সোনালীনিউজ ডেস্ক
অল্প বয়সে চুল পরার কথা বা অস্বাভাবিক হারে প্রতিদিন চুল উঠার কথা অনেকের কাছেই শোনা যায়। আর গরমে চুল পড়ার হার তুলনামূলকভাবে এমনিতেই একটু বাড়ে। গ্রীষ্মকালে মাথার ত্বকের ধরন পরিবর্তন হয়।
ত্বকের গ্রন্থি থেকে অতিরিক্ত তেল নিঃসরণ হয়। ফলে চুল তৈলাক্ত হয়ে পড়ে। এ ছাড়া চুলের গোড়ার ঘাম না শুকালে, অতিরিক্ত তেলযুক্ত খাবার খেলে, চুলের ধরনের সঙ্গে মানানসই নয় এমন শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার ব্যবহার করলে সাধারণত চুল পড়ে। এছাড়াও আরও বিশেষ কিছু কারনে চুল পড়তে পারে।
বংশগত কারনে চুল পড়া-
দৈনিক কিছু চুল স্বাভাবিকভাবে পড়ে যায়, বদলে আবার নতুন করে গজায়ও কিছু । কিন্তু চুল পড়া ও চুল গজানোর হারের সমতা থাকে না যখন তখনই চুল পাতলা হতে শুরু করে। দিনে ১০০ টা চুল পড়লে তা স্বাভাবিক।
অনেক রকম ইনফেকশন, বিভিন্ন রোগ, ওষুধের ব্যবহার এবং খাদ্যের বিভিন্নতার কারণে সাধারণত চুল পড়ে যায়। তবে ৯৫ ভাগ চুল পড়ার কারণ জিনগত বা বংশগত। এই অবস্থাকে বলা হয় অ্যানড্রেজেনিক অ্যালো ও পেসিয়া ।
চুল পড়ার অন্যান্য কারণসমূহ-
এছাড়া যেসর পরিবারে অ্যাজমা, থাইরয়েড রোগ, শ্বেতী, রিউমাটয়েড আথ্রাটিস, প্যারনেসিয়াস অ্যানিমিয়া রোগ আক্রান্ত সেসব পরিবারের লোকজনের এ রোগ দেখা দিতে পারে।
বিভিন্ন রকম ওষুধ সেবনে- যেমনঃ প্রেসারের ওষুধ, ক্যনসারের ওষুধ, জন্মনিয়ন্ত্রিন পিল ইত্যাদি ও অতিরিক্ত মানসিক দুঃশ্চিন্তার ফলেও চুল পরতে পারে।
চুলপড়া একটি স্পর্শকাতর সমস্যা। ছেলেদের চুল পড়ে যাওয়া বা টাক সমস্যা নিয়ে অনেকেই বিব্রত বা বিরক্ত। চুলপড়ার কারণ নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে বা হচ্ছে। চিকিৎসাশাস্ত্রে বলা হয়, চুলপড়ার কারণ বংশগত বা হরমোনজনিত।
ছেলেদের চুলপড়া বা এনড্রোজেনিক এলোপিসিয়ার মূল কারণ ডাইহাইড্রক্সি টেস্টোসটেরন বা ডিএইচটি। ডিএইচটি একটি পুরুষ হরমোন। পুরুষ হরমোন টেস্টোসটেরন থেকে আলফারিজাকটেজ এনজাইমের সাহায্যে তৈরি হয় ডিএইচটি।
ডিএইচটি চুলের ফলিকলের গোড়ায় গিয়ে তাদের বৃদ্ধি রোধ করে এবং রক্ত সঞ্চালন কমিয়ে দেয়। এভাবেই চুল পড়তে শুরু করে। সুতরাং ডিএইচটি বেড়ে গেলে চুল পড়তে শুরু করে এবং একপর্যায়ে টাকের সৃষ্টি হয়।
ডিএইচটিকে বাধা দেয় এমন ওষুধ ব্যবহারে চুলপড়া রোধ করা যেতে পারে। শরীরের ডিএইচটির মাত্রা নিয়ন্ত্রিত হলে চুল পড়া কমবে। বর্তমানে এ ধরনের ওষুধ ব্যবহারে চুল পড়ার চিকিৎসা চলছে। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী এসব ওষুধ ব্যবহার করা উচিত।
নারীদের চুল পড়া একটি অস্বস্তিকর সমস্যা। পুরুষের যেভাবে টাক পড়ে সেভাবে চুল না ঝরে পড়লেও নারীদের চুল পাতলা হয়ে যাওয়ার প্রবণতা খুব বেশি। আমাদের সমাজে সুন্দর স্বাস্থ্যোজ্জ্বল চুল না হলে নারীদের সুন্দরী বা সুশ্রী বলা মুশকিল। অল্প বয়সে চুল না ঝরে পড়লেও বয়স বাড়ার সাথে সাথে চুল পড়ে যাওয়ার সম্মুখীন হন নারীরা। নানা কারণে মেয়েদের চুল পড়তে পারে।
হরমোন
হরমোনের তারতম্যের কারণে চুলপড়া একটি প্রধান সমস্যা। থাইরয়েড হরমোনের তারতম্যের কারণে চুল পড়ে। এ ছাড়া ইস্ট্রোজেনের কারণেও চুল পড়তে পারে। তবে হরমোনজনিত সমস্যার চিকিৎসা করালে চুলপড়া বন্ধ হয়।
সন্তান জন্মদানের পরবর্তী ৩ মাস নারীদের প্রচুর চুল পড়তে পারে। এটিও হরমোনের কারণেই হয়ে থাকে। প্রাকৃতিকভাবেই হরমোন সঠিক মাত্রায় চলে আসার পর চুলপড়া বন্ধ হয়ে যায়। তবে খুব বেশি চুল পড়ে পাতলা হয়ে গেলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া প্রয়োজন।
শারীরিক অসুস্থতা, অপারেশন হওয়া ও মানসিক চাপ চুল পড়ার অন্যতম কারণ। এ সময় নতুন চুল গজায় না এবং চুল বাড়ে না। শরীর সারাতে ব্যস্ত থাকে সব শক্তি এবং অনাদরে পড়ে যায় চুল।এসব ক্ষেত্রে চুল পড়তে থাকে তিন মাস এবং আবার চুল গজাতে সময় লাগে তিন মাস।
অর্থাৎ ছয় মাস সময় লাগে চুল স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে। তবে শারীরিক ও মানসিক চাপ খুব বেশি এবং দীর্ঘস্থায়ী হলে ছয় মাসের বেশি সময় ধরে চুল পড়তে পারে। রক্তস্বল্পতা এবং থাইরয়েডের সমস্যায়ও চুল পড়ে। সুতরাং খুব বেশি চুল পড়লে রক্ত পরীক্ষা করা এবং রোগ নির্ণয় করা প্রয়োজন।
সোনালীনিউজ/ঢাকা/আকন
আপনার মতামত লিখুন :