• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

জৌলুস ও ক্রেতা হারিয়েছে পুরান মার্কেটগুলো


নিজস্ব প্রতিবেদক জুন ১৩, ২০১৮, ০২:১৯ পিএম
জৌলুস ও ক্রেতা হারিয়েছে পুরান মার্কেটগুলো

ঢাকা : একটা সময় ছিল রাজধানীতে ঈদের কেনাকাটা মানেই সামনে চলে আসত নিউ মার্কেট আর চাঁদনী চক সুপার মার্কেটের নাম। জনপ্রিয়তার দিক থেকে মার্কেট দুটি এখনো আগের মতোই রয়েছে। তবে জৌলুস হারিয়েছে নব্বই দশকে গড়ে ওঠা বেশ কয়েকটি মার্কেট। ক্রেতা হারাতে হারাতে এগুলোর কয়েকটি চরিত্রও পাল্টে ফেলেছে; চলছে ভিন্ন পণ্যের ব্যবসা। বাকিগুলো চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে।

এসব মার্কেটের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপে জানা গেছে, বসুন্ধরা সিটি শপিং মল, যমুনা ফিউচার পার্কের মতো বড় বড় শপিং মল হওয়ায় ক্রেতা সঙ্কটে পড়েছে তারা। একই মার্কেটে সব ধরনের পণ্য ও অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা থাকায় এ সঙ্কট তৈরি হয়েছে। অথচ ঈদ এলেই টেলিভিশনে বিজ্ঞাপন দেওয়া হতো গুলিস্তানের পীর ইয়ামেনী মার্কেট, হাতিরপুলের নাহার প্লাজা, ইস্টার্ন প্লাজা, ধানমন্ডির রাপা, মেট্রো ও প্রিন্স প্লাজা, মৌচাকের হোসাফ টাওয়ার, এলিফ্যান্ট রোডের ইস্টার্ন মলি­কা সুপার মার্কেটের। এসব বিজ্ঞাপনে মার্কেটগুলোকে দেখানো হতো অত্যাধুনিক মার্কেট হিসেবেই। বর্তমানে এসব মার্কেট চালু থাকলেও বেশ কয়েকটিই পাল্টেছে ব্যবসার ধরন। ‘আজা আজা, নাহার প্লাজা’ খ্যাত বিজ্ঞাপনের সেই নাহার প্লাজায় এখন মোবাইল অ্যাকসেরিস আর মোবাইল সার্ভিসিংয়ের ব্যবসা চলছে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত মার্কেটটি চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে।

অভিনেতা আবদুল কাদেরের পীর ইয়ামেনী মার্কেটের বিজ্ঞাপনটিও জনপ্রিয় করেছিল গুলিস্তান জিরো পয়েন্টের এ মার্কেটকে। বর্তমানে এ মার্কেটে শাড়ি-পাঞ্জাবির কয়েকটি পাইকারি দোকান থাকলেও খুচরা পর্যায়ে সেখানে আর ক্রেতা সমাগম ঘটছে না। মার্কেটটির ওপরে আবাসিক হোটেল ও কয়েকটি বণিক সমিতির কার্যালয় রয়েছে। ধানমন্ডিতে কাছাকাছি এলাকায় রয়েছে রাপা প্লাজা, মেট্রো প্লাজা, এআর প্লাজা ও প্রিন্স প্লাজা। গত তিন বছর ধরে প্রিন্স প্লাজার পুরোটাই একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। বাকিগুলোয় বিভিন্ন নিত্যপণ্যের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থাকলেও তা আগের মতো নেই।

মৌচাকের হোসাফ টাওয়ারে নিচতলায় ফটোকপি, স্টেশনারিসহ বিভিন্ন পণ্যের কয়েকটি দোকান রয়েছে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত মার্কেটটির চলন্ত সিঁড়িগুলো অধিকাংশ সময় থাকে বন্ধ; বন্ধ থাকে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্রও। বর্তমানে এর ওপরের কয়েকটি তলা নিয়ে পরিচালিত হচ্ছে বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। হাতিরপুলের মোতালেব প্লাজা হাঁকডাক দিয়ে উদ্বোধন করা হলেও তা এখন মোবাইল ফোন ও অ্যাসসেসরিস মার্কেট হিসেবেই পরিচিত।

