• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
ঢাকার দুই মেয়রের এক বছর

ধীর গতির উন্নয়ন, তবু আশা ছাড়েননি নগরবাসী


নিজস্ব প্রতিবেদক মে ৬, ২০১৬, ০৪:১২ পিএম
ধীর গতির উন্নয়ন, তবু আশা ছাড়েননি নগরবাসী

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের নির্বাচন হয় গত বছরের ২৮ এপ্রিল। এরপর ৬ মে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র হিসেবে শপথ নেন যথাক্রমে আনিসুল হক ও মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। মেয়র হিসেবে এক বছরে কতটা সফল তারা? নগরবাসীকে দেয়া প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন-ইবা কতদূর? ভবিষ্যতে নগরবাসীর সেবা প্রশ্নে তাদের ভাবনাটাই বা কী? এই এক বছরের পর্যালোচনামূলক হিসেবই তুলে ধরছেন সোনালীনিউজ ডটকম-এর বিশেষ প্রতিনিধি জুবায়ের রহমান চৌধুরী 

রাজধানী ঢাকার নাগরিক সেবার মানোন্নয়নের জন্য সিটি করপোরেশনকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। এরপর সেই ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে নির্বাচিত মেয়রও পেয়েছে নগরবাসী। নির্বাচিত হওয়ার পর এক বছর পার করেছেন দুই মেয়র। নির্বাচনী ইশতেহারে দুজনের পক্ষ থেকেই ঢাকার সার্বিক উন্নয়ন ও নাগরিকসেবা নিশ্চিত করার নানান প্রতিশ্রুতি ছিল। সেই লক্ষ্যে কাজও করে যাচ্ছেন তারা। তবে উন্নয়ন দৃশ্যমান হলেও তার গতি অনেক শ্লথ বা ধীর। টেকসই উন্নয়নে গতি কোনো বাধা কি-না, সে প্রশ্ন উঠতেই পারে।

নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, গত এক বছরে দুই সিটি করপোরেশনে নগরসেবার কিছুটা সম্ভাবনা উঁকি দিয়েছে। একই সঙ্গে কাগজে-কলমে অনেক পরিকল্পনার কথা জানানো হলেও কার্যত কোনো কাজ চোখে পড়েনি। নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক কিছুটা ঠিক থাকলেও অলিগলির অবস্থা নাজুক। এখনো রাস্তা থেকে সরানো হয়নি ডাস্টবিন। তবে বছর শেষে এসে নগরীর প্রধান সড়কগুলোর পাশে ছোট ছোট বিন (ময়লা ফেলার ঝুড়ি) বসিয়েছে সিটি করপোরেশন।

বছরপূর্তির আগে মেয়রদের পক্ষ থেকে নগরবাসীর জন্য ‘উপহার’-ই বলা যায় এসব বিন। বেশিরভাগ রাস্তা-ফুটপাত এখনও বেদখলে। শুষ্ক মৌসুমেও ময়লা-আবর্জনা আর পানি জমে জলাবদ্ধতার দৃশ্য চোখে পড়ে। নগরবাসীর বিনোদনের জন্য পার্ক ও খেলার মাঠ উদ্ধারে নেই কোনো তৎপরতা। এ ছাড়া মশক নিধন, পাবলিক টয়লেট স্থাপন, নগর স্বাস্থ্যসেবা, পাঠাগার, গণপরিবহন ব্যবস্থাপনা ও পরিকল্পিত নগরায়ন নিয়ে সামান্য কিছু কাজ হয়েছে। দুই মেয়র নির্বাচনের আগে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে জোর হুঁশিয়ারি দিলেও গত এক বছরে দুই সংস্থায় তেমন উদ্যোগ চোখে পড়েনি।

পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) থেকে কাজের দিক দিয়ে কিছুটা এগিয়ে আছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। তবে ডিএসসিসির বেশিরভাগ এলাকা পুরান ঢাকা হওয়ায় সেখানে কাজ করতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে মেয়র সাঈদ খোকনকে। তাছাড়া রাজস্ব আয়ও কম ডিএসসিসির। কিন্তু দুই মেয়রের পক্ষ থেকে রাস্তার উন্নয়নে ব্যাপক কাজ হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। দুই সংস্থাই ফুট ওভারব্রিজে সৌন্দর্যবৃদ্ধির মাধ্যমে বৃক্ষ রোপণ করেছে। ডিএসসিসি এলাকায় প্রায় ৩০০ সড়কের নির্মাণ ও সংস্কারকাজ শুরু হয়েছে। এর সুফল পেতে নগরবাসীকে আরো কয়েক মাস অপেক্ষা করতে হবে।

সোডিয়ামের সড়ক বাতি পরিবর্তন করে সেখানে প্রতিস্থাপন করা হচ্ছে উজ্জ্বল আলোর এলইডি বাতি। প্রথমে টিএসসি থেকে শাহবাগ হয়ে কারওয়ান বাজার পর্যন্ত সড়কে এলইডি লাইট স্থাপন করা হয়েছে। ২০১৬ সালকে পরিচ্ছন্ন বছর হিসেবে ঘোষণা করে বহু প্রতিষ্ঠান ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনা ও জনসচেতনতার কাজ করেছেন ডিএসসিসির মেয়র সাঈদ খোকন। এ ছাড়া প্রতিটি ওয়ার্ডের রাস্তার দুই পাশে ছোট ছোট বিন বসানো হয়েছে। ফলে এখন ঢাকার রাস্তার পাশে হাত বাড়ালেই ময়লা ফেলার বিন পাওয়া যায়। ডিএসসিসির পক্ষ থেকে ফুটপাতে স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্য বিক্রির জন্য গাড়ি বিতরণ করা হয়েছে। রমজানে বাজারমূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখতে বাজার মনিটরিং ও খাদ্যে ভেজালবিরোধী অভিযান পরিচালনা করছে ডিএসসিসি।

ডিএনসিসির পক্ষ থেকে মহাখালী, কল্যাণপুর ও গাবতলী, মোহাম্মদপুর, মিরপুর-১২ সড়কগুলোতে অবৈধ পার্কিংমুক্ত করা হয়েছে। কারওয়ান বাজার থেকে অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে ফলপ্রসূ অগ্রগতি হয়েছে। ডিএনসিসির আওতাধীন প্রায় সব বিলবোর্ড অপসারণ করা হয়েছে। এরই মধ্যে ৭২টি ট্রান্সফার স্টেশন (ময়লা আবর্জনা রাখার স্থান) নির্মাণের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পাঁচ শতাধিক সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। ডিএনসিসির উদ্যোগে গাবতলী ও তেজগাঁওয়ে দুটি অত্যাধুনিক টয়লেট নির্মাণ করা হয়েছে।

নগর পরিকল্পনাবিদ স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, অনেক দিন প্রশাসকনির্ভর থাকার পর আমরা স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় মেয়র পেয়েছি। বিলবোর্ড কেটে ফেলা, ট্রাকস্ট্যান্ড সরানো ও অবৈধ পার্কিং বন্ধ করার কাজের মধ্য দিয়ে মেয়রদের ওপর আস্থা রাখার পরিবেশ তৈরি হয়েছে। কিন্তু ময়লা-আবর্জনার ব্যবস্থাপনার নামে উন্মুক্ত স্থান ও শিশুদের খেলার মাঠ দখল আমাদের একটু চিন্তিত করে ফেলেছে। একই সঙ্গে সবুজ নগরীর আন্দোলনের কথা বলা হলেও তা একটু ফুট ওভারব্রিজে ছোঁয়া দিয়ে বসে আছে বলে মনে হচ্ছে।

তিনি বলেন, গত এক বছরে দুই মেয়র যেসব কাজ করেছেন এর বেশিরভাগ বিগত সময়ে নেয়া প্রকল্প। তারা নতুন কোনো প্রকল্প গ্রহণ করতে পারেননি। জলজট কমাতে খালগুলোতে থাকা কঠিন বর্জ্য পরিষ্কারের কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। মশা নিয়ে গতানুগতিক কাজ হচ্ছে। সবচেয়ে বড় কথা, রাজধানীর বাতাসে যে ধুলোবালি ওড়ে তা নিয়ে মেয়রদের কোনো পদক্ষেপ নেই মনে হচ্ছে।

পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) চেয়ারম্যান আবু নাসের খান বলেন, দুই মেয়র ছোট ছোট করে যে পদক্ষেপ নিচ্ছেন তা আমাদের কিছুটা হলেও স্বস্তি দিচ্ছে। কিন্তু তাদের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো আরো শক্তিশালী করা প্রয়োজন। তাদের উচিত শহরের পরিবেশ সুরক্ষায় ভূমিকা রাখা। আর নাগরিকসেবায় স্বচ্ছতা আনতে যতটুকু পারা যায় ডিজিটালাইজড পদ্ধতি চালু করা। আগের মেয়রদের মতো নতুন নতুন দোকান নির্মাণ করে বাণিজ্য বন্ধ করে গঠনমূলক কাজে মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন।

ডিএসসিসির মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকনের ঘোষণায় অগ্রাধিকার ছিল যানজট নিরসন, দূষণমুক্ত নগরী, নাব্য ও নিরাপদ বুড়িগঙ্গা; পানি, গ্যাস ও বিদ্যুেসবা নিশ্চিত করা, পরিচ্ছন্নতা ও স্বাস্থ্যকর মহানগরী এবং দুর্নীতি- সন্ত্রাস, চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে কাজ করার। এসব বিষয়ে এখনো কোনো দৃশ্যমান কাজ নগরবাসী দেখেনি। যানজট নিরসনে মেয়র পুলিশ, বাস-মালিক ও শ্রমিক নেতাদের নিয়ে কয়েক দফা বৈঠক করলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। ফুটপাত ও পার্ক দখলমুক্ত করতে ভ্রাম্যমাণ আদালত ব্যবহার করা হয়েছে। সেগুলো উদ্ধারের পর আবার দখল হয়ে যাচ্ছে। জলাবদ্ধতা নিরসনে গত বছর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে তিনি নগরবাসীকে নানা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু সামান্য বর্ষণেই তো পানি জমে যায় রাস্তায়। কাজ তো তাহলে কিছুই হয়নি।

নগরীতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় এখনো তেমন অগ্রগতি হয়নি। রাস্তায় বর্জ্য রয়ে গেছে। বিচ্ছিন্নভাবে দু-একটি বর্জ্য স্টেশন নির্মাণ করা হলেও এর সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। মশার উৎপাতে নাগরিক জীবন অতিষ্ঠ হলেও তেমন কার্যক্রম চোখে পড়ে না। এ ছাড়া মেয়র মোহাম্মদ হানিফ উড়ালসেতু নিয়ে অনেক অভিযোগ আর আক্ষেপ সাধারণ মানুষের। উড়াল সড়কের নির্মাণসামগ্রী রেখে ধূপখোলা মাঠ ও গোলাপবাগ মাঠ দখল করে রাখা হয়েছে। ঢাকাকে সবুজ করার ক্ষেত্রে কোনো দৃশ্যমান কাজ নেই। নগর বিনোদনের জন্য করা হয়নি কিছুই। সর্বোপরি মার্কেটের বেজমেন্ট উদ্ধার নিয়ে সরকারি আদেশ থাকলেও তা কার্যকর করেনি সংস্থাটি। রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হচ্ছে না ঠিক মতো।

