• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

গাফিলতি ও অদক্ষতায় স্থবির বিদেশি সহায়তা প্রকল্প


নিজস্ব প্রতিবেদক মে ২৯, ২০১৬, ০৩:২২ পিএম
গাফিলতি ও অদক্ষতায় স্থবির বিদেশি সহায়তা প্রকল্প

প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের গাফিলতি ও অদক্ষতায় বাস্তবায়িত হচ্ছে না বৈদেশিক সহায়তার একাধিক প্রকল্প। কর্মকর্তাদেও বেতন ও বিলাসবহুল গাড়ি কেনা ছাড়া প্রকল্পের তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি। পাশাপাশি কেনাকাটায় অনিয়ম তো রয়েছেই। এ পরিস্থিতিতে দাতা সংস্থা বিশ্বব্যাংক প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতিতে অসন্তুষ্ট।

ইতিমধ্যে ওই দাতা সংস্থার পক্ষ থেকে সরকারকে তা জানিয়ে দেয়া হয়েছে। ইতিপূর্বে  সংস্থাটি গতিহীন প্রকল্পের ঋণ বাতিল করেছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে এদেশে চলমান একাধিক প্রকল্প দ্রæত বাস্তবায়নের উন্নতি না হলে আবারো প্রকল্পের একটি অংশ বাতিলের আশঙ্কা তীব্র হচ্ছে। অর্থ মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দাতা সংস্থা বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় চলমান ৪টি প্রকল্প বাস্তবায়নে খুবই ধীরগতি বিরাজ করছে। কয়েক দফা বিশ্বব্যাংকের মিশন এসে নির্দেশনা দিলেও তা কাজে আসছে না। 

ওসব প্রকল্পে ঋণের পরিমাণ ৭০ কোটি ৫০ লাখ ডলার। বিনিময় হার অনুযায়ী তার পরিমাণ সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা। সম্প্রতি সংস্থাটির প্রকল্প রেটিং-সংক্রান্ত এক প্রতিবেদনে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগকে (ইআরডি) অসন্তুষ্টির কথা জানিয়েছে। এ পরিস্থিতিতে দ্রুত প্রকল্প বাস্তবায়নের উন্নতি না হলে একটি অংশ বাতিলের আশঙ্কা করছে ইআরডি।

সূত্র জানায়, স্থানীয় সরকার বিভাগের ঢাকা ওয়াসার পয়ঃনিষ্কাশন ও পানি সরবরাহ, কৃষি মন্ত্রণালয়ের জাতীয় কৃষি প্রযুক্তি কর্মসূচি (এনএটিপি-২) এবং স্থানীয় সরকার বিভাগের পৌরসভার সুশাসন এবং সেবা প্রকল্পের বাস্তবায়ন নিয়ে অসন্তুষ্ট বিশ্বব্যাংক। তাছাড়া পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের আঞ্চলিক সহযোগিতা জোরদারকরণের মাধ্যমে বন্যপ্রাণী রক্ষা প্রকল্প এই তালিকায় রয়েছে। ওসব প্রকল্পের অর্থায়নসহ যাবতীয় বিষয় নিয়ে বিশ্বব্যাংকের সাথে ইআরডি শীর্ষপর্যায়ের কর্মকর্তা ও প্রকল্প পরিচালকদের আলোচনা হয়েছে।

বাস্তবায়নাধীন কয়েকটি প্রকল্প নিয়ে এর আগেও বিশ্বব্যাংক কয়েকবার অসন্তুষ্টি প্রকাশ করলেও বাস্তবায়নকারী মন্ত্রণালয় ও বিভাগ তা আমলে দেয়নি। বর্তমানে অর্থায়ন বাতিলের পর্যায়ে চলে এসেছে। চারটির মধ্যে দুটি প্রকল্পের একটি বড় অংশের ঋণ যে কোনো সময় বাতিল হতে পারে।

