• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
বিএনপির মোসাদ ষড়যন্ত্র

পিলে চমকানো তথ্য পুলিশের হাতে


জুবায়ের রহমান চৌধুরী, বিশেষ প্রতিনিধি মে ১৮, ২০১৬, ১২:৩৬ এএম
পিলে চমকানো তথ্য পুলিশের হাতে

এক বছর আগে থেকেই চলছিল সরকারের বিরুদ্ধে কথিত ‘ইসরাইল ষড়যন্ত্র’। খুব গোপনে এগুচ্ছিল তা। গেল বছরে ইতালীয় নাগরিক তাবেলার হত্যাকাণ্ড ছিল এই মিশনের প্রথম কাজ। পরে সেকেন্ড হিট লিস্টে ছিল রংপুরে বসবাসকারী জাপানী নাগরিক হোসিও কোনিও। এসবই ছিল ‘ইসরাইল ষড়যন্ত্র’-এরই অংশ। কিন্তু খটকা বাঁধল মেনদি-আসলামের গোপন বৈঠক আর মহরম-মহরম সম্পর্ক প্রকাশ্যে আসার পর ।

‘ইসরাইল ষড়যন্ত্র’-এর বিষয়ে পুলিশের এক শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তার দাবি, ‘কথিত আইএস-এর ‘লেজ’ আমরা স্পর্শ করতে পেরেছি। ‘দেহে’ পৌছানোর চেষ্টা চলছে। কতটা এগুনো সম্ভব, তা বলার মত তথ্য এখনো হাতে আসেনি।’

পুলিশ সূত্র জানায়, আসলাম চৌধুরীকে আটকের আগেই এ সংক্রান্ত নানা তথ্য সংগ্রহ করা হয়। পুলিশের হাতে পিলে চমকানোর মত তথ্য রয়েছে। এখন এসব তথ্যের সমর্থনে প্রমাণ দরকার। প্রাপ্ত তথ্য যাচাইয়ে আসলাম চৌধুরীকে জেরা করা হচ্ছে। প্রয়োজনে ভারত সরকারের সহায়তাও নেয়া হতে পারে। পুলিশি জেরার মুখে আসলাম চৌধুরী ইতিমধ্যে জানিয়েছেন, তার দলের এক নেতার নির্দেশেই তিনি মেনদির সঙ্গে বৈঠক করেন। ভারতে আয়োজিত সেমিনারের খরচাপাতির যোগানও এসেছে ভিন্ন জায়গা থেকে।

এদিকে ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সাথে বৈঠকে আরও কারা জড়িত ছিলেন এবং এ বিষয়ে কতবার বৈঠক হয়েছে আসলাম চৌধুরীকে জিজ্ঞাসাবাদে তা বেরিয়ে আসবে বলে জানান জিজ্ঞাসাবাদে জড়িত এক পুলিশ কর্মকর্তা। মোসাদের সঙ্গে আসলাম চৌধুরীর বৈঠকের বিষয়ে বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যের সাথে আসলাম চৌধুরীর দেয়া তথ্যও মিলিয়ে দেখা হচ্ছে।

ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সহায়তায় সরকার উৎখতের ষড়যন্ত্রের অভিযোগে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরীকে গত রোববার (১৫ মে) গ্রেফতার করে ঢাকার গোয়েন্দা পুলিশ। এর পর আসলাম চৌধুরীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত।

এদিকে বাংলাদেশে সরকার উৎখাত ‘ষড়যন্ত্রে’ ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের পর এবার চীনা গোয়েন্দা সংস্থা ‘গওজিয়া অ্যাংকেন বু অথবা মিনিস্ট্রি অব স্টেট সিকিউরিটি’ (এমএসএস) অর্থায়নের পরিকল্পনার কথা জানা গেছে। এতে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টার সার্ভিসেস ইন্টালিজেন্স (আইএসআই) ও ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অব আসাম-উলফার (স্বাধীন) সামরিক কমান্ডার পরেশ বড়ুয়াকে ‘এমএসএ’ ব্যবহার করছে বলে দাবি করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট এক অসর্থিত সূত্রের দাবি, সম্প্রতি চীনের ইউনান প্রদেশের পশ্চিমের শহর রুইলিতে আইএসআই-এর দুই কর্মকর্তা ও পরেশ  বড়ুয়ার সঙ্গে একাধিক বৈঠকও করেছে জনবলের দিক দিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই গোয়েন্দা সংস্থাটি। ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা এই চক্রান্তের তথ্য ফাঁস করে।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দাখিল করা এক গোয়েন্দা প্রতিবেদনেও এ  ধরনের তথ্য তুলে ধরা হয়েছে বলে অপর একটি সূত্রের দাবি। সূত্র জানায়, চীনের ইউনান প্রদেশের পশ্চিমাঞ্চলের শহর রুইলিতে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এমএসএসের তিনজন, আইএসআই-এর দুই ও উলফা নেতা পরেশ বড়ুয়া ছাড়াও তার এক বান্ধবী উপস্থিত ছিলেন। যিনি চীনের আরেকটি গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তা। সূত্র মতে, বাংলাদেশে চীনের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট অনেক ব্যবসায়িক কাজ হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করে এমএসএস-এর কর্মকর্তারা শেখ হাসিনা সরকার উৎখাতে অর্থায়নের আশ্বাস দেন।

এদিকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দাখিল করা গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফার সামরিক কমান্ডার পরেশ  বড়ুয়াকে কাজে লাগানো হচ্ছে। পাকিস্তানি সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই এ কাজে পরেশ বড়ুয়াকে আর্থিক সহায়তা করছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আইএসআইয়ের সঙ্গে পরেশ বড়ুয়ার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপনে চীনা গোয়েন্দা সংস্থার ভূমিকা রয়েছে।

সম্প্রতি চিনের কুনমিংয়ে আইএসআইয়ের সঙ্গে এই উলফা নেতার গোপন বৈঠক হয়েছে। গোয়েন্দা প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশের উগ্রবাদী সংগঠনগুলোর সঙ্গে পরেশ বড়ুয়ার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে। আইএসআই তার মাধ্যমে এসব সংগঠনকে আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে। এছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রামে বাংলাদেশ সরকার বিরোধী একটি গ্রুপের সঙ্গেও পরেশ বড়ুয়ার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক কাজে লাগিয়ে আইএসআই পার্বত্যাঞ্চলে নতুন করে অস্থিতিশীল অবস্থা সৃষ্টির চেষ্টা করছে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/জেডআরসি/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!