• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

পুত্র সন্তান জন্ম নেয়া খুশির, কন্যা সন্তান অভিশাপ!


আন্তর্জাতিক ডেস্ক জানুয়ারি ১২, ২০১৮, ০৬:৩১ পিএম
পুত্র সন্তান জন্ম নেয়া খুশির, কন্যা সন্তান অভিশাপ!

কন্যা সন্তান জন্ম দেয়া মা ও তার আত্মীয়দের ফুলের শুভেচ্ছা জানান ডা. গনেশ রাখ

ঢাকা: বিশ্বের দ্বিতীয় জনসংখ্যার দেশ ভারত, যেখানে লিঙ্গ বৈষম্য প্রকট। এখানে অনেক পরিবারে এখনো কন্যাসন্তানের ভ্রূণ নষ্ট করা হয়। আশ্চর্যের বিষয় এই দেশে মেয়ে জন্ম নেয়ার জন্য নেয়া হয়না কোনো ফি! অবাক লাগলেও এমন ডাক্তার এখনো আছে সেখানে। ওই ডাক্তারের নাম ডা. গনেশ রাখ।

তবে তিনি খুব কাছ থেকে দেখেছেন সন্তান জন্ম দেয়া মায়েদের হাসি-কান্না। কোনো মা যখন ছেলে সন্তান প্রসব করেন, তখন তার মুখে হাসির রেখা ফুটে ওঠে। এর অবশ্য কারণও আছে। মেয়ে সন্তান জন্ম নিলে তাকে অভিশাপ মনে করা হয়। তখন সেই মায়ের চোখে একরাশ বিষন্নতা ভর করে। কারণ মেয়ে হয়েছে বলে আত্মীয় স্বজনরা ওই সন্তানের মুখও দেখতে আসেন না, এই ভয়ে।

তাই মেয়ে সন্তান জন্ম দেয়া মায়েদের কষ্টের কথা অনুভব করে তিনি একটি ব্যতিক্রম উদ্যোগ নিয়েছেন। যেসব মা মেয়ে সন্তান জন্ম দেবেন তাদের কাছ থেকে কোনো ফি নেয়া হবে না।

এজন্য ডা. গণেশ রাখ ভারতের পুনেতে অবস্থিত নিজের হাসপাতালে কোনো প্রসূতি মা কন্যা সন্তানের জন্ম দিলে তার চিকিৎসার জন্য কোনো ফি নেন না তিনি। ছয় বছর আগে তিনি এই ব্যবস্থা চালু করেন। পরবর্তীতে তাকে অনুসরন করে অনেকেই একই কাজ করেছেন।

ডা. রাখ ২০০৭ সালে পুনের হাদাপ্সার এলাকায় একটি হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর থেকেই তিনি সকল মায়েদের মধ্যে এক অদ্ভুত আচরণ খেয়াল করেন। যা তাকে বিস্মিত করে তোলে। তিনি লক্ষ্য করে দেখলেন, গর্ভাবস্থার সময়ে এমনকি সন্তান জন্মদানের মুহূর্তেও অধিকাংশ মায়েরা শিশু ছেলে হবে না মেয়ে হবে তা নিয়ে তাদের মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তা থাকত অসীম।

তিনি আরো বলেন, মায়েরা যখন ছেলে সন্তান প্রসব করত তখন অনেক মায়েরাই সন্তান জন্মদানের কষ্ট ভুলে আনন্দ পেতেন। অন্যদিকে যেসব মায়েরা মেয়ে সন্তান প্রসব করত তাদের মধ্যে কষ্ট যেন দ্বিগুণ বেড়ে যেত।

ডা, রাখ তার অভিজ্ঞতার বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, পুত্র সন্তান জন্ম নিলে একটি পরিবারে খুশির খবর হিসেবে বিবেচিত হত, অন্যদিকে কন্যা সন্তান জন্ম নিলে অভিশাপ হিসেবে দেখা হত। শুধু তাই নয় অনেক আত্মীয় নবজাতককে না দেখেই ফিরে যেতেন। এমনকি, হাসপাতালের বিল দেবার ক্ষেত্রেও নানান রকম সমস্যা তৈরি করত।

তিনি বলেন, এসব ঘটনায় তিনি মানসিকভাবে খুব কষ্ট পান এবং মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেন এমন কিছু করবেন, যাতে সামান্য হলেও মানুষের চিন্তাধারা পরিবর্তন করা যায়। এইভাবেই ডা. রাখ-এর এমন চমৎকার ক্যাম্পেইনের সূচনা।

ডা. রাখ ২০১২ সালের ৩ জানুয়ারি সিদ্ধান্ত নেন, এখন থেকে তার হাসপাতালে কোনো মেযে সন্তান জন্ম নিলে ডেলিভারি ফির জন্যে কোনো বিল করা হবে না। এ পর্যন্ত প্রায় পাঁচ’শর বেশি কন্যা সন্তানের জন্ম হয়েছে একেবারেই বিনামূল্যে।

হাসপাতালের সকল রোগীর মাঝে মিষ্টি বিতরণের মাঝে দিয়ে প্রতিটি কন্যা সন্তানের জন্ম আনন্দ নিয়ে পালন করেন হাসপাতালে কর্তব্যরত ৩৫ জন কর্মী। কন্সট্রাকশন সাইটের দিনমজুর রাহুল খালসে বলেন, আমাদের বাসার কাছেও অনেক হাসপাতাল আছে। কিন্তু আমরা দূর থেকে এই হাসপাতালে এসেছি। কারণ ডা. রাখ কোনো টাকা নেন না।

বিখ্যাত বলিউড সুপারস্টার অমিতাভ বচ্চন ডা. রাখ-এর ব্যাপারে বলতে গিয়ে তাকে ‘রিয়েল হিরো’ বলে অভিহিত করেন।

ডা. রাখ বলেন,  আমি খুবই ছোট একটি কাজ শুরু করেছিলাম। কখনোই আশা করিনি তার ওই ছোট্ট প্রয়াশ এত বিশাল বিশাল হবে। আসলে খুব ছোট কিছুও মনের উপরে অনেক বড় প্রভাব তৈরি করে দিতে পারে।

অবশ্য একটু মজা করে তিনি বলেন, ‘যেদিন কন্যা সন্তানের জন্ম নিয়ে সকলেই আনন্দিত হবেন সেদিন থেকে আবারও বিল গ্রহণ করা হবে। বিল ছাড়া কীভাবে আমার হাসপাতাল চালাবো আমি?’

সোনালীনিউজ/এমএইচএম

Wordbridge School
Link copied!