• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

চট্টগ্রাম বন্দর : স্ক্যানিংয়ের আওতায় আসেনি কনটেইনা


নিজস্ব প্রতিবেদক এপ্রিল ২৫, ২০১৬, ১০:৪৪ এএম
চট্টগ্রাম বন্দর : স্ক্যানিংয়ের আওতায় আসেনি কনটেইনা

সোনালীনিউজ রিপোর্ট

দীর্ঘদিন ধরেই চট্টগ্রাম বন্দরে স্ক্যানিং সঙ্কট বিরাজ করছে। সঙ্কট নিরসনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ৫ মাস আগে চারটি নতুন স্ক্যানার আনলেও এখনা তার ব্যবহার শুরু করতে পারেনি। ফলে বিগত ৫ মাসে প্রায় ৫ লাখ কনটেইনার আমদানি ও রফতান পণ্য স্ক্যানিংয়ের আওতায় আনা যায়নি।

অথচ মূলত কনটেইনারে অঘোষিত ও বিস্ফোরক জাতীয় পণ্য আমদানি রোধ এবং নিরাপত্তা ঝুঁকি কমাতে স্ক্যানিং বাধ্যতামূলক করা হয়। আর আইন অনুযায়ী ২০০৯ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে আমদানি ও রফতানি পণ্যের কনটেইনার বাধ্যতামূলক স্ক্যানিংয়ের সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়েছে।

তখন ওই সংক্রান্ত এক অফিস আদেশের মাধ্যমে চট্টগ্রাম পোর্ট ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন প্রকল্পের আওতায় বন্দরে চারটি কনটেইনার স্ক্যানার স্থাপন করে। বন্দর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, স্ক্যানার সঙ্কটের কারণে চট্টগ্রাম বন্দরের ১৪টি গেটের মধ্যে মাত্র চারটি গেটে স্ক্যানার বসানো হয়েছিল। সব স্ক্যানার দিয়েই আমদানি পণ্যের প্রায় সিংহভাগ কনটেইনার স্ক্যানিং করা হয়। তবে কোনো ধরনের রফতানি পণ্য স্ক্যানিং করা হয় না। যদিও রফতানি পণ্যের কনটেইনারসহ সব ধরনের কনটেইনারই স্ক্যান বাবদ কাস্টমস কর্তৃপক্ষ ৫ ডলার চার্জ নিয়ে ব্যবসায়ীদের স্ক্যানিংয়ের সনদ দিয়ে থাকে।

অথচ স্ক্যানার সংকটের কারণে গত ৬ বছরেও রফতানি পণ্যভর্তি কোনো কনটেইনারই স্ক্র্যানিংয়ের আওতায় আনা যায়নি। তব খুব শিগগিরই বন্দরে নতুন ৪টি স্ক্যানার বসানো হচ্ছে। পাশাপাশি নতুন আরো বশ কয়েকটি মশিন আমদানির প্রক্রিয়া চলছে। এজন্য বন্দরে আলাদা একটি ডিপার্টমেন্ট খোলারও প্রস্তাব করা হয়েছে। যা অনুমোদনের প্রক্রিয়ায় আছে। আর তা বাস্তবায়ন হলে একটি কনটেইনারও স্ক্যানিংয়ের আওতার বাইরে থাকবে না।

সূত্র জানায়, কাস্টমস কর্তৃপক্ষ ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত স্ক্যানিংয়ের পর অঘোষিত ও আমদানি নিষিদ্ধ পণ্য আনার প্রমাণ পাওয়ায় ৮৭৫টি কনটেইনার আটক করেছে। সব কনটেইনারে ঘোষণাবহির্ভূত পণ্য আনার পাশাপাশি আমদানি নিষিদ্ধ পণ্য, বিস্ফোরক জাতীয় পদার্থেরও উপস্থিতিও পাওয়া। ওই কারণে জরিমানাসহ ১০টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