সূত্র আরো জানায়, ২০০৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে ঢাকা ওয়াসার প্রকল্পটি বিশ্বব্যাংকের বোর্ড সভায় অনুমোদন পায়। তাতে সংস্থাটির সাড়ে ১৪ কোটি ডলার ঋণ দেয়ার কথা থাকলেও বাস্তবায়ন খারাপ হওয়ায় দু’দফায় ৭ কোটি ৩০ লাখ ডলার বাতিল করেছে বিশ্বব্যাংক। তারপরও গত ৮ বছরে প্রকল্পের অর্থ ব্যয় হয়েছে ৬৪ শতাংশ।

এ ব্যাপারে প্রকল্প পরিচালক আব্দুল আজিজ বলছেন, প্রকল্পটি প্রথম থেকেই নানা সমস্যায় জর্জরিত। কিছু ক্ষেত্রে এখনো সমস্যা আছে। তবে ভৌত অগ্রগতি ৯০ শতাংশের বেশি অর্জন সম্ভব হলেও আর্থিক অগ্রগতি ৬০ শতাংশের কাছাকাছি। এই কারণে প্রকল্পটি দাতা সংস্থার অসন্তুষ্টির তালিকায় স্থান পেয়েছে।

তাছাড়া ২০১১ সালের জুলাইয়ে বন বিভাগের সাড়ে ৩ কোটি ডলার ব্যয়ের আঞ্চলিক সহযোগিতা জোরদারকরণের মাধ্যমে বন্যপ্রাণী রক্ষা প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু হলেও সাড়ে ৫ বছর পরও প্রকল্পটির বাস্তবায়ন মাত্র ২৪ শতাংশ। এই প্রকল্পে কেনাকাটায় অনিয়মের অভিযোগে বিশ্বব্যাংকের সাথে টানাপড়েন চলছে। ফলে অর্থছাড়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে।

এ বিষয়ের প্রধান বন সংরক্ষক মো. ইউনুস আলী জানান, কম্পিউটার ও ফটোকপি মেশিন কেনার দুই বছর পর বিশ্বব্যাংক এখন সিন্ডিকেটের অভিযোগ তুলেছে। আবার প্রগতিকে বাদ দিয়ে ৭৫ লাখ টাকার গাড়ি আড়াই কোটি টাকা দিয়ে কেনার শর্ত দিয়েছে। এভাবেই অর্থ অপচয় ও ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলে সংস্থাটি প্রকল্পের অগ্রগতি আটকে রাখছে। এখন আবার অসন্তুষ্টির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে।

আর বিশ্বব্যাংক সাড়ে ১৭ কোটি ডলারের জাতীয় কৃষি প্রযুক্তি কর্মসূচির (দ্বিতীয় পর্যায়) অনুমোদনও পেয়েছে এক বছর আগে। সরকারের গুরুত্বপূর্ণ এই প্রকল্পে এক টাকাও ব্যয় হয়নি। সম্প্রতি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) সভায় এই প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে। কিন্তু এখনো পরিপত্র জারি হয়নি। এই কারণে প্রকল্পটি বিশ্বব্যাংক অসন্তুষ্ট।

এই প্রকল্পে ইউএইড ও ইফাদও অর্থায়ন করছে। এ ব্যাপাওে কৃষি মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা উইংয়ের প্রধান মনজুরুল আনোয়ার বলেন, বিশ্বব্যাংকের কিছু পরামর্শ অনুযায়ী প্রকল্প প্রস্তাব তৈরি করতে দেরি হয়েছে। তবে ডিপিপি অনুমোদন পাওয়ায় এখন বাস্তবায়নে কোনো সমস্যা নেই। প্রথম পর্যায়ে ভালো পারফরম্যান্সের কারণে দ্বিতীয় পর্যায়ে অর্থায়ন করছে বিশ্বব্যাংক।

তাছাড়া স্থানীয় সরকার বিভাগের ৪১ কোটি টাকা ব্যয়ে পৌরসভার সুশাসন এবং সেবা প্রকল্পে অগ্রগতি নিয়েও সন্তুষ্ট নয় বিশ্বব্যাংক। ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে শুরু হওয়া ওই প্রকল্পের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী সাড়ে ১১ শতাংশ ব্যয় হয়েছে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/আমা
 

Wordbridge School
Link copied!