• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
পূর্ব নির্ধারিত বৈঠক স্থগিত

নতুন মিত্রের প্রভাবে ২০ দলে ক্ষোভ


বিশেষ প্রতিনিধি অক্টোবর ১৩, ২০১৮, ১০:৫৪ পিএম
নতুন মিত্রের প্রভাবে ২০ দলে ক্ষোভ

ঢাকা : সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ পাঁচ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে বিকল্পধারা বাংলাদেশের সভাপতি অধ্যাপক ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী (বি. চৌধুরী) নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্ট, গণফোরাম সভাপতি ডা. কামাল হোসেন নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া ও বিএনপি সমন্বয়ে গঠিত ‘বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য’ নিয়ে ২০ দলে ‘বিষবাষ্প’ তৈরি হয়েছে।

দীর্ঘদিনের পুরনো মিত্রদের পাশ কাটিয়ে বিএনপির নতুন মিত্র খোঁজার বিষয়টি শুরু থেকেই ভালোভাবে নিতে পারেননি ২০ দলীয় জোটভুক্ত শরিক দলের নেতারা। এ নিয়ে জোটের অন্যতম শরিক এলডিপি ও বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির শীর্ষ নেতারা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ফোরাম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

এদিকে, বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের পূর্ব নির্ধারিত বৈঠক স্থগিত করা হয়েছে। তবে ঠিক কী কারণে এ বৈঠক স্থগিত করা হয়েছে, তা সুনির্দিষ্টভাবে জানাতে পারেননি জোটের শরিক নেতারা।

শনিবার (১৩ অক্টোবর) সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। জোটের শরিক ন্যাপ বাংলাদেশের মহাসচিব এম গোলাম মোস্তফা গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আজ (শনিবার) সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় ২০ দলীয় জোটের পূর্ব নির্ধারিত যে বৈঠক ছিল, তা স্থগিত করা হয়েছে।’

কী কারণে বৈঠক স্থগিত হলো তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘স্থগিতের কারণ সম্পর্কে বিএনপির পক্ষ থেকে কোনো কিছু বলা হয়নি। তবে বিশেষ কোনো কারণ হতে পারে।’ বিএনপির পক্ষ থেকে পরবর্তীতে বৈঠকের তারিখ জানানো হবে বলে তিনি জানান।

অন্যদিকে, গত ২২ সেপ্টেম্বর ড. কামাল হোসেন নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার নাগরিক সমাবেশে  দাওয়াত পেয়েও ২০ দলীয় জোটের ছয়টি নিবন্ধিত দল সেখানে যায়নি। ওই সমাবেশে হাতে হাতে রেখে বিএনপি, যুক্তফ্রন্ট ও জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতারা হাতে হাত রেখে এক সঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকার করেন। সেখানে ২০ দলীয় জোটের শরিক দল বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান আন্দালিভ রহমান পার্থ গেলেও বক্তৃতা না দিয়েই ফিরে আসেন।

জোটের অন্য শরিক জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহাসচিব নূর হোসাইন কাসেমী, জাগপার সাধারণ সম্পাদক খন্দকার লুৎফর রহমান, বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমেদ আব্দুল কাদের সমাবেশে উপস্থিত থাকলেও বক্তব্যর সুযোগ দেওয়া হয়নি তাদেরকে।

এরপর গত ২০ দিনে চক্রাকারে ড. কামাল হোসেন, বি. চৌধুরী, আ স ম আব্দুর রব, মাহমুদুর রহমান মান্না ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের বাসায় দফায় দফায় মিটিংয়ের মাধ্যমে ‘বৃহত্তর ঐক্য’ প্রক্রিয়ার রূপরেখা চ‚ড়ান্ত করা হয়েছে। এসব বৈঠকে লিবারেল ডেমোক্রেটি পার্টির (এলডিপি) চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) ড. অলি আহমদ বীর বিক্রম, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহম্মদ ইবরাহিম, বাংলাদেশ ন্যাপের চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গাণিসহ ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতাদের ডাকা হয়নি।

এসব কারণে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য নিয়ে ড. অলি আহমদকে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে। সম্প্রতি এলডিপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক যোগদান অনুষ্ঠানে বিএনপির উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘জনভিত্তিহীন রাজনৈতিক দল নিয়ে জাতীয় ঐক্য করে কোনো লাভ নেই। এ ব্যাপারে বিএনপিকে আরো কৌশলী হতে হবে।’

কয়েকদিন আগে একই স্থানে আয়োজিত আরেকটি অনুষ্ঠানে যুক্তফ্রন্টের আহ্বায়ক সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে তুলোধুনা করেন কর্নেল (অব.) ড. অলি আহমদ বীর বিক্রম।

সূত্র মতে, তার অনাগ্রহের কারণেই ২২ সেপ্টেম্বর মহানগর নাট্যমঞ্চে আয়োজিত ড. কামাল হোসেনের নাগরিক সমাবেশে এলডিপির মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ যেতে চেয়েও যেতে পারেননি। তার অনুসারী বিএনপি জোটের অন্য শরিকরাও যায়নি ড. কামাল হোসেনের সমাবেশে।

অবশ্য শুক্রবার রাতে ড. কর্লেন (অব.) অলি আহমদ বীর বিক্রম বলেন, ‘বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য বিএনপির সঙ্গে হচ্ছে। আর বিএনপি হচ্ছে ২০ দলীয় জোটের প্রধান পার্টনার। সে  কারণে এই জোটের প্রতি আমাদের শুভকামনা থাকবে সবসময়।’

২০ দলীয় জোটের আরেক শরিক কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বলেন, ‘গত ২৭ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত ২০ দলীয় জোটের বৈঠকে আমরা সবাই মিলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামকে দায়িত্ব দিয়েছি বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য’র বিষয়টি এগিয়ে নেওয়ার জন্য। এখন শুনতে পারছি মাহমুদুর রহমান মান্না নাকি বলেছেন, ঐক্য শুধু বিএনপির সঙ্গে হবে, ২০ দলের সঙ্গে নয়। এমন পরিস্তিতিতে আমাদের আর কী বলার আছে?’

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ২০ দলীয় জোটে থাকা ছোট ছোট দলগুলো এখনই তাদের ক্ষোভটাকে বাইরে আনতে চায় না। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন তারা। সময় সুযোগ বুঝে তারা তাদের অবস্থান পরিষ্কার করবেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ২০ দলীয় জোটের একটি শরিক দলের চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা শুধু দেখছি। দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত বন্ধু রেখে নির্বাচনের সময় উড়ে এসে জুড়ে বসা সুযোগ সন্ধানীদের নিয়ে বিএনপি কতদূর এগোয়- সেটাই বসে বসে দেখছি। সময় হলে সবকিছুর জবাব দেব।’

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!