• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নাগরিকত্ব আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার


নিজস্ব প্রতিবেদক জানুয়ারি ২৩, ২০১৬, ০৯:৩১ পিএম
নাগরিকত্ব আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার

বিশেষ প্রতিনিধি
সরকার নাগরিকত্ব আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে। তবে সংশোধিত আইনে বাংলাদেশের কোনো নাগরিক সার্কভুক্ত দেশগুলোতে দ্বৈত নাগরিকত্ব নিতে পারবে না। এমনকি প্রতিবেশী মিয়ানমারের নাগরিকত্বও নেয়া যাবে না। অবশ্য ইউরোপ, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশীরা দ্বৈত নাগরিকত্ব নিতে পারবে। মূলত ৭ ক্যাটাগরিতে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পাওয়া যাবে এমন বিধান রেখে নতুন করে তৈরি করা বাংলাদেশ নাগরিকত্ব আইনের বিভিন্ন দিক খতিয়ে দেখে খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। যা শিগগিরই মন্ত্রিসভার বৈঠকে ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বাংলাদেশ নাগরিকত্ব আইন (অস্থায়ী বিধান) অধ্যাদেশ ১৯৭২ এবং আইন কমিশনের ২০০৫ ও ২০১২ সালে দেয়া পরামর্শের আলোকে নাগরিকত্বের খসড়া আইনটি তৈরি করা হয়েছে। নতুন ওই আইনে ৭টি ক্যাটাগরিতে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পাওয়া যাবে। যার মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ বা বাংলাদেশের কোনো দূতাবাস বা জাহাজ কিংবা বিমানে জন্মগ্রহণ, বাংলাদেশি নাগরিকদের সন্তান ও তাদের সন্তান, দ্বৈত নাগরিকত্ব, অর্জিত নাগরিকত্ব, বৈবাহিক সূত্র, নতুন সংযুক্ত ভূখ-ের অধিবাসী এবং বাংলাদেশে স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ।
সূত্র জানায়, নাগরিকত্ব আইনের খসড়ায় জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের বিষয়ে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের কোনো দূতাবাস বা মিশনের কার্যালয়ে বাংলাদেশি নাগরিকদের সন্তান জন্মানোর ২ বছরের মধ্যে ওই দূতাবাস বা মিশনের কার্যালয়ে নাম নিবন্ধন করতে হবে। আর তা নাহলে ওই সন্তান জন্মগ্রহণ সূত্রে বাংলাদেশের নাগরিক বলে বিবেচ্য হবে না। কূটনৈতিক বা বিভিন্ন বৈদেশিক মিশনে বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশি নাগরিকদের সন্তান এদেশে জন্ম নিলেও বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে গণ্য করা হবে না আর দ্বৈত নাগরিকত্বের বিষয়ে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের কোনো নাগরিক অন্যদেশের নাগরিকত্ব লাভ করলে তার এদেশের নাগরিকত্ব বাতিল হবে না। তিনি দ্বৈত নাগরিক হিসেবে বিবেচ্য হবেন। তবে সার্কভুক্ত দেশ ও মিয়ানমারের ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য হবে না। সেজন্য ওই ব্যক্তিকে দ্বৈত নাগরিকত্বের জন্য যথাযথ পদ্ধতি মেনে লিখিত আবেদন করতে হবে। তাছাড়া খসড়ায় বৈবাহিক সূত্রে নাগরিকত্ব লাভের আইন ও পদ্ধতি সম্পর্কে বলা হয়- যেসব ব্যক্তি বাংলাদেশি কোনো নাগরিককে বিয়ে করে বসবাসের অনুমতি নিয়েছেন বা দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছেন তাদের বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে নথিবদ্ধ করা হবে। তবে এক্ষেত্রে আইনানুগভাবে বসবাসকারীদের আবেদন বিবেচনা করা হবে। কিন্তু ওই শ্রেণীতে নাগরিকত্ব লাভের ৫ বছরের মধ্যে যেকোনো দেশে ২ বছরের বেশি সাজা পেলে বা টানা ১০ বছরের বেশি বাংলাদেশের বাইরে অবস্থান করলে তাঁর নাগরিকত্ব বাতিল করা হবে। আর বয়সের বিষয়ে খসড়া আইনটিতে বলা হয়- ১৮ বছরের নিচে যাদের বয়স তাদের নাবালক হিসেবে গণ্য করা হবে। তার বেশি বয়সীদের প্রাপ্তবয়স্ক বা সক্ষম হিসেবে বিবেচনা করা হবে। তাছাড়া দেশের উন্নয়ন, বিজ্ঞান, দর্শন, শিল্প, সাহিত্য, শান্তি ও মানব উন্নয়নে অবদান রাখা ব্যক্তিদের বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদানের ক্ষমতা সরকারের হাতে থাকবে।
সূত্র আরো জানায়,খসড়া নাগরিকত্ব আইন অনুযায়ী যেসব ব্যক্তি সামরিক বাহিনী বা আধা-সামরিক বাহিনীতে যোগ দিয়ে স্বাধীনতা যুদ্ধে বা অন্য কোনো যুদ্ধে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে বা করছে, বাংলাদেশে তাদের নাগরিকত্ব লাভের জন্য তাদের করা আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হবে। এমনকি কোনো ব্যক্তি বাংলাদেশের স্বাধীনতা স্বীকার না করলে তার আবেদনও প্রত্যাখ্যান করা হবে। আর নাগরিকত্ব লাভের আবেদন করার বিষয়ে খসড়ায় বলা হয়েছে- বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পেতে হলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে যথাযথ নিয়মকানুন অনুসরণ করে আবেদন করতে হবে। কর্তৃপক্ষ আবেদনে প্রদত্ত বিভিন্ন তথ্য ও উপাত্তের সত্যতা যাচাই-বাছাই ও বিচার-বিবেচনা করে নাগরিক হিসেবে নথিবদ্ধ করবে বা নাগরিকত্বের সনদ প্রদান করবে। আবেদন যাচাই-বাছাইয়ের সময় আবেদনকারী টানা ৬ মাস বিদেশে থাকতে পারবে না। এক্ষেত্রে ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো ভুল বা অসম্পূর্ণ কিংবা কোনো তথ্য গোপন করলে ওই ব্যক্তিকে ২ বছরের কারাদ- এবং ৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হবে। এ ধরনের ভুল ফের করলে ওই শাস্তির পরিমাণ দ্বিগুণ হবে। তবে কিছু বিদেশি নাগরিক বাংলাদেশিদের বিয়ে করে নাগরিকত্ব লাভের বিষয়ে ন্যায়বিচার চাইতে হাইকোর্টে আবেদন করেন। এ আইন হওয়ার পর ওই বিষয়ে বিভিন্ন বাধা ও জটিলতার অবসান হবে।
নতুন নাগরিকত্ব আইন প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দিন বলেন, আগের বিধি-বিধানে বাংলাদেশিদের ক্ষেত্রে সার্কভুক্ত দেশসহ মিয়ানমারে দ্বৈত নাগরিকত্বের বিষয়ে কোনো বিধান ছিল না। এ বিধান না থাকার সুযোগে কেউ যাতে সার্কভুক্ত দেশ ও মিয়ানমারে দ্বৈত নাগরিকত্ব দাবি করতে না পারে সেজন্যই আইনে সেটি যোগ করা হচ্ছে।

সোনালীনিউজ/এমএইউ

Wordbridge School
Link copied!