• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জব্বার প্যাদার ‘আইর’ চাষ


এম সুজন আকন, নিউজরুম এডিটর মে ৬, ২০১৬, ১০:২১ পিএম
জব্বার প্যাদার ‘আইর’ চাষ

বরগুনা থেকে : বরগুনা জেলার আমতলী উপজেলার ঘটখালী গ্রামের মৎস্যচাষী আব্দুর জব্বার প্যাদা। অন্যসব মাছ চাষীরা স্বপ্ন দেখেন পাঙ্গাস, তেলাপিয়া, রুই, কাতলা ও মাগুরসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছের। কিন্তু জব্বার প্যাদা দেখেছেন একটু ভিন্ন ধরনের স্বপ্ন।

সফলতার প্রত্যয় নিয়ে ১৯৯৫ সাল থেকে নিজের ফষলি জমিতে পুকুর কেটে সঙ্কটাপন্ন প্রজাতির আইর মাছ চাষ শুরু করেন জব্বার। শুধু মৎস্য চাষে নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখেননি। সঙ্কটাপন্ন প্রজাতির আইর মাছের পোনা উৎপাদনের চেষ্টাও শুরু করেন। তার এই প্রচেষ্টায় আইর মাছ চাষ ও পোনা উৎপাদনে সফলতা পেয়েছেন।

জেলেদের সহযোগিতায় পায়রা নদী থেকে মাত্র ৫টি আইর মাছের পোনা সংগ্রহ করেন। মাত্র দুই বছরের প্রচেষ্টায় ৫টি মাছ থেকে সফলভাবে পোনা উৎপাদন করতে সক্ষম হন তিনি। উৎপাদিত পোনা বদ্ধ জলাশয়ে চাষ করে এক বছরের মধ্যে ২ লাখ টাকা উপার্জন করেন তিনি।

বর্তমানে ৩টি পুকুরে পোনা উৎপাদন ও ১২টি পুকুরে আইর চাষ করছেন তিনি। শুধু নিজেই চাষ করছেন না, সম্প্রতি বিক্রিও শুরু করেছেন আইর মাছের পোনা। তার উৎপাদিত আইর মাছের প্রতিটি পোনা বিক্রি করেন ২৫ থেকে ৩০ টাকা। অন্য মাছের থেকে বেশি লাভজনক হওয়ায় চাষীদের মাঝে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে আইর মাছ চাষ।

তিনি ২০১৪ সালে জেলা প্রশাসন ও মৎস্য অধিদপ্তর থেকে সফল পোনা উৎপাদনকারী হিসেবে সম্মাননা পান। বর্তমানে সরকারি সহায়তা পেলে তার উদ্ভাবিত পন্থায় সারাদেশে আইর চাষ করা সম্ভব বলে মনে করছেন তিনি।

আব্দুল জব্বার জানান, মূলত সবাই বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ করে থাকে। তাই চিন্তা করেন সবার থেকে একটু আলাদাভাবে মাছ চাষ করে সফলতা অর্জন করবেন। আর সেই লক্ষ্যে নিয়ে পায়রা নদী থেকে মাত্র পাঁচটি আইর মাছ সংগ্রহ করেন। তারপরে প্রায় দুই বছর সেই মাছগুলোর পিছনে পরিশ্রম করে পরের এক বছরে এক লাখ টাকা উপার্জন করেন তিনি।

আইর মাছের পোনা উৎপাদনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আইর মাছ মূলত নিজেরাই পানির নিচে মাটিতে গর্ত তৈরি করে বাচ্চা (পোনা) দেয়। সেই গর্ত থেকে বাচ্চাগুলোকে আলাদা করে অন্য স্থানে রেখে বড় করা হয়।’

মৎস্য বিভাগের পরিসংখ্যান অনুযায়ী বর্তমানে ২৬০টি প্রজাতির মিঠা পানির মাছের মধ্যে ১৪টি প্রজাতি চরম সঙ্কটাপন্ন। আর এই ১৪ প্রজাতির অন্যতম আইর মাছ। আব্দুল জব্বারের উদ্ভাবিত পন্থা দেশের বিভিন্ন স্থানে মৎস্য চাষীদের মাঝে ছড়িয়ে দেয়া সম্ভব হলে বিলুপ্তি থেকে রক্ষা পাবে আইর প্রজাতির এ মাছটি।

এদিকে, জব্বারকে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে বরগুনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মোহছেন আলী বলেন, ‘তিনি যে কাজটি করেছে সেটি আমাদের দেশের বিলুপ্ত মাছ রক্ষায় একটি বড় ধরনের অবদান। আগে আমাদের দেশে আইর মাছের কোনো প্রকার চাষ হতো না। যেটি এবার জব্বার চাষ করেছে। তাই মৎস্য বিভাগ থেকে তাকে সব ধরনের সহযোগিতা আমরা করব।’


সোনালীনিউজ/ঢাকা/আকন

Wordbridge School
Link copied!