• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ধারাবাহিক প্রণোদনার পরও না বেড়ে কমে যাচ্ছে আউশ আবা


নিজস্ব প্রতিবেদক এপ্রিল ৯, ২০১৬, ০৩:৫৩ পিএম
ধারাবাহিক প্রণোদনার পরও না বেড়ে কমে যাচ্ছে আউশ আবা

সোনালীনিউজ রিপোর্ট

আউশ ধান আবাদে সরকার বিগত কয়েক বছর ধওে ধারাবাহিকভাবে প্রণোদনা দেয়ার পরও ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে। এ খাতে সরকার ইতিমধ্যে প্রায় শত কোটি টাকার প্রণোদনা ও ভর্তুকি দিয়েছে। কিন্তু তারপরও চলতি অর্থবছর আউশ আবাদ ও উৎপাদন আগের চেয়ে বাড়ানো যাচ্ছে না। বরং কমে যাচ্ছে। এক বছরের ব্যবধানে দেশে আউশ আবাদ ২৭ হাজার ৪৩৭ হেক্টর এবং উৎপাদন ৩৯ হাজার ৪৪৮ টন কমে গেছে। কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সরকার দেশে আউশ ধানের আবাদ ও উৎপাদনের লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হওয়ায় ২০১২ সালে কৃষকদের প্রণোদনা দেয়া শুরু করে। ওই বছর সরকারের তরফ থেকে ৩০টি জেলায় ৩৭ হাজার ৫শ’ কৃষককে মোট ৪ কোটি ১৪ লাখ টাকা অর্থ সহায়তা দেয়া হয়। আর ২০১৩ সালে ৪৭ জেলায় ৩ লাখ ৩২ হাজার ৫শ’ কৃষককে ৪৩ কোটি ৯ লাখ এবং ২০১৪ সালে ৪৪টি জেলার ২ লাখ ৪৪ হাজার ৬শ’ কৃষককে ৩০ কোটি ৬৮ লাখ টাকার প্রণোদনা দেয়া হয়। তাছাড়া ২০১৫ সালে উফশী আউশ ও নেরিকা আবাদের জন্য দেশের ২ লাখ ১০ হাজার কৃষককে ৩০ কোটি ২১ লাখ টাকা প্রণোদনা দেয়া হয়। এই প্রণোদনার মূল্য উদ্দেশ্যই ছিল আউশের আবাদ ও উত্পাদন বাড়ানো। কিন্তু সরকারি প্রণোদনা কর্মসূচির পর ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ১০ লাখ ৪৫ হাজার ৪০৬ হেক্টর জমি থেকে প্রায় ২৩ লাখ ২৮ হাজার টন আউশ উৎপাদন হয়। তবে চলতি অর্থবছরে প্রাথমিক হিসাবে ওই উৎপাদন কমে এসেছে। চলতি অর্থবছর ১০ লাখ ১৭ হাজার ৯৬৯ হেক্টর জমিতে মোট ২২ লাখ ৮৮ হাজার ৬৪২ টন আউশ উৎপাদন হয়েছে। ইতিমধ্যে সরকারের তরফ থেকে দেশের ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষককে খরিফ ২০১৬-১৭ মৌসুমে প্রণোদনা দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সেই লক্ষ্যে উফশী ও নেরিকা আউশ আবাদে বিনামূল্যে বীজ, রাসায়নিক সারের পাশাপাশি ২ লাখ ৩১ হাজার ৩৬৩ কৃষককে ৩৩ কোটি ৬২ হাজার ২৩৫ টাকা দেয়া হবে। পাশাপাশি প্রত্যেক কৃষক এক বিঘা জমির জন্য ৫ কেজি করে উফশী আউশ বীজ, ২০ কেজি ইউরিয়া, ১০ কেজি ডিএপি ও ১০ কেজি এমওপি সার এবং সেচ বাবদ ৪শ’ টাকা পাবে। নেরিকা আবাদে এক বিঘা জমির জন্য প্রত্যেক কৃষক একই পরিমাণ সার ও সেচ বাবদ অর্থের পাশাপাশি পাবেন ১০ কেজি নেরিকা আউশ বীজ ও আগাছা দমনে ৪শ’ টাকা প্রণোদনা। ওই অর্থ কৃষি মন্ত্রণালয়ের মঞ্জুরীকৃত বাজেট বরাদ্দ থেকে দেয়া হবে। এই কর্মসূচির মাধ্যমে ৭০ হাজার ৫৭৮ টন উফশী আউশ এবং ১০ হাজার ৩৩ টন নেরিকা আউশ উৎপাদন হবে বলে আশা করছে সরকার।