‘আমরা ঢাকা’ শিরোনাম দিয়ে পরিচ্ছন্ন, সবুজ, আলোকিত ও মানবিক ঢাকা গড়ার প্রতিশ্রুতি দেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আনিসুল হক। ‘সমস্যা চিহ্নিত, এবার সমাধানযাত্রা’ এ ধরনের শ্লোগানও নগরবাসীর মন কেড়ে নেয়। এ ছাড়া নিরাপদ ঢাকা, স্বাস্থ্যকর ঢাকা, সচল ঢাকা, মানবিক ঢাকা, উন্নয়নের ঢাকা, স্মার্ট ও ডিজিটাল ঢাকা, অংশগ্রহণমূলক ঢাকা, সুশাসিত ঢাকা, এমন বাণীগুলো সেবাবঞ্চিত নাগরিকদের মনে বেশ আশা জুগিয়েছিল। তার ঘোষণায় স্থান পায় মশকমুক্ত, বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আধুনিকীকরণ, স্মার্ট কার্ড প্রদান, ফরমালিনমুক্ত ও নিরাপদ বাজার ব্যবস্থা গড়ে তোলা, ফুটপাত দখলমুক্ত করা, মাদক ও সামাজিক অনাচার প্রতিরোধ, সড়কগুলোকে সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা, স্কুলে হেলথ প্রোগ্রাম চালুসহ নানা নাগরিকসেবামূলক কার্যক্রম। মেয়র হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের এক বছর পূর্ণ হলেও বড় ধরনের কোনো পরিবর্তন দৃশ্যমান হয়নি। নগরবাসীর প্রত্যাশার ঝুড়িতে এখনো শুধু আশার বাণী জমা।

অভিজাত এলাকা থেকে শুরু করে গুলশানের অলিগলিতে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির দৈনন্দিন দুর্ভোগ চোখে পড়ে। জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ করা হচ্ছে বলা হলেও বর্ষায় সুফল পাওয়া নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। রামপুরা ব্রিজ থেকে শুরু করে কুড়িল বিশ্বরোড পর্যন্ত প্রধান সড়কে একাধিক ময়লার ডাস্টবিনের একটিও সরানো হয়নি।

মশক নিধন নিয়ে কার্যক্রম আগের মতোই। ফরমালিনমুক্ত খাবার নিশ্চিত করতে উদ্যোগ গ্রহণ করার কথা থাকলেও তা বাস্তবায়ন করা হয়নি। ফুটপাতে জনসাধারণের চলাচল নির্বিঘ্ন করার ক্ষেত্রে আশানুরূপ ভূমিকা নেই। সামাজিক নিরাপত্তাসহ মাদকবিরোধী কোনো কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়নি। সাতরাস্তা থেকে গাজীপুর পর্যন্ত ২২টি স্থানে ইউলুপ নির্মাণের উদ্যোগও গতি পায়নি। পরিকল্পিত নগর গঠনে মেয়রদের কোনো পরিকল্পনার কথাই শোনা যায়নি। তেমনি করপোরেশনের চিহ্নিত দুর্নীতিবাজদের ব্যাপারে কোনো দাপ্তরিক ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। ডিএনসিসির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাদের দৈনন্দিন কার্যক্রম চালানো জন্য এখনও স্থায়ী কোনো ব্যবস্থা করতে পারেননি মেয়র আনিসুল হক।

এতকিছুর পরও এই দুই মেয়রের ওপর ভরসা হারাচ্ছেন না নগরবাসী। তাদের ধারনা, পুরো কাজ বুঝে নিয়ে পুরোপুরি বাস্তবায়নে এক বছর যথেষ্ট সময় নয়। সময় ফুরিয়ে যায়নি। সিদ্ধেশ্বরীর বাসিন্দা মোহাম্মদ সালাউদ্দিন বলেন, কিছু কাজ চোখে পড়েছে। আশা করছি, আমাদের দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকন আগামীতে বিদ্যমান সমস্যার সমাধান করবেন খুব শিগগিরই।

