• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ছাত্রলীগ নেতার তাণ্ডব, অসহায় দুই বোনের কান্না 


নিউজ ডেস্ক আগস্ট ১২, ২০১৭, ০৪:৪১ পিএম
ছাত্রলীগ নেতার তাণ্ডব, অসহায় দুই বোনের কান্না 

ঢাকা: খুবই সামান্য ব্যাপার। বাজারের মধ্যে হাঁটতে গিয়ে একজনের সঙ্গে অপরজনের ধাক্কা লাগে। তাতেই লঙ্কাকাণ্ড বেঁধে যায়। মুহূর্তেই ১৫-২০ জন লোক চলে আসে। তারা এসে আমার স্বামীকে এলোপাতাড়ি মারধর করতে লাগলো। আমরা দু’বোনও তাদেরকে থামানোর চেষ্টা করলাম। তারা আমাদের ওপর চড়াও হলো। আমাদের জামা-কাপড় ধরে টেনে ছিড়ে ফেললো। তাদের কাছে আমাদের কিছুই করার ছিলো না। আমরা দু’বোন কান্নাকাটি করতে লাগলাম। ঘটনাস্থলে লোকজন জড়ো হয়ে তারাও হামলাকারীদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করে। কিন্তু তারা তাদের উপরও চড়াও হয়। আমরা একেবারেই অসহায় হয়ে পড়েছিলাম। পরে ছাত্রলীগের আরেক নেতা এসে তাদের নিবৃত্ত করে।

এভাবেই ঘটনার বর্ণনা দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতা মিজানুর রহমান পিকুলের শ্লীলতাহানির শিকার হওয়া ইডেন কলেজের দুই ছাত্রীর একজন। তিনি বলেন, ওরা হয়তো আমার স্বামীকে মেরেই ফেলতে চেয়েছিলো। 

এদিকে ভিকটিম ছাত্রীদের একজন এ ঘটনায় চকবাজার থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলার তদন্তে ঘটনার সত্যতা মিলেছে জানিয়ে চকবাজার থানার ওসি শামীম অর রশিদ তালুকদার বলেন, তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। এ ব্যাপারে আইনি পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।

মামলার বাদী ছাত্রীটি জানান, রোববার তিনি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সাবেক ছাত্র তার স্বামী এবং ইডেন কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী তার ছোট বোন পলাশী মোড় বাজারে মাছ কিনতে যান। বাজারের মধ্যে চলাফেরার সময় তার স্বামীর সঙ্গে পিকুলের ধাক্কা লাগে। এ সময় পিকুল তার স্বামীকে ধমক দেন। পরে এ নিয়ে দু’জনের মধ্যে কথাকাটাকাটি হয়। ঘটনা এ পর্যন্তই। 
কিন্তু পিকুল ফোন করে লোকজন ডেকে আনে। কিছুক্ষণের মধ্যে ১৫-২০ জন লোক এসে কিছু বুঝে ওঠার আগেই তার স্বামীকে মারধর করতে থাকে। এলোপাতাড়ি মারধরের একপর্যায়ে তার ছোট বোন গিয়ে থামানোর চেষ্টা করেন। এ সময় ওই বখাটেরা তাকে ধাক্কা মারে। এতে পিলারে তার মাথা ধাক্কা খায়। তিনি মাথায় আঘাত পান। বখাটেরা তার জামা-কাপড় ধরেও টান দেয়। এতে তার শরীরে থাকা ওড়না ছিঁড়ে যায়।

ইডেন কলেজের শেষবর্ষের এই ছাত্রী আরও জানান, একই সময়ে তিনি এগিয়ে গিয়ে তাদেরকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেন। কিন্তু তাকেও মারধর করে। তারও জামা-কাপড় ধরে টান মারে। এতে তার জামার পেছনের অংশ ছিড়ে যায়। তাদেরকে রক্ষার জন্য বাজারের অন্যরা পিকুল ও তার লোকজনকে ঠেকাতে গেলে তারা তাদের ওপরও চড়াও হয়। মারধরের একপর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রলীগ নেতা পরে তাকে বুঝিয়ে সেখান থেকে নিয়ে যায়। 

তিনি বলেন, তিনি না আসলে হয়তো তারা তার স্বামীকে মেরেই ফেলতো। পরবর্তীতে ওই ছাত্রী, তার স্বামী ও ছোট বোন ওই অবস্থাতেই চকবাজার থানায় গিয়ে একটি অভিযোগ দেন। পরবর্তীতে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় পরদিন সোমবার রাতে সেটা মামলা হিসেবে গণ্য করা হয়।

চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শামীম অর রশিদ তালুকদার জানান, ভুক্তভোগীরা এ ব্যাপারে অভিযোগ দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় তা মামলা হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে তদন্তে সব অভিযোগেরই সত্যতা মিলেছে। এখন আসামিকে গ্রেপ্তার করার চেষ্টা চলছে। 

এদিকে এ ঘটনায় পিকুলকে রোববারই ছাত্রলীগ থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। সংগঠনটির সভাপতি মো. সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসাইন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের এক জরুরি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মিজানুর রহমান পিকুলকে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হলো। সেইসঙ্গে সংগঠন থেকে স্থায়ী বহিষ্কার কেন করা হবে না- তা জানাতেও কারণ দর্শাতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে তাকে। সূত্র: মানবজমিন

সোনালীনিউজ/ঢাকা/জেএ

Wordbridge School
Link copied!