• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নায়করাজ রাজ্জাকের জন্ম দিন আজ


নিজস্ব প্রতিবেদক জানুয়ারি ২৩, ২০১৬, ১২:৫১ পিএম
নায়করাজ রাজ্জাকের জন্ম দিন আজ

বিনোদন রিপোর্টার
অভিনয়ের রাজা রাজার মতই আছেন। কাজে এখনো দাপট দেখিয়ে যাচ্ছেন। বৃদ্ধ হলেই যে জীবন শেষ হয়ে যায় না সেটা নাকরাজকে দেখলেই বোঝা যায়। অভিনয়ের সব বয়সে সেরা জায়গাটাতেই কাজ করেছেন, পঁচাত্তরেও তাই করছেন।

বাংলা চলচ্চিত্রে সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ শুরু করেন নায়করাজ রাজ্জাক। দু্-একটি ছবিতে পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয়ের পর জহির রায়হানের ‘বেহুলা’য় পূর্ণাঙ্গ নায়ক হিসেবে সুপারহিট। এরপর বাংলা চলচ্চিত্রের এ রোমান্টিক নায়কের আর পেছন ফিরতে হয়নি। নিজে যেমন এগিয়েছেন, পথ দেখিয়েছেন চলচ্চিত্র শিল্পকেও।

জন্মদিনের আয়োজন : বাংলা চলচ্চিত্রের জীবন্ত কিংবদন্তি নায়করাজ রাজ্জাকের ৭৫তম জন্মদিন ২৩ জানুয়ারি । জমকালো আয়োজনের মধ্য দিয়ে পালিত হচ্ছে ছয়শরও বেশি চলচ্চিত্রে অভিনয় করা এ নায়কের জন্মদিন। এ উপলক্ষে এফডিসিতে বসতে যাচ্ছে চলচ্চিত্র শিল্পী-পরিচালক-প্রযোজকদের মিলনমেলা। দীর্ঘদিনের সহকর্মীরা কেক কাটবেন তাঁদের শ্রদ্ধেয় মানুষটির সঙ্গে। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি অনুষ্ঠানটির আয়োজন করছে।

বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির মহাসচিব মুশফিকুর রহমান গুলজার বলেন, ‘আগামীকাল বেলা ২টায় এফডিসিতে আমরা সবাই মিলে কেক কাটব। সেখানে আমাদের শিল্পী-কলাকুশলী প্রায় সবাই উপস্থিত হবেন। যেহেতু রাজ্জাক ভাই বাংলাদেশ পরিচালক সমিতির আজীবন সদস্য, তাই আমরাই এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করছি। চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট সবগুলো সংগঠন এতে অংশ নিচ্ছে এবং এই আয়োজনকে সার্থক করার জন্য একযোগে কাজ করছে। আমাদের সৌভাগ্য যে আমরা রাজ্জাক ভাইয়ের মতো এমন একজন শিল্পী পেয়েছিলাম।’

এ বিষয়ে নায়করাজ বলেন, বয়স হয়েছে, আগের মতো আর অনেক কিছুই পারি না। অনেকেই অনেক অনুষ্ঠানে আমাকে নিয়ে যেতে চায়, কিন্তু সেটা হয়েও ওঠে না। সকাল থেকে ২টা পর্যন্ত চ্যানেল আইয়ে থাকব। ২টা থেকে ৪টা পর্যন্ত থাকব এফডিসিতে। জীবনের সবচেয়ে সুন্দর সময়টা যেখানে কেটেছে। যেখানে আমার প্রাণের মানুষগুলোকে একসঙ্গে পাব। সেখান থেকে রাজলক্ষ্মী কমপ্লেক্সে সন্ধ্যায় আরেকটি অনুষ্ঠানে থাকব। সবাইকে ধন্যবাদ, মানুষের ভালোবাসাই আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছে।  

নায়করাজের ছোট ছেলে সম্রাট বলেন, যেহেতু আব্বাকে নিয়ে সকাল থেকেই বাইরে অনুষ্ঠান আছে, তাই রাতে বাসায় বিশেষ কোনো আয়োজন থাকছে না। পারিবারিকভাবে আমরা হয়তো কেক কাটব। সবাই দোয়া করবেন আব্বা যেন ভালো থাকেন।

