• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

টিকিটপ্রত্যাশীদের উপচে পড়া ভিড় কমলাপুরে


নিজস্ব প্রতিবেদক আগস্ট ১০, ২০১৮, ১২:৪২ পিএম
টিকিটপ্রত্যাশীদের উপচে পড়া ভিড় কমলাপুরে

ঢাকা : ঈদের অগ্রিম টিকেট বিক্রির ৩য় দিন শুক্রবার হওয়ায় টিকেট প্রত্যাশী অসংখ্য মানুষের সমুদ্রে ভাসছে রাজধানীর কমলাপুর রেল স্টেশন। স্টেশনের  ২৬টি কাউন্টার থেকে একযোগে চলছে ঈদের অগ্রিম টিকেট বিক্রি। প্রতিটি টিকেট কাউন্টারের সামনে শুধু মানুষ আর মানুষ।

শুক্রবার (১০ আগস্ট) পাওয়া যাচ্ছে ১৯ আগস্টের টিকেট।

টিকেট প্রত্যাশিদের বেশিরভাগই গত রাত থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে। মানুষের এই লাইন দীর্ঘ লাইন স্টেশনের বাইরে গিয়ে ঠেকেছে। সবচেয়ে বেশি ভিড় উত্তরবঙ্গগামী ট্রেনগুলোর কাউন্টারের সামনে।

শনিবার (১১ আগস্ট) বিক্রি হবে ২০ আগস্টের টিকেট আর ১২ আগস্ট মিলবে ২১ আগস্টের টিকেট। এই দিনগুলোতে ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় সকাল ৮টা থেকে টিকেট বিক্রি হবে।

চট্টগ্রামগামী তূর্ণা নিশিথা ট্রেনের টিকিট পেতে গতকাল সন্ধ্যা থেকে অপেক্ষা করছিলেন বেসরকারী ব্যাংকের কর্মকর্তা কামাল আহমেদ। তিনি বলেন, সড়ক পথে যানজট, খানা-খন্দ আর ভোগান্তির কারণে রেলপথে এবার মানুষ বেশি ঝুঁকেছে। ছোট বাচ্চা থাকার কারণে গতবার ঈদে বাড়ি যাইনি, এবার যেহেতু কোরবনি ঈদ তাই যেতেই হবে, যে কারণে শত ভোগান্তি উপেক্ষা করে টিকিটের লাইনে দাঁড়িয়েছি। গতকাল সন্ধ্যায় দিকে যখন টিকেট কাউন্টারের সামনে এলাম তখনই স্টেশনে শত শত মানুষ। আজ সকাল ৮টায় টিকিট বিক্রি শুরু হলেও আমার সিরিয়াল এখনও অনেক পেছনে। শেষ পর্যন্ত কাঙ্ক্ষিত টিকেট পাবো কি না এটেই অনিশ্চিত।

এদিকে টিকেটের লাইনে গতরাত থেকে দাঁড়িয়ে থেকেও অনেকেই এসি টিকেট পাননি বলে অভিযোগ জানিয়েছেন। তাদের মধ্যে একজন সাইফুল করিম, স্ত্রী-সন্তানসহ আগামী ১৯ আগস্ট যাবেন রাজশাহী। সে লক্ষ্যেই গত রাতে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন। তিনি বলেন, গত রাত ১০টার দিকে এসে লাইনে দাঁড়িয়েছি, সারা রাত অপেক্ষা করার পর সকাল ৮টায় যখন টিকেট বিক্রি শুরু হলো তার কিছুক্ষণ পরই জানানো হল এসি টিকিট শেষ। বাধ্য হয়ে নন এসি শোভন চেয়ারের টিকিট কাটলাম। স্ত্রীসহ ছোট বাচ্চা নিয়ে বাড়িতে যাবো, কিন্তু ঈদের সময় এসি টিকেট না হলে মানুষের ভিড়ে সাধারণ সিট পর্যন্ত পৌঁছানোই যায় না। তাহলে গত রাত থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে আমার কি লাভ হল? এসি সিটই পেলাম না।

এ বিষয়ে কাউন্টারে কর্মরতরা বলছেন, ঈদের সময় সবাই এসি টিকেট চায় কিন্তু আমাদের এসি সিট তো সীমিত। তাহলে কীভাবে আমরা সবাইকে টিকিট দেব। কাউন্টারে টিকিট বিক্রি ছাড়াও অনলাইন, ভিআইপি, রেলওয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কোটাও আছে। এ ছাড়া স্টেশন কেন্দ্রীকও এসি সিট বরাদ্দ থাকে। তাহলে সব গন্তব্যে সবার কাঙ্ক্ষিত এসি টিকিট আমরা কিভাবে দেব?