তবে গত ৫ মাসে (নভেম্বর-মার্চ) চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি হয়েছে ৪ লাখ ৫১ হাজার ৪৭৯ টিইইউএস (প্রতিটি ২০ বর্গফুট হিসাবে) কনটেইনার। তার মধ্যে ৪ লাখ ২৫ হাজার ৬৮৯টি কনটেইনার স্ক্যানিং হয়েছে। বাকি ২৫ হাজার ৭৯০টি কনটেইনার কমলাপুর আইসিডিতে খালাস হওয়ায় তা স্ক্যান করা যায়নি। কারণ সেখানে স্ক্যানার নেই।

একইভাবে স্ক্যানার সঙ্কটের কারণে ৪ লাখ ৫০ হাজার ৯৯১টি রফতানি কনটেইনারের স্ক্যানিং ছাড়াই জাহাজীকরণ করেছে রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান। অর্থাৎ গত ৫ মাসে ৯ লাখ ২ হাজার ৪৭০টি আমদানি ও রফতানি পণ্যভর্তি কনটেইনারের মধ্যে ৪ লাখ ৭৬ হাজার ৭৮১টিই স্ক্যানিং করা যায়নি।

সূত্র আরো জানায়, চীনের ৬৪ কোটি টাকার অনুদানে কেনা একটি স্থানান্তরযোগ্য স্ক্যানারসহ ৪টি অত্যাধুনিক স্ক্যানিং মেশিন গতবছরের নভেম্বরে চট্টগ্রাম বন্দরে এসে পৌঁছায়। স্থানান্তরযোগ্য স্ক্যানারটি চট্টগ্রাম বন্দরের জন্য রখে বাকি ৩টি কমলাপুর আইসিডি, খুলনা ও বেনাপোল কাস্টমস হাউজে বসাতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু চীন সরকারের প্রতিনিধির অপেক্ষায় থাকার কারণে এখনো সব স্ক্যানার উদ্বোধন করা হয়নি।

এদিকে ব্যবসায়ীদের অভিযোগ- বিগত ৫ মাস ধরেই শোনা যাচ্ছে বন্দরে নতুন স্ক্যানিং মেশিন চালু হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে তার কোনো অগ্রগতি নেই। বর্তমানে বন্দরের ১৪টি গেটের মধ্যে মাত্র ৪টি গেটে স্ক্যানার মেশিন রয়েছে। তার মধ্যে একটি অকেজো। সংকটের অজুহাতে শুরু থেকেই ঢাকার কমলাপুর ডিপোমুখী কনটেইনার ও রফতানি পণ্যভর্তি কনটেইনার স্ক্যানিং হচ্ছে না।

ওসব কনটেইনারে করে কি ধরনের পণ্য দেশে প্রবেশ করছে কিংবা দেশ থেকে যাচ্ছে তা জানা যাচ্ছে না। পণ্য স্ক্যানিংয়ে দীর্ঘ সময় লাগার কারণে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি দেশের নিরাপত্তার স্বার্থ জড়িত। বন্দরের নিরাপত্তার স্বার্থে হলেও প্রদিটি গেটে একটি করে স্ক্যানার স্থাপন করা রজরুরি। এ বিষয়ে ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে এনবিআর বরাবর একাধিকবার লিখিত চিঠি দিয়েও কোনো অগ্রগতি হয়নি।

অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম কাস্টমসের অতিরিক্ত কমিশনার মো. আজিজুর রহমান জানান, চীন সরকারের একজন প্রতিনিধির উপস্থিতিতে ওসব স্ক্যানিং মেশিন উদ্বোধন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। একাধিকবার উদ্বোধনের তারিখ নির্ধারণ করেও সংশ্লিষ্টদের শিডিউল না পাওয়ায় তা উদ্বোধন করা যাচ্ছে না। সর্বশেষ ১১ এপ্রিল উদ্বোধনের দিন নির্ধারণ করেও চীন সরকারের প্রতিনিধির শিডিউল না পাওয়ায় তা সম্ভব হয়নি।

সোনালীনিউজ/আমা

Wordbridge School
Link copied!