অভিনয়ে : স্কুলে পড়ার সময় ‘বিদ্রোহ’ নাটক আর কলেজ জীবনে ‘রতন লাল বাঙ্গালি’ ছায়াছবিতে তার প্রথম অভিনয়। ১৯৫৯ সালে বোম্বের ফিল্মালয়ে ভর্তি হন। এরপর কলকাতার ‘পংকতিলক’ এবং ‘শিলালিপি’ চলচ্চিত্রে অভিনয়।

ঢাকার চলচ্চিত্রে : ঢাকায় এসে যোগাযোগ করেন ‘মুখ ও মুখোশ’-এর পরিচালক আবদুল জব্বার খানের সঙ্গে। তিনি রাজ্জাককে ওই সময়ের বিখ্যাত চলচ্চিত্র প্রযোজনা সংস্থা ইকবাল ফিল্মসে চাকরি নিয়ে দেন। পরিচালক কামাল আহমেদের সহকারী পরিচালক হিসেবে রাজ্জাকের প্রথম ছবি ‘উজালা’। সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি ‘১৩ নং ফেকু ওস্তাগার লেন’, ‘আখেরী টেনশন’ ও ‘ডাক বাবু’ ছবিতে তিনটি ছোট ছোট চরিত্রে অভিনয় করেন রাজ্জাক।

বরেণ্য চলচ্চিত্রকার জহির রায়হানের সহকারী হিসেবেও কাজ করেন তিনি। জহির রায়হানই রাজ্জাককে ‘বেহুলা’ ছবির পূর্ণাঙ্গ নায়কের চরিত্রে অভিনয় করান। ‘বেহুলা’র নাম ভূমিকায় অভিনয় করেন সুচন্দা। ১৯৬৬ সালে মুক্তি পায় ‘বেহুলা’।

ছবিটি সুপারহিট হলে রাজ্জাক তার স্বপ্ন পূরণের সুযোগ পান। ঢাকার চলচ্চিত্র পায় একজন রোমান্টিক নায়ক, যিনি পরবর্তীকালে বাংলাদেশের সিনেমা শিল্পের ত্রাণকর্তা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন।

নায়করাজ : তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র অবুঝ মন (শাবানা), চোর (শবনম), নাচের পুতুল (শবনম), নীল আকাশের নিচে (কবরী), বড় ভাল লোক ছিল, বেঈমান (কবরী), ময়নামতি (কবরী), মনের মতো মন (কবরী), রংবাজ (কবরী), লাইলি মজনু (ববিতা), সঙ্গীতা (কবরী), জীবন থেকে নেয়া (কবরী) ইত্যাদি।

জাতীয় পুরস্কার ৫ বার : এ পর্যন্ত মোট পাঁচবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন রাজ্জাক। ছবিগুলো হলো, কি যে করি (১৯৭৬), অশিক্ষিত (১৯৭৮), বড় ভালো লোক ছিল (১৯৮২), চন্দ্রনাথ (১৯৮৪) ও যোগাযোগ (১৯৮৮)।

প্রযোজক-পরিচালক : অভিনয়ের পাশাপাশি নায়ক রাজ রাজ্জাক ১৯৭৬ সালে ‘আশঙ্কা’ ছবির মাধ্যমে চলচ্চিত্র প্রযোজক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। গড়ে তোলেন প্রযোজনা সংস্থা এমএস প্রোডাকশন। এ পর্যন্ত ২০টি চলচ্চিত্র প্রযোজনা এবং পরিচালনা করেছেন প্রায় ১৬টি চলচ্চিত্র। সর্বশেষ তিনি 'আয়না কাহিনী' ছবিটি নির্মাণ করেন।

পরিবার : ১৯৪২ সালের ২৩ জানুয়ারি কলকাতার টালিগঞ্জে নায়ক রাজ রাজ্জাকের জন্ম। প্রকৃত নাম আবদুর রাজ্জাক। টালিগঞ্জের মোল্লা বাড়িতে আকবর হোসেন ও মিনারুন্নেসার কোলে জন্ম তার। মাত্র ১৯ বছর বয়সে ১৯৬২ সালে বিয়ে করেন লক্ষীকে। ১৯৬৪ সালে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা শুরু হলে পরিবার নিয়ে ঢাকায় আসেন রাজ্জাক। সংসারে তিন পুত্র এবং এক কন্যা সন্তান। মেয়ে থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। দুই পুত্র বাপ্পারাজ এবং সম্রাট চিত্রনায়ক।
সোনালীনিউজ/ঢাকা

Wordbridge School
Link copied!