বরাবরের মত এবারও মোট টিকেট ৬৫ শতাংশ দেয়া হচ্ছে কাউন্টার থেকে। বাকি ৩৫ শতাংশের ২৫ শতাংশ অনলাইন ও মোবাইলে। ৫ শতাংশ ভিআইপি ছাড়াও রেল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য বরাদ্দ রয়েছে ৫ শতাংশ। কমলাপুর স্টেশনে ২৬টি কাউন্টারে সকাল ৮ থেকে টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে এরমধ্যে নারীদের জন্য দুইটি কাউন্টার সংরক্ষিত আছে।

কমলাপুর স্টেশন ম্যানেজার সীতাংশু চক্রবর্তী বলেন, সকাল থেকেই টিকিট প্রত্যাশী মানুষের উপচেপড়া ভিড় স্টেশনে। যত মানুষ লাইনে দাঁড়িয়েছে সবাইকে হয়তো আমরা তার কাঙ্ক্ষিত টিকিট দিতে পারবো না। কারণ আমাদের সম্পদ সীমিত। তবে যাত্রী চাপের কথা মাথায় রেখে প্রতিটি ট্রেনেই অতিরিক্ত বগি সংযুক্ত করা হবে। অগ্রিম টিকিট বিক্রিতে যেন কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সে লক্ষ্যে আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ রেলওয়ের নিজস্ব বাহিনী তৎপর রয়েছে।

এদিকে ১৫ আগস্ট থেকে শুরু হবে ঈদ ফেরত যাত্রীদের জন্য ট্রেনের অগ্রিম টিকেট বিক্রি। ঈদ ফেরত অগ্রিম টিকিট রাজশাহী, খুলনা, রংপুর, দিনাজপুর ও লালমনিহাট স্টেশন থেকে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় বিক্রি শুরু হবে। ফিরতি টিকিট ১৫ আগস্টে পাওয়া যাবে ২৪ আগস্টের টিকিট। একইভাবে ১৬,১৭, ১৮,১৯ আগস্ট যথাক্রমে পাওয়া যাবে ২৫,২৬,২৭,২৮ আগস্টের টিকিট। টিকিট বিক্রি শুরু হবে সকাল ৮টায়।

রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, সুষ্ঠু ও নিরাপদে ট্রেন চলাচলের সুবিধার্থে ট্রেন পরিচালনায় সাথে সম্পৃক্ত রেলওয়ে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সকল প্রকার ছুটি বাতিল করা হবে। ২১,২২ আগস্ট মৈত্রী এক্সপ্রেস এবং ২৩ আগস্টে বন্ধন এক্সপ্রেস চলাচল করবে না। একজন যাত্রীকে একসঙ্গে সর্বোচ্চ ৪ টি টিকিট দেয়া হবে এবং বিক্রিত টিকিট ফেরত নেয়া হবে না। ঢাকা স্টেশনে ২৬টি কাউন্টার খোলা রাখা হয়েছে।

এদিকে পবিত্র ঈদুল আজহার ৫ দিন আগে ১৮ আগস্ট থেকে ঈদের আগেরদিন পর্যন্ত সব আন্তঃনগর ট্রেন সাপ্তাহিক বন্ধের দিনও চলাচল করবে।

বাংলাদেশ রেলওয়েতে প্রতিদিন ২ লাখ ৬০ হাজার যাত্রী চলাচল করলেও ঈদুল আজহা উপলক্ষে দৈনিক ৩ লাখ যাত্রী চলাচল করার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছিলেন রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। সেই সঙ্গে সুষ্ঠু ও নিরাপদে ট্রেন চলাচলের সুবিধার্থে ট্রেন পরিচালনার সঙ্গে সম্পৃক্ত রেলওয়ে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সকল প্রকার ছুটি বাতিল করা হবে।

এদিকে যাত্রীরা নির্বিঘ্নে যেন ঈদযাত্রা করতে পারে সেই লক্ষ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!