• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

জনবলের অভাবে ব্যাহত ওষুধের দোকান তদারকি কার্যক্রম


নিজস্ব প্রতিবেদক জানুয়ারি ৩১, ২০১৬, ০৮:৩৮ পিএম
জনবলের অভাবে ব্যাহত ওষুধের দোকান তদারকি কার্যক্রম

বিশেষ প্রতিনিধি

দক্ষ ও পর্যাপ্ত জনবলের এবং প্রয়োজনীয় যানবাহনের অভাবে খুঁড়িয়ে চলছে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর। কোনো ওষুধ কোম্পানি পরিদর্শনের জন্য অধিদপ্তরকে ওই কোম্পানির যানবাহনের ওপর নির্ভর করতে হয়। এ নিয়ে অধিদপ্তর সংশ্লিষ্টদের মধ্যে একদিকে যেমন অনিয়ম ও দুর্নীতির স্বার্থে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হচ্ছে, অন্যদিকে অসাধু চক্র তার সুবিধা নিচ্ছে। আর বঞ্চিত ও প্রতারিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। পাশাপাশি প্রকৃত রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। এ সুযোগে ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধ কোম্পানিগুলো বাজার দখল করে নিয়েছে। ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের প্রয়োজনীয় দক্ষ লোকবল, যানবাহন, নিজস্ব সূত্র, ম্যাজিস্ট্রেট ও নিজস্ব বাহিনী নেই। এজন্য দেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ওষুধের দোকানের তদারকি সম্ভব হচ্ছে না। যানবাহনের অভাবে ওষুধ কোম্পানির কারখানা তদারকি ও পরিদর্শনের ক্ষেত্রেও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সংশ্লিষ্ট কোম্পানির গাড়ির ওপর নির্ভর করতে হয়। যা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ও কোম্পানির মধ্যে অনিয়ম-দুর্নীতির সুযোগ সৃষ্টি করে দিচ্ছে। বর্তমানে তদারকি ও পরিদর্শনের জন্য বর্তমানে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ে মাত্র ৩টি মাইক্রোবাস রয়েছে। কিন্তু বিভাগীয় ও জেলা শহরে কোনো ধরনের যানবাহনের ব্যবস্থাই নেই। তাছাড়া অনেক জেলায় অবকাঠামো থাকলেও আনুষঙ্গিক ব্যবস্থাও নেই। এমনকি পরিদর্শন কর্মকর্তাদের জন্য কোনো পরিবহন ভাতাও পান না।

সূত্র জানায়, ওষুধের দোকান তদারকির সময় অনুমোদনহীন, মেয়াদোত্তীর্ণ, নকল ও ভেজাল ওষুধ জব্দ করা হয়। পরবর্তীতে ওসব ওষুধ বহনে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সমস্যায় পড়তে হয়। পাশাপাশি জীবনরক্ষাকারী ওষুধের বাজারে অনিয়ম রুখতে তাৎক্ষণিক অভিযান পরিচালনার জন্যও নিজস্ব কোনো বাহিনী নেই। এজন্য নকল, ভেজাল ও মানহীন ওষুধ-সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহের জন্য নিজস্ব কোনো সোর্সও অধিদপ্তরের নেই। বর্তমানে অধিদপ্তরে ফার্মাসিস্টের তুলনায় নন-ফার্মাসিস্ট পদে লোকবল বেশি। ফলে তাদের অধিকাংশই দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ রয়েছে। বিভিন্ন সময়েই অভিযোগ উঠেছে- নিম্নমান ও ভেজাল ওষুধ কারখানা পরিদর্শনের নামে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে তা অধিদপ্তরের সব শ্রেণীর কর্মকর্তাদের মধ্যে ভাগ-বাটোয়ারা করা হয়।

সূত্র আরো জানায়, বর্তমানে সারাদেশে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ে ৪৮টি অফিস রয়েছে। ওসব অফিসে একজন করে ড্রাগ সুপারও রয়েছেন। আর অফিস পরিচালনার জন্য রয়েছেন এক-দুজন সহকারী। সারাদেশে মোট ৫৬ জন ড্রাগ সুপার ও ৩ জন পরিদর্শক রয়েছেন। এর বিপরীতে বর্তমানে দেশে অ্যালোপ্যাথিক ওষুধ তৈরির কোম্পানি রয়েছে ২৭৮টি। তারমধ্যে ২০৯টি কোম্পানি উৎপাদনে রয়েছে। আর উৎপাদন বন্ধ রয়েছে ২৫টির কোম্পানির। ৪২টি কোম্পানির লাইসেন্স সাময়িক বাতিল করা হয়েছে। পাশাপাশি সারাদেশে ফার্মেসির লাইসেন্স রয়েছে ১ লাখ ১৮ হাজার ৫৭২টি। কিন্তু ওষুধ কোম্পানি ও বিক্রয় প্রতিষ্ঠানের সংখ্যার বিপরীতে ওষুধ প্রশাসনের প্রয়োজনীয় লোকবল অত্যাধিক মাত্রায় কম। ফলে মানুষের নিরাপদ ওষুধ প্রাপ্তির অনিশ্চয়তা থেকেই যাচ্ছে।

এদিকে গতবছরের জানুয়ারিতে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের ওপর গবেষণা চালায়। সংস্থাটির প্রতিবেদনে ওষুধের তদারকি ও পরিদর্শনে দুর্বল লজিস্টিক সাপোর্টের বিষয় ধরা পড়ে। তাতে বলা হয়েছে, কোনো কোম্পানির কারখানা পরিদর্শনে গেলে পরিদর্শকদের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের গাড়ির ওপর নির্ভর করতে হয়। তাতে কর্মকর্তা ও কোম্পানির মধ্যে স্বার্থের দ্বন্দ্ব তৈরি হচ্ছে। পাশাপাশি অনিয়ম ও দুর্নীতির সুযোগও সৃষ্টি হচ্ছে। তাছাড়া মাঠপর্যায়ে ওষুধের নমুনা সংগ্রহ ও রক্ষণাবেক্ষণেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার অভাব রয়েছে। উপযুক্ত রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিবহন ব্যবস্থার অভাবে কেন্দ্রীয় পরীক্ষাগারে পাঠানো নমুনার কিছু অংশ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

অন্যদিকে এ বিষয়ে ওষুধ প্রশাসনের কর্মকর্তারা মুখ খুলতে নারাজ। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে অধিদপ্তরের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, দক্ষ লোকবল ও লজিস্টিক সাপোর্টের ঘাটতি রয়েছে। বাজেটও কম দেয়া হচ্ছে। প্রতি বছর মাত্র ৮ কোটি টাকার বাজেট দেয়া হয়। তার মধ্যে বেতন-বোনাসেই ৬ কোটি টাকা ব্যয় হয়। কাজেই অন্যান্য বিষয়ে নজর দেয়ার সুযোগ থাকে না।

সোনালীনিউজ/এমএইউ

Wordbridge School
Link copied!