ইস্টার্ন প্লাজায় তৈরি পোশাকসহ বেশ কিছু নিত্যপণ্যের দোকান থাকলেও সেটিও মোবাইল ফোন মার্কেট হিসেবেই এখন জনপ্রিয়। এলিফ্যান্ট রোডের ইস্টার্ন মল্লিকা পার্শ্ববর্তী নিউ মার্কেট ও চাঁদনী চক সুপার মার্কেটের তুলনায় অত্যাধুনিক হওয়ায় কিছুটা ক্রেতা ধরে রাখতে পেরেছে। তবে তা আগের তুলনায় বেশ কম। মৌচাকের হোসাফ টাওয়ারের নিচতলার স্টেশনারি ব্যবসায়ী আমিনুল ইসলাম বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ১০ বছর আগে গার্মেন্ট আইটেমের দোকান হিসেবেই আমি দোকান ভাড়া নিয়েছিলাম। প্রথম দিকে ভালোই চলেছে। এসি মার্কেট, আশপাশে তেমন কোনো মার্কেট না থাকায় কাস্টমারও বেশি ছিল। শান্তিনগরে ইস্টার্ন প্লাস, কনকর্ড মার্কেট হওয়ার পর এ মার্কেটে ভাটা পড়ে। বাধ্য হয়েই ব্যবসা পাল্টে ফেলেছি। অনেকে অন্য মার্কেটে চলে গেছেন বলেও জানান তিনি।

নাহার প্লাজার মোবাইল অ্যাকসেরিসের ব্যবসায়ী খোন্দকার ইকবাল জাফর বলেন, প্রায় ৭ বছর এ মার্কেটে মোবাইল আর অ্যাকসেরিসের ব্যবসা করছি। যখন শুরু করি তখন কয়েকটি পোশাকের দোকান ছিল। তাই ঈদ ছাড়া অন্য সময়েও ক্রেতা আসত। কিন্তু গত ৪-৫ বছরে মার্কেটটির পরিবেশ পুরোটাই পাল্টে গেছে।

রাপা প্লাজার তৈরি পোশাক ব্যবসায়ী মাসুদুর রহমান মোল্লা বলেন, বসুন্ধরা সিটি চালু হওয়ার পর থেকেই ধানমন্ডির মার্কেটগুলোতে ক্রেতা সঙ্কট শুরু হয়। প্রিন্স প্লাজা পুরোটা ভার্সিটি হয়ে যাওয়ায় চার বছর আগে আমি এ মার্কেটে (রাপা প্লাজা) নতুন করে দোকান নিয়েছি। চেষ্টা করছি যমুনা ফিউচার পার্কে যাওয়ার।

পীর ইয়ামেনী মার্কেটে কথা হয় বাংলাদেশ হ্যান্ড লুম অ্যান্ড ওয়েভার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. সালাউদ্দিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমার মূল ব্যবসা জামদানি। একসময় পীর ইয়ামেনী মার্কেট জামদানি মার্কেট হিসেবে প্রসিদ্ধ ছিল। তৈরি পোশাক, শাড়ি, পাঞ্জাবির অনেক দোকান ছিল। এখন নিচতলায় কয়েকটি খুচরা দোকান থাকলেও অধিকাংশই পাইকারি। আমরা এখানে আমাদের সমিতিরও একটা কার্যালয় করেছি।

তিনি জানান, একসময় রাজধানীতে বেশ কয়েকটি শপিং মার্কেট খুব জনপ্রিয় ছিল। জামদানির উৎপাদনকারী হিসেবে আমার ওইসব মার্কেটে চলাচল ছিল। বসুন্ধরা, যমুনা, মোহাম্মদপুরের টোকিও স্কয়ারের মতো বড় বড় মল গড়ে ওঠায় আগের মার্কেটগুলোর ব্যবসায়ীরা মার খেয়েছেন। দোকান ভাড়া কুলিয়ে উঠতে পারেননি তারা। বাধ্য হয়েই ব্যবসার ধরন পাল্টে ফেলেছেন।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!