• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নার্স আন্দোলন : রক্তাক্ত মুখচ্ছবিতে অধিকারের আর্তনাদ


নিজস্ব প্রতিবেদক জুন ৬, ২০১৬, ০৪:৫৩ পিএম
নার্স আন্দোলন : রক্তাক্ত মুখচ্ছবিতে অধিকারের আর্তনাদ

যেই মানুষগুলোর সহায়তায় আমাদের মা-বোনদের কোলে ছোট্ট শিশুগুলি হেসেখেলে বেড়াচ্ছে, সে মানুষের গর্ভপাত হলো রাস্তায়, তাও আবার পুলিশের লাথিতে। আমরা একটু রক্তাক্ত হলেই যেই মানুষগুলো স্যাভলন আর তুলা হাতে নিয়ে মাতৃস্নেহে, ভগ্নিস্নেহের পরম মমতায় আমাদের ব্যথা-কষ্ট দূর করে দেন, সেই মানুষগুলোর রক্তমাথা মুখ দেখে আমাদের অন্তরাত্মা কি একবারও জানতে চায় না-ওদের অপরাধ কি?

নিজেদের সন্তানকে অন্যের কোলে তুলে যে নারীরা রাতের পর রাত হাসপাতালের কক্ষে রোগীর শিউরে দাঁড়িয়ে থেকে সেবা করে, সেই তারা অধিকার আদায়ের আর্তনাদ নিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ লাভের চেষ্টা করেছিল, মাননীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বাসার সামনে অবস্থান করেছিল-এটাই কি অপরাধ? পরীক্ষার ভিত্তিতে নয়, জেষ্ঠ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগের দাবীই ছিল তাদের আন্দোলনের সূত্রপাত।

রাষ্ট্রের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আন্দোলন করাটা তাদের অপরাধ বটে কিন্তু সেটার জন্য নারীর ওপর বেধম লাঠিচার্জ, লাথিতে গর্ভজাত সন্তান নষ্ট করে ফেলা কিংবা কপাল ফাটিয়ে রক্তের ধারা বইয়ে দেয়ার মত অপরাধ বোধহয় তারা করেনি। তাছাড়া রাষ্ট্র তাদের দাবি, পূরণের প্রতিশ্রুতি দেয়ার পরেও যখন তারা অধিকার ফিরে পাওয়ার নিশ্চয়তা পায়নি তখন তাদের আন্দোলন যৌক্তিক দাবিতে রূপ নেয়।

গোটা এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশের চিকিৎসা সেবার মান প্রশংসিত। যাদের সহায়তায় দেশ এমন প্রশংসা কুড়িয়েছে, তার সিংহভাগ অবদান আমাদের গর্বিত নার্স সম্প্রদায়ের। অন্যান্য পেশাজীবীদের চেয়ে এ দেশের নার্সরা অধিক দক্ষ। ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল, মাদার তেরেসা কিংবা বেগম রোকেয়া সাখাওয়াৎ হোসেনের উত্তরসূরী হিসেবে এরা প্রত্যেকেই ‘লাইট উহথ দ্য ল্যাম্প’ উপাধিতে ভূষিত হওয়ার যোগ্য। কেননা তারা কর্মক্ষেত্রে শুধু সেবাই নয়, মানবতাবোধ থেকে আর্তমানবতার সেবায় নিমগ্ন প্রতিনিয়ত।

অন্দোলনরত নার্সদের দাবি একেবারে অযৌক্তিক নয়। কেননা স্বাস্থ্যমন্ত্রী এ আন্দোলনের শুরুতে তাদের দাবি পূরণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তারপরেও অবস্থান বিবেচনায় নার্সদের সাথে আলোচনার মাধ্যমে সংঘাত এড়ানোর চেষ্টা করলে সেটা উভয়পক্ষের জন্য কল্যাণ হত। আন্দোলনরত নার্সদের ওপর লাঠিচার্জ, লাথিতে গর্ভপাত কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

পুলিশ যেমন জনগণের সেবক। ঠিক একই অর্থে নার্সও মানুষের সেবক। অথচ নার্সদের দমনে যেভাবে পুলিশকে শাসকের ভূমিকায় ব্যবহার করা হলো। সে কাজটি বোধহয় যৌক্তিক হয়নি। নার্সদের অবস্থান কর্মসূচির পর্যবেক্ষণ ও শৃঙ্খলা বজায়ের জন্য পুলিশকে শান্তিপূর্ণভাবে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ ও ব্যবহার করা যেত। যারা জনগণের বন্ধু তথা পুলিশকে জনগণ দমাতে ব্যবহার করেছেন তারা কাজটা কতটুকু ভেবে করেছেন তার ফয়সালা তারাই করবেন। কিন্তু পুলিশের আচরণে আরও দায়িত্বশীলতা দেখানোর প্রয়োজনীয়তা সাধারণ মানুষের দাবি হয়ে উঠেছে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা

Wordbridge School
Link copied!