বেগুনবাড়ির বাসিন্দা মাঈনুদ্দীন বলেন, তেজগাঁওয়ের অন্যতম বড় সমস্যা ছিল ট্রাকস্ট্যান্ড। সেটি সরানো হয়েছে। এটা অনেক বড় সফলতা মেয়র আনিসুল হকের। তাছাড়া নগরীর বিভিন্ন ফুটওভারব্রিজ চলাচলের উপযোগী ও সবুজ পরিবেশে গড়ে তোলা হচ্ছে। এক বছরে এত কাজ করা যায় নাকি? আশা করি আগামী দিনগুলোতে নির্বাচনের আগে মেয়রদের দেয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে নিজেরা আরো উদ্যোগী হবেন।

এক বছরের নিজের কাজের মূল্যায়ন করতে গিয়ে ডিএনসিসির মেয়র আনিসুল হক বলেন, নিশ্চিন্ত থাকুন ঢাকা বদলাবেই। তবে আমি সবার সঙ্গে সুর মিলিয়ে বলতে চাই, ঢাকা কোনো পরিকল্পিত শহর নয়। কারণ হলো, যে সময়ে ঢাকার পরিকল্পনা করা হয়েছিল, আজকে বিপুল জনসংখ্যা নিয়ে সেই পরিকল্পনা কোনোভাবেই সমন্বয় করা যাচ্ছে না। বর্জ্য ফেলার জায়গা জানা নেই। রাস্তায় কত গাড়ি চলবে? ফুটপাতে কত মানুষ হাঁটবে তা চিন্তা করা হয়নি আগে। ড্রেনেজ সিস্টেম পরিকল্পিতভাবে করা হয়নি। তবে হতাশ হওয়ার কারণ নেই। আমরা এখন পরিকল্পনা করার চেয়ে প্রতিদিনের সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছি। 

তিনি বলেন, এক বছরে অনেক অর্জন হয়েছে তা বলব না। তবে কিছু অর্জন তো হয়েছে। ক্লিন ঢাকা গড়তে বিপুলসংখ্যক বিলবোর্ড সরিয়েছি। এখানে অনেক প্রভাবশালী লোকজন জড়িত ছিল। আমরা পাঁচ মাসের মধ্যে একসঙ্গে ২০ হাজার বিলবোর্ড কেটে ফেলেছি। ক্লিন ঢাকা গড়ার জন্য ৭২টি সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন করার কাজ শুরু করেছি। এর মধ্যে প্রায় ৫৫টি কাজ শেষ হয়ে। আগামী কয়েক মাস পর রাস্তায় কোনো ময়লা থাকবে না।

এ ছাড়া গাবতলী ও তেজগাঁওয়ে পাবলিক টয়লেট করা হয়েছে। এ ধরনের অত্যাধুনিক ১০০ টয়লেট নির্মাণ করা হবে। সবার সহযোগিতায় যানজট কমাতে অনেক কঠিন কাজ করেছি। তেজগাঁও ট্রাক টার্মিনাল, কারওয়ান বাজারের ভেতরের রাস্তা, মহাখালী বাসস্ট্যান্ড, গাবতলী, কল্যাণপুর, মোহাম্মদপুর, মিরপুর-১২, আব্দুল্লাপুর, জাপান বাংলাদেশ কলোনি যাতায়াতের সুব্যবস্থা করেছি। এগুলো কেউ স্বপ্নেও চিন্তা করেনি। যে গাবতলী দিয়ে দেড়-দুই ঘণ্টা সময় ব্যয় হতো, এখন পাঁচ মিনিটে যাতায়াত করা যায়। এ ছাড়া আমরা যে ইউলুপ করছি তা বাস্তবায়িত হলে উত্তর করপোরেশন এলাকার যানজট অনেক কমে আসবে। 

