• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

দুর্ভোগে ভর করেই সংযম শুরু


বিশেষ প্রতিনিধি জুন ৭, ২০১৬, ০৯:৩৭ এএম
দুর্ভোগে ভর করেই সংযম শুরু

পবিত্র মাহে রমজান সংযমের মাস হলেও, জীবনযাত্রায় ব্যয়ের ভার বাড়িয়ে দেয়। একই সঙ্গে দুর্ভোগ এনে দেয় পথ চলায়। আর এসবই সৃষ্টি কতিপয় মানুষের। রমজান মাস শুরু না হতেই নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানোর পাঁয়তারা করে একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী। যার মাশুল দিতে হয় সাধারণ ভোক্তাদের।

রোজায় যেসব পণ্যের চাহিদা বেড়ে যায় সেসব পণ্যের দাম বাড়ানোর শ্যেনদৃষ্টি অসাধু ব্যবসায়ীদের। ইফতারের অন্যতম অনুষঙ্গ ছোলা, খেজুর। ইফতারের উপকরণে যেসব পণ্য প্রয়োজনীয় এর মধ্যে রয়েছে চিনি, তেল, পেঁয়াজ। মুড়ির দামের ক্ষেত্রে ভোক্তাদের তেমন কোনো অভিযোগ না থাকলেও, ভেজাল নিয়ে আপত্তি ওঠে।

সারাদিন রোজা রেখে রোজদার ইফতারের সময় খেজুর ও এক গ্লাস শরবত পান করে রোজা খোলেন। এর পরই শুরু হয় মুড়ি ছোলার পর্ব। একজন রোজদার খেজুর কিনবেন শুধু রোজার মাসেই। কিন্তু এখন হঠাৎ করে খেজুরের দাম বেড়ে গেছে। সৌদির খেজুরের ১০ কেজি প্যাকেটের দাম কিছুদিন আগে ছিল ১১০০ টাকা। এখন তা বিক্রি হচ্ছে ১৪০০ টাকায়। ইউরোপের ৫ কেজি খেজুর কিছুদিন আগে বিক্রি হয়েছে ২৪০০ টাকা থেকে ২৫০০ টাকায়। আর এখন তা বিক্রি হচ্ছে ২৮০০ থেকে ৩০০০ টাকায়।

১০ কেজি বরই খেজুরের কার্টন কিছুদিন আগে বিক্রি হয়েছে ১২৫০ থেকে ১৩০০ টাকায়। এখন তা বিক্রি হচ্ছে ১৪০০ থেকে ১৪৫০ টাকায়। ৫ কেজি তিউনিশিয়ার প্যাকেটজাত খেজুর আগে ছিল ১১০০ টাকা। এখন তা বিক্রি হচ্ছে ১৪০০ টাকায়। জাহিদি খেজুর আগে ছিল কেজি ৪৫ টাকা। এখন তা বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকায়। এভাবে সব ধরনের খেজুরের দাম এখন বাড়তির দিকে। অর্থাৎ রোজায় ভোক্তাদের পকেট কাটা শুরু হয়ে গেছে।

অথচ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ব্যবসায়ীরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন চাহিদার তুলনায় পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। তা হলে দাম বাড়ানোর যুক্তি কোথায় এ প্রশ্নের উত্তরে বাদামতলী ফল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দাম বেড়েছে। তাই কিছুটা বাড়তি।

ছোলার বাজার কখনো অস্থির, আবার স্থির। বাজেটের আগে এর দাম ছিল কেজিতে ৮০ থেকে ৯০ টাকা। এখন ১০০ থেকে ১১০ টাকা। তবে রকমভেদে কোথাও কোথাও দাম হের-ফের লক্ষ্য করা যায়।

তবে একাধিক ব্যবসায়ী বলেছেন, যা দাম বাড়ার তা অনেক আগেই বেড়েছে। এখন আর নতুন করে দাম বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। ছোলা ব্যবসায়ীরাও কথা দিয়েছিলেন দাম সহনীয় পর্যায়ে থাকবে। কিন্তু তারা কোনো কথা রাখলেন না। অতিরিক্ত দাম চাপিয়ে দিলেন ভোক্তাদের ওপর। আর সুযোগটা নিলেন এই পবিত্র রমজানে।

