• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে বিএনপিতে হ য ব র ল


সোনালী বিশেষ অক্টোবর ১১, ২০১৭, ১১:৪৯ এএম
খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে বিএনপিতে হ য ব র ল

ঢাকা : চলতি বছরের ১৫ জুলাই যুক্তরাজ্যে যান বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। চিকিৎসার জন্য তিনি লন্ডনে গিয়ে বড় ছেলে ও বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বাসায় ওঠেন। প্রায় তিন মাস হতে চলল সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী লন্ডনে আছেন। কবে নাগাদ দেশ ফিরবেন, এখনও নিশ্চিত নয়। দলীয় প্রধানের দীর্ঘ অনুপস্থিতির কারণে বিএনপির স্বাভাবিক সাংগঠনিক কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে।

বিএনপির একাধিক সিনিয়র নেতার সঙ্গে আলাপচারিতায় এমনটাই উঠে এসেছে। তারা জানান, যাকে ঘিরে দীর্ঘ সময় বৃহৎ একটি দলের কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে। দলীয় প্রধানের অনুপস্থিতি কিছুটা ব্যাঘাত সৃষ্টি করবে এটাই স্বাভাবিক। তবে তিনি চিকিৎসা শেষে শিগগিরই দেশে ফিরবেন এবং আবারো সাংগঠনিক কার্যক্রমে গতি আসবে বলে আশাবাদী নেতাকর্মীরা।

খালেদা জিয়ার দীর্ঘ অনুপস্থিতির কারণে বিএনপি পুনর্গঠনেও স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। ঝুলে পড়েছে অনেকগুলো সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত। অঙ্গ সংগঠনগুলোও কোনো সক্রিয় কর্মকাণ্ডে নেই। সারাদেশে জেলা সম্মেলন ও নতুন কমিটি ঘোষণার কর্মসূচি পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। স্থায়ী কমিটির তিনটি পদ শূন্য রয়েছে। কেন্দ্রীয় কমিটিতেও অনেক পদ খালি। কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বিএনপিতে মন্ত্রণালয়ভিত্তিক উপ-কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হলেও তা আলোর মুখ দেখেনি। এরইমধ্যে প্রায় দেড় বছর কেটে গেল। ফলে স্থায়ী কমিটির খালি পদসহ কেন্দ্রীয় কমিটি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিগুলোর পদ প্রত্যাশীরা হতাশ হয়ে পড়েছেন।

এছাড়া ছাত্রদল, কৃষকদলসহ কয়েকটি অঙ্গ সংগঠনের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি পুনর্গঠন হচ্ছে না। যুবদলের নতুন কমিটি আংশিক ঘোষণা দীর্ঘদিন হলেও পূর্ণাঙ্গ করা হচ্ছে না। একইভাবে ঢাকা মহানগর পূর্ণাঙ্গ কমিটির পুনর্গঠনের বেঁধে দেয়া সময় অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। বর্তমানে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড প্রেস বিজ্ঞপ্তি, দিবস পালনেই সীমাবদ্ধ রয়েছে।

জানা গেছে, খালেদা জিয়ার হাঁটুর চিকিৎসার শিডিউল রয়েছে আগামী ১২ অক্টোবর। ওইদিন চিকিৎসক দেখানোর পরই সিদ্ধান্ত হবে কবে নাগাদ তিনি দেশে ফিরবেন।

দল পুনর্গঠনের দায়িত্বে থাকা বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান একটি গণমাধ্যমকে জানান, ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) দেশে আসার পর উনার সঙ্গে আলোচনা করে খুব অল্প সময়ের মধ্যে দল পুনর্গঠনের কাজ শেষ করা হবে। তিনি বলেন, ৮১টি সাংগঠনিক কমিটির মধ্যে ৫১টি গঠন করা হয়েছে। বাকি ৩০টি কমিটি ম্যাডামের সঙ্গে আলোচনা করে চ‚ড়ান্ত করা হবে।

এদিকে, গত ১৮ এপ্রিল রাতে বিএনপির ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তরের আংশিক কমিটি অনুমোদন করা হয়। দুই ভাগে বিভক্ত ঢাকা মহানগর দক্ষিণে বিএনপির ৭০ সদস্যবিশিষ্ট কমিটিতে সভাপতি হন হাবিব-উন-নবী খান সোহেল এবং সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশার। আর ৬৬ সদস্য বিশিষ্ট ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সভাপতি হন এমএ কাইয়ুম, সাধারণ সম্পাদক আহসান উল্লাহ হাসান। কিন্তু, সময় পার হলেও এখন পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে পারেনি নগরীর দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা।

এ বিষয়ে হাবিব-উন নবী খান সোহেল বলেন, ঢাকা মহানগর বিএনপির কমিটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পরামর্শ ছাড়া এ কমিটি ঘোষণা করা সম্ভব নয়। কমিটি পুনর্গঠনের কাজ অনেক দূর এগিয়ে গেছে। ম্যাডাম আসলেই কমিটি ঘোষণা করা হবে।

গত বছরের ১৯ মার্চ বিএনপির ষষ্ঠ কাউন্সিলের পর ৫০২ সদস্যের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি, স্থায়ী কমিটির ১৯ সদস্য পদ এবং চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের ৭৩ সদস্যের নাম ঘোষণা করা হয়। এখনও স্থায়ী কমিটির তিনটি পদ ফাঁকা। ছাত্র ও সহ-ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক এবং যুববিষয়ক সম্পাদকের নাম ঘোষণা হয়নি। কাউন্সিলের প্রায় দেড় বছর পার হলেও দলীয় গঠনতন্ত্র বই আকারে প্রকাশ সম্ভব হয়নি। কাউন্সিলে বিষয়ভিত্তিক ২৬টি উপকমিটি গঠন এবং সেখানে প্রতিটিতে ১২ জন সদস্য রাখার কথা ছিল। কিন্তু, এখনঅব্দি কমিটি হয়নি।

বিএনপির ১১ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের মধ্যে অধিকাংশ কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ। এই তালিকায় রয়েছে- জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, শ্রমিকদল, মুক্তিযোদ্ধাদল, কৃষকদল ও মৎসজীবী দল।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, দল পুনর্গঠনের কিছু কাজ বাকি আছে। চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরে ম্যাডাম তা সম্পূর্ণ করবেন। মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিগুলোও ঘোষণা করা হবে।

প্রসঙ্গত, চোখ ও পায়ের চিকিৎসার জন্য গত ১৫ জুলাই লন্ডনে যান খালেদা জিয়া। সেখানে বড় ছেলে তারেক রহমানের বাসায় উঠেছেন তিনি। বাসায় তারেকের স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমান ও মেয়ে জাইমা রহমান রয়েছেন। এছাড়া ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শামিলা রহমান সিঁথি, তার দুই মেয়ে জাহিয়া রহমান ও জাফিরা রহমান সেখানে রয়েছেন।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!