আনিসুল হক বলেন, ডিএনসিসি এলাকায় তিন বছর পর আর কোনো রাস্তা মেরামতের জন্য খুঁজে পাওয়া যাবে না। গত এক বছরে ১১৮ কিলোমিটার রাস্তা তৈরি করেছি। ৪৫১টি রাস্তায় গত এক বছরে উন্নয়নের কাজ হয়েছে। ১৪৮ কিলোমিটার ড্রেন সংস্কার হয়েছে। ৬৮ কিলোমিটার ফুটপাত উন্নয়নের কাজ হয়েছে। উত্তর ঢাকায় ৬০০টি সিসি ক্যামেরা বসানো হবে। ক্যামেরার জন্য বন্ধুবান্ধব অর্থ দিয়েছে। এরই মধ্যে ৫০০ ক্যামেরা বসে গেছে। আমি মনে করি, মেয়রকে আরো কিছু ক্ষমতা দেয়া উচিত সমন্বয়ের জন্য। যেমন মেয়রকে ১০০ পুলিশ, ওয়াসা, রাজউক, ডেসকো, সড়ক-জনপথের ওপর মেয়রের প্রশাসনিক কিছু ক্ষমতা দেয়া প্রয়োজন। কেননা, যে যার মতো রাজধানীর সড়ক খোঁড়াখুঁড়ি করে রাখছে। এভাবে আর কাজ করতে ঠিক হবে না।

ডিএসসিসির মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, ডিএসসিসির ৫০০ কোটি টাকার ঋণের বোঝা আমাদের কাঁধে রয়েছে। কিছু ঋণ শোধ করেছি। কিন্তু কাজ করতে গেলে আবার তা বেড়ে যাচ্ছে। সবচেয়ে বড় কথা হলো উত্তর ও দক্ষিণ যে বিভাজনটা হয়েছে তা ‘অসম বিভাজন’। অবিভক্ত সিটি করপোরেশনের ৬৫ শতাংশ রাজস্ব আসত ডিএনসিসি এলাকা থেকে। আর সেখানে খরচ হতো ৩৫ শতাংশ অর্থ। অন্যদিকে ৩৫ শতাংশ আসত ডিএসসিসি এলাকা থেকে; আর এখানে খরচ হতো ৬৫ শতাংশ অর্থ। তাহলে দেখেন কিভাবে একটি ‘অসম বিভাজন’ করা হয়েছে। ডিএসসিসি এলাকায় নাগরিক সমস্যা অনেক। এসব সমস্যা তো এক দিনে সমাধান সম্ভব নয়।

সাঈদ খোকন বলেন, জলাবদ্ধতার মূল সংকট শান্তিনগর ও কলাবাগানকেন্দ্রিক। আগামী বর্ষায় যাতে ৮০ শতাংশ জলাবদ্ধতা কমানো যায় সে জন্য কাজ করে যাচ্ছি। ড্রেনগুলো পরিষ্কার করেছি; ওয়াসার সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ এগিয়ে চলছে। চলতি মাসেই শান্তিনগরে একটি পাম্প বসছে। এরপর আর সমস্যা থাকার কথা না। হকারদের পুনর্বাসন না করে ফুটপাত দখলমুক্ত করা সম্ভব নয়। এই মুহূর্তে ফুটপাতে উচ্ছেদের পক্ষে আমাদের অবস্থান নেই।

এরই মধ্যে পাঁচ হাজার ৭০০ ছোট ডাস্টবিন বসানো হচ্ছে। পরিচ্ছন্ন নগরী গড়তে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আধুনিকীকরণের পাশাপাশি সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন (এসটিএস) নিয়ে কাজ করছি। ডিএসসিসি এরই মধ্যে প্রায় ৩০০ ছোট-বড় রাস্তা উন্নয়নের কাজ শুরু করেছে।

তিনি আরও বলেন, দুর্নীতির ব্যাপারে কোনো আপস নেই। সম্প্রতি ১৬ জনকে সাময়িক বরখাস্ত করেছি। করপোরেশনে অনিয়মের বিষয়টি দীর্ঘদিনের বিষয়। এখন দুর্নীতি একটানে শূন্যে নামিয়ে আনতে গেলে উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় প্রভাব পড়তে পারে। আমি নাগরিকসেবার মান বাড়াতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হাজিরা ডিজিটালাইজ করেছি। এ ছাড়া দরপত্রে স্বচ্ছতা আনতে আমরা শতভাগ ই-টেন্ডারিং ব্যবস্থা চালু করেছি।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/আমা

Wordbridge School
Link copied!