ইফতারে শরবত কম বেশি সবার জন্য তৈরি হয়। হোক তা ঘরে কিংবা অফিসে। আর এই শরবতের মূল উপাদান হলো চিনি। হয়তো এর সঙ্গে লেবু যোগ হয়। সেই চিনির দাম এখন বাড়তির দিকে। কিছুদিন আগেও চিনি কেজিতে বিক্রি হয়েছে ৫২ টাকায়। আর এখন বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকায়। পাইকারি থেকে শুরু করে সবার অভিযোগ মিলগেট থেকে চাহিদা অনুযায়ী চিনি সরবরাহ করা হচ্ছে না। হাতে গোনা চিনি পরিশোধনকারী কোম্পানি পুরো জিম্মি করে ফেলেছে বলে একাধিক সূত্রে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এদেরই একজন সম্প্রতি ব্যবসায়ীদের গ্রুপে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হয়েছেন।

একইভাবে সয়াবিন তেলের ব্যাপারে একই ঘটনার অভিযোগ পাওয়া গেছে। রোজার মাসে সাধারণ ভোক্তাদের পকেট কাটতে যেন একটি সিন্ডিকেট তৈরি হয়েছে। যা সরকারের অজানা নয় বলে দায়িত্বশীল সূত্রে আভাস পাওয়া গেছে।

এতো গেল ইফতারের প্রধান অনুষঙ্গ। এরপরও রয়েছে বেগুন, মুরগি, গরুর মাংস, শসা ও লেবু। যা এই দেশে উৎপাদন হয়। আমদানিনির্ভর পণ্যের বেলায় ভোক্তাদের বুঝ দেয়ার ক্ষেত্র থাকে। কিন্তু দেশীয় পণ্যের বেলায় সঠিক উত্তর খুঁজে পাওয়া যায় না বলে একাধিক ভোক্তা মন্তব্য করেছেন।

রমজান মাসে দুর্ভোগের মাত্রা বাড়িয়ে দেয় যানজট। যা প্রতিদিনের জীবনে চলার পথে এক পরিচিত হ্যাজার্ড। কিন্তু রমজানে সবাই একসঙ্গে বাড়ি ফেরার পালা চলে। আরো চলে দ্রুততার সঙ্গে একস্থান থেকে গন্তব্য স্থানে পৌঁছানো। যানবাহনের স্বল্পতার সুযোগে বেশি ভাড়া নেয়ার প্রবণতা বাড়ে। এখানেও চলে ভোক্তাদের পকেট কাটার প্রতিযোগিতা।

রিকশা থেকে শুরু সিএনজি সবাই প্রতিযোগিতায় নেমে পড়ে কে কার থেকে বেশি আদায় করে নিতে পারে। দুর্ভোগে পড়ে সাধারণ যাত্রী। যানজটের মাত্রা কখনো কখনো দুঃসহ পর্যায়ে নেমে আসে। যা একমাত্র ভুক্তভোগীরা উপলব্ধি করতে পারেন। ট্রাফিক ব্যবস্থা অনেক ক্ষেত্রে ভেঙে পড়ে। এখন ঢাকা শহরে এমন কোনো স্থান নেই যে মসৃণভাবে যানবাহন চলতে পারে। কোথাও না কোথাও রাস্তা বেহাল অবস্থায় রয়েছে। মালিবাগ আর মৌচাকের মতো যানবাহনের জংশন এখন বেহাল অবস্থা। এই রাস্তা দিয়ে বিভিন্ন রুটের বাস চলাচল করা ছাড়াও অসংখ্য যানবাহন চলাচল করে। কিন্তু রাস্তার বেহাল অবস্থা যানজট এখন অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। আর এর প্রভাবে এসব এলাকার অলিগলিতে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এখানে ট্রাফিক ব্যবস্থা এখন অচল। রমজানে নতুন মাত্রায় এই যানজট মোকাবিলার জন্য এখনো কোনো পদক্ষেপ নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

রমজানে দুর্ভোগের আরেক চিরচেনা মাত্রা হচ্ছে লোডশেডিং। ইফতার সময়ে কিংবা তারাবি নামাজের সময় যদি লোডশেডিং হয় তাহলে কষ্ট বাড়িয়ে দেবে মুসল্লিদের। আর লোডশেডিংয়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পানির কষ্ট বেড়ে যাবে। অবশ্য সম্প্রতি স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন, পানির তেমন সমস্যা হবে না। তিনি ওয়াসাকে বাড়ি বাড়ি পানি পৌঁছানোর নির্দেশনা দিয়েছেন বলে জানা গেছে।

পুরো রমজান মাসে জীবনযাত্রার ব্যয়ের সঙ্গে সঙ্গী হচ্ছে অযাচিত দুর্ভোগ। এই দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে সরকার কোনো কোনো ক্ষেত্রে কিছু আগাম পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে কতটুকু কার্যকর হয় তা এখন দেখার বিষয়।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/জেডআরসি/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!