সূত্র জানায়, দেশের উত্তরাঞ্চল, মধ্যাঞ্চল ও বরেন্দ্র এলাকার জেলাগুলোয় সেচের সুব্যবস্থা নেই। বোরোনির্ভর ওসব অঞ্চলের কৃষককে খরাসহিষ্ণু আউশ ধান আবাদে উৎসাহিত করতে এবং দক্ষিণাঞ্চলের আউশনির্ভর জেলাগুলোয় আউশের বিভিন্ন জাত জনপ্রিয় করার লক্ষ্যেই এই প্রণোদনা কর্মসূচি নেয়া হয়। আউশ আবাদে কৃষককে উৎসাহিতকরণ, আবাদের এলাকা বাড়ানো, উচ্চফলনশীল (উফশী)  জাতের সম্প্রসারণ, হেক্টরপ্রতি ফলন বৃদ্ধি এবং সার্বিকভাবে ধানের মোট উৎপাদন বাড়ানোই এই কর্মসূচির প্রধান উদ্দেশ। কিন্তু অঞ্চলভিত্তিক আবহাওয়াগত পার্থক্য থাকলেও সেই অনুযায়ী আমনের জাত আসছে না। তাছাড়া জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানির অভাবে বোরো ধানের বেশকিছু এলাকায় আবাদ সম্প্রসারণের সুযোগও কমে এসেছে।
সূত্র আরো জানায়, আমন ও বোরো মৌসুমের মধ্যবর্তী সময়ে আউশ চাষে বাড়তি ফলন পাওয়া সম্ভব। কিন্তু দেশে আউশ আবাদে মূলত প্রচলিত স্থানীয় জাত ব্যবহারের কারণে উৎপাদনশীলতা বেশ কম। ফলে কৃষককে অনেক সময়ই ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে। এই কারণে আউশ আবাদে কৃষকরা আরো বেশি নিরুসাহিত হচ্ছেন। তবে দেশের অনেক জেলায় কম খরচে আউশ আবাদ সম্প্রসারণের সুযোগ আছে। সেক্ষেত্রে কৃষককে লাভবান করতে উফশী বীজের সম্প্রসারণ ও সুষম সার ব্যবহার প্রয়োজন। ওই কারণে আউশ আবাদে দেশীয় ফসলে ভর্তুকির পাশাপাশি বিদেশী জাত নেরিকা সম্প্রসারণে প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে।

এদিকে আউশ আবাদ বাড়ানোর লক্ষ্যে প্রণোদনা ঘোষণায় কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, বোরোর ওপর চাপ কমাতে আউশের আবাদ ও উৎপাদন বাড়াতে সরকার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেজন্য গত কয়েক বছরে শস্যটির আবাদ বাড়াতে সব ধরনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সরকারের এ ধরনের উদ্যোগের কারণে কৃষকরাও আগ্রহী হচ্ছেন। তাছাড়া কৃষককে আরো উৎসাহী করতে উন্নত জাত আনা হচ্ছে। ওসব জাত কৃষক পর্যায়ে সম্প্রসারণ করা গেলে হেক্টরপ্রতি ফলন বাড়ার পাশাপাশি উৎপাদন খরচও কমবে। বিশেষ করে ভূগর্ভস্থ পানির ভারসাম্য ধরে রাখতে এই সময়ে আউশ আবাদের বিকল্প নেই।


সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!