• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পুলিশের কর্মকাণ্ড নিয়ে  বিব্রত আওয়ামী লীগ


নিজস্ব প্রতিবেদক ফেব্রুয়ারি ৬, ২০১৬, ০৪:২৭ পিএম
পুলিশের কর্মকাণ্ড নিয়ে  বিব্রত আওয়ামী লীগ

বিশেষ প্রতিনিধি

সম্প্রতি পুলিশের বেপরোয়া কর্মকাণ্ডে বিব্রত খোদ ক্ষমতাসীন দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। একের পর এক পুলিশ সদস্যরা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ার ঘটনা বেশ ভাবিয়ে তুলেছে ক্ষমতাসীনদের। বিষয়টিকে ক্ষমতাসীন দলের দায়িত্বশীলরা খুব স্বাভাবিক ঘটনা হিসেবে দেখছেন না। তারা এসব ঘটনাকে ‘সর্ষের ভেতর ভূত’ ঢোকার মