• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানি, মূসক মওকুফ ও প্রণোদনা বাড়াচ্ছে সরকার


সোনালীনিউজ রিপোর্ট মে ১১, ২০১৬, ০১:০২ পিএম
পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানি, মূসক মওকুফ ও প্রণোদনা বাড়াচ্ছে সরকার

সব ধরনের পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানিকে উৎসাহিত করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সে লক্ষ্যে দেশে পাট ও পাটজাত পণ্যের লাইসেন্স মঞ্জুরি ও নবায়ন ফির বিপরীতে উৎসে মূল্য সংযোজন কর (মূসক) প্রত্যাহার করা হচ্ছে। এ খাতে মূসক ছিল ১৫ শতাংশ। 

পাশাপাশি পাট ক্রয়ে জোগানদার সেবার ওপর নির্ধারিত ৪ শতাংশ হারে উৎস মূসক কর্তনের প্রথাও বিলোপ করা হচ্ছে। তাছাড়া সব ধরনের পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানিতে ২০ শতাংশ হারে প্রণোদনা দেবে সরকার। শিল্পপণ্যের পরিবর্তে পাটপণ্যকে কৃষিপণ্য হিসেবে ঘোষণার মাধ্যমে এসব সুবিধাসংবলিত একটি প্রজ্ঞাপন চলতি মাসেই জারি হচ্ছে বলে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশে পাট ও পাটজাত পণ্যের বাজার সম্প্রসারণ ও রফতানি প্রতিযোগিতায় সক্ষমতা বাড়াতে এই খাত-সংশ্লিষ্টদের কিছু বিশেষ সুবিধা দিতেই নিয়েছে সরকার। সাধারণ রফতানিমুখী শিল্পপণ্য রফতানিতে নগদ সহায়তা পেয়ে থাকে। বর্তমানে পাট শিল্পপণ্য হিসেবে স্বীকৃত হওয়ায় একই সুবিধা পাচ্ছেন পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানিকারকরা।

বর্তমানে বহুমুখী পাটজাত পণ্য রফতানিতে ১০ শতাংশ, সুতা রফতানিতে ৫ শতাংশ ও পাটের বস্তা রফতানিতে সাড়ে ৭ শতাংশ নগদ সহায়তা পান রফতানিকারকরা। প্রজ্ঞাপন জারি হলে প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্য হিসেবে রফতানিকারকরা ২০ শতাংশ নগদ সহায়তা পাবেন।

সূত্র জানায়, মধ্যপ্রাচ্য সংকট ও অর্থনৈতিক মন্দার কারণে গত ৫ বছর কাঁচা পাট, জুট ইয়ার্ন ও টুওয়াইন, চট ও বস্তার সব ধরনের পণ্য রফতানি কমে যায়। পরিবর্তিত এবা পরিস্থিতিতে বিশ্ব বাজারে চাহিদা কমায় পাটপণ্যের দামও পড়ে যায়। তবে প্রতিযোগী দেশ ভারত ও পাকিস্তানে রফতানিকারকদের উচ্চহারে প্রণোদনা দেয়ার মাধ্যমে রফতানি কিছুটা ধরে রাখতে সমর্থ হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের রফতানিকারকরা দামে টিকতে পারেনি।

৪ বছর আগেও এদেশ থেকে গড়ে ২১-২৩ লাখ বেল কাঁচা পাট রফতানি হতো। তার মধ্যে ভারতে ৬ লাখ, পাকিস্তানে সাড়ে ৫ লাখ এবং চীনে আড়াই লাখ বেল রফতানি হতো। তবে বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার কারণে অন্যতম প্রধান আমদানিকারক পাকিস্তান ও ভারত আমদানি কমিয়ে দেয়।

ফলে পণ্যটির রফতানি নেমে আসে ১০-১২ লাখ বেলে। পাশাপাশি লাইসেন্স মঞ্জুরি ও নবায়ন ফির বিপরীতে এবং পাট ক্রয়ে জোগানদার সেবার উৎসে মূসক চালু থাকায় উদ্যোক্তাদের ব্যবসায়িক খরচ বেড়ে যাচ্ছিল। এজন্য গত কয়েক বছর ধরেই ব্যবসায়ীরা পাটপণ্যকে কৃষিপণ্য হিসেবে ঘোষণার দাবি করে আসছিলেন।

সূত্র আরো জানায়, পাট খাতে আগে ব্যবসায়িক খরচ অনেক বেশি হতো। তবে পাটকে কৃষিপণ্য হিসেবে ঘোষণা করলে এই খরচ অনেকটাই কমে আসবে। পাশাপাশি রফতানি বাজারে দেশের অবস্থান মজবুতকরণ ও দেশে ব্যবসায়ীদের উৎপাদন খরচ কমিয়ে আনতে সরকারের নীতি সহায়তা বাড়ানোর সাথে সাথে তার ধারাবাহিকতাও থাকতে হবে। আগে দেশে পাটসুতা উত্পাদনকারী প্রতিষ্ঠান ছিল ৫৪টি।

গত দু’বছরে এর সাথে যুক্ত হয়েছে আরো ২৩টি প্রতিষ্ঠান। এই ৭৭টি প্রতিষ্ঠানের বর্তমানে বার্ষিক সুতা উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় পাঁচ লাখ টন। এসব সুতার প্রায় ৭০ শতাংশই বিদেশে রফতানি হয়। সরকারের এই ধরনের উদ্যোগের কারণে এই রফতানি আরো বাড়বে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।

এ প্রসঙ্গে বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম বলেন, গত মার্চ মাসে একটি অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাটকে কৃষিপণ্য ঘোষণা করেন। তখন থেকেই এ নিয়ে কাজ করছে মন্ত্রণালয়। খাত-সংশ্লিষ্টদের সুবিধা দিতে একটি সুপারিশমালাও প্রদান করা হয়েছে। যা এখন প্রজ্ঞাপন আকারে প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বিশ্ব বাজারে দেশীয় উদ্যোক্তারা প্রতিযোগী দামে টিকতে পারছিল না।

সেজন্য নগদ প্রণোদনার মাধ্যমে রফতানিতে উৎসাহিত করা হবে। তাছাড়া দেশের বাজারে পরিবেশবান্ধব পাট ও পাটজাত পণ্যের ব্যবহার বাড়াতে ৬টি পণ্যে পাটজাত মোড়কের ব্যবহার আইনের মাধ্যমে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এই আইন বাস্তবায়নের কার্যক্রম জোরদার ও বেগবান করতে উদ্যোক্তাদের আরো সুবিধা দেয়া হবে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/আমা

Wordbridge School
Link copied!