা। বৈদেশিক সাহায্যের সমন্বয় কাঠামোর মাধ্যমে উন্নয়ন সহযোগী ও জাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর পারস্পরিক জবাবদিহি ও উন্নয়ন ফলাফল অর্জন নিশ্চিত করা।

সূত্র আরো জানায়, ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে বৈদেশিক অনুদান (স্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রম) রেগুলেশন আইন ২০১৪-এর খসড়া মন্ত্রিসভা অনুমোদন করে। ওই আইন অনুযায়ী এনজিও কার্যক্রম পরিচালনা করতে এনজিওবিষয়ক ব্যুরো থেকে নিবন্ধন নেয়া বাধ্যতামূলক করা হয়। আইন অমান্য করলে যে কোনো সময় সরকার যে কোনো এনজিওর নিবন্ধন বাতিল করতে পারবে।

তাছাড়া এনজিওবিষয়ক ব্যুরোর অনুমোদন ছাড়া কোনো প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ছাড়পত্র ছাড়া এনজিওতে বিদেশি উপদেষ্টা নিয়োগের ওপরও বিধিনিষেধ আরোপের উদ্যোগ নেয়া হয়।

এদিকে বর্তমানে জাতীয় উন্নয়ন সহযোগিতা নীতিমালা খসড়ায় সুধীসমাজ, এনজিও ও অন্যান্য অংশীজনের (স্টেকহোল্ডার) বিদেশি অর্থায়ন প্রসঙ্গে বলা হয়, সুধীসমাজভুক্ত প্রতিষ্ঠান, এনজিও এবং অন্যান্য বেসরকারি সংস্থা উন্নয়ন অর্থায়নের মাধ্যমে সামাজিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। তবে তাদের কর্মকান্ডগুলোকে জাতীয় উন্নয়ন লক্ষ্য ও অগ্রাধিকারের সঙ্গে আরো বেশি মাত্রায় সম্পৃক্তকরণ ও পরিপূরক করার প্রয়োজন রয়েছে। 

এমতাবস্থায় এই নীতিমালা নিম্নোক্ত ব্যবস্থা অবলম্বনের সুপারিশ করছে-(১) সুধীসমাজভুক্ত প্রতিষ্ঠান, এনজিও এবং সমধর্মী প্রতিষ্ঠানগুলো উন্নয়ন কর্মকান্ডের জন্য বৈদেশিক উৎস থেকে তহবিল সংগ্রহ করতে পারবে; তবে এ ক্ষেত্রে জাতীয় অগ্রাধিকারকে বিবেচনায় নিতে হবে। (২) উন্নয়ন সহযোগীরা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে সহায়তা প্রদান করলে তার তথ্য তথা প্রতিশ্রুত ও প্রকৃত ছাড়কৃত অর্থের পরিমাণ এইমসের (এইড ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম) মাধ্যমে ইআরডির কাছে পেশ করবে, যাতে সরকার এ ব্যাপারে অবহিত থাকে এবং সার্বিক উন্নয়ন কর্মকান্ডে কোনো ধরনের অধিক্রমণ বা সমন্বয়হীনতা দেখা না দেয়।

এ প্রসঙ্গে ইআরডির অতিরিক্ত সচিব মনোয়ার আহমেদ জানান, সুধীসমাজ ও এনজিওগুলো বিভিন্ন দেশ ও উন্নয়ন সংস্থা থেকে যে টাকা অনুদান হিসেবে আনে, এখন থেকে তা সরকারকে জানাতে হবে। তাতে দুটি লাভ- প্রথমত, সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে সিদ্ধান্ত নেয়া সহজ হবে। সরকার বুঝতে পারবে কোন এনজিও কোথায় কী ধরনের উন্নয়ন কর্মকান্ড পরিচালনা করছে।

সে অনুযায়ী সরকার ওই এলাকার উন্নয়ন বরাদ্দ নিয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। দ্বিতীয়ত উন্নয়ন সহযোগীদের জন্যও তা সহজ হবে। বিশ্বব্যাংক কোথায়, কাকে, কোন কাজে অর্থায়ন করছে, তা অন্য সংস্থাগুলোও জানতে পারবে। তখন তারা সহজেই সিদ্ধান্ত নিতে পারবে যে তারা কাকে, কোথায়, কী কাজে অর্থায়ন করবে। ইতিমধ্যে এইমস সফটওয়্যারে কোনো কোনো উন্নয়ন সংস্থা তথ্য দিতে শুরু করেছে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/আমা

Wordbridge School
Link copied!