• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

কৌশলে মিল মালিকরাই চালের দাম বাড়াচ্ছে


নিজস্ব প্রতিবেদক ফেব্রুয়ারি ২, ২০১৬, ০১:৪০ পিএম
কৌশলে মিল মালিকরাই চালের দাম বাড়াচ্ছে

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশের চালের মোকামগুলো ও রাজধানীর পাইকারি বাজারে চাল সরবরাহে কোনো সঙ্কট নেই। কিন্তু তারপরও মিনিকেট চালের দাম বাড়ছে দফায় দফায়। রাজধানীর পাইকারি ব্যবসায়ীদের মতে- বাজারে চালের চাহিদা কম থাকলেও মিল মালিকদের দরবৃদ্ধির কারণে পণ্যটির বাজার এখন চড়া। দুই-আড়াই মাস আগে প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) মিনিকেট চালের যেখানে দাম ছিল ১ হাজার ৯শ’ থেকে ২ হাজার টাকা। ওই হিসাবে প্রতি কেজির দাম পড়ে ৩৮-৪০ টাকা। বর্তমানে প্রতি বস্তা মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ১৫০ থেকে ২ হাজার ২৫০ টাকা। অর্থাৎ পণ্যটি এখন কেজিপ্রতি ৪৩-৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এই স্বল্পসময়ের ব্যবধানেই মিনিকেট চালের দাম কেজিতে ৫-৬ টাকা বেড়েছে। তাছাড়া কিছুদিন আগেও মানভেদে প্রতি কেজি সাধারণ মানের মিনিকেট চালের দাম ছিল ৪২-৪৪ টাকা। বর্তমানে তা ৪৭-৪৯ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একইভাবে ৩৪-৩৫ টাকার বিআর-২৮ (লতা নামে পরিচিত) ৩৬-৩৯ টাকা ও ৪৮-৫০ টাকার নাজিরশাইল ৫০-৫৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, চলতি আমন মৌসুমে কৃষকরা ধানের ন্যায্যমূল্য পাননি। কিন্তু চটের বস্তার অজুহাতে দফায় দফায় বাড়ানো হয়েছে চালের দাম। বর্তমানে মিনিকেট চালের সংকট না থাকলেও মৌসুম শেষ এ অজুহাতে দাম বাড়ানো হচ্ছে। রাজধানীর বাজারে মিনিকেট চালের চাহিদাই সবচেয়ে বেশি। মোট চালের ৬০ শতাংশই মিনিকেট হিসেবে ব্যবহার হয়। তারপর রয়েছে নাজিরশাইলের অবস্থান। সেটি প্রায় ২০ শতাংশ বাজার দখলে রয়েছে। গত ৩ জানুয়ারি পর্যন্ত খাদ্য মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন গুদামে চাল মজুদের পরিমাণ ১১ লাখ ১৩ হাজার টন। আর ১৫ ডিসেম্বর  থেকে ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত আমন চাল সংগ্রহ হয়েছে ৯ হাজার ৮৭০ টন।

সূত্র জানায়, বেশি মুনাফা হাতিয়ে নিতে অসাধু চাল কল মালিকরা মিনিকেট চালের দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে মৌসুম শেষ বলে অজুহাত দেখাচ্ছে। এজন্য মিনিকেট চালের কিছুটা সঙ্কটও রয়েছে। তবে আগামী দুই-আড়াই মাসের মধ্যে নতুন চালও বাজারে আসবে। পাশাপাশি চাল আমদানি নিরুৎসাহী করতে সরকার ট্যাক্স ১০ শতাংশের পরিবর্তে ২০ শতাংশ বাড়ায়। এ সুযোগে ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। তাছাড়া আমন মৌসুমে সরকার মাত্র দুই লাখ টন ধান কেনার ঘোষণা দিয়েছে। ওই কারণেও মোটা ধান আবাদকারী কৃষকরা লোকসানে রয়েছে। তবে অন্যান্য ধানের মূল্যবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। আগে বিআর-২৮ ও বিআর-২৯ ধানের দাম ছিল মণপ্রতি ৫৫০-৫৬০ টাকা। বর্তমানে তা ৬২০-৬৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর ৮৬০-৯০০ টাকা মণের মিনিকেট ধান এখন ৯৫০-৯৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

সূত্র আরো জানায়, চালকল মালিকদের মতে বাজারে শুধুমাত্র মিনিকেট চালের দাম বেড়েছে। কারণ ওই চালের মৌসুম প্রায় শেষ পর্যায়ে। বছরে একবার ওই ধান উৎপাদন হয়। বাজারে নতুন ধান আসতে আরো তিন মাস সময় লাগবে। ওই সময় পর্যন্ত দাম আরো বাড়বে। তবে অন্যান্য চালের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। তাছাড়া ভারত থেকে বিপুল পরিমাণ চাল আমদানি করা হতো। সম্প্রতি আমদানিতে ট্যাক্স বাড়িয়ে দেয়ায় দেশের বাজারেও এর প্রভাব পড়েছে। যেসব কৃষক হাইব্রিড ধান আবাদ করেছেন, তারা লোকসানে রয়েছেন।

এদিকে রাজধানীর বাদামতলী বাবুবাজার চাল আড়তদার সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জানান, বাজারে কোনো চালেরই সঙ্কট নেই। মিল মালিকরা মৌসুমের শুরুতেই ব্যাংকঋণ নিয়ে বিপুল পরিমাণ ধান মজুদ করেন। তারপর তাদের সুবিধা অনুযায়ী দাম বাড়িয়ে দেন। ধান গুদামে থাকায় শুকিয়ে কিছুটা ঘাটতি হয়। ওই কারণে ব্যাংকঋণ ও ঘাটতি মেটাতে মিল মালিকরা নানা অজুহাতে দাম বাড়িয়ে থাকেন।


সোনালীনিউজ/এমটিআই/এমএএইচ

Wordbridge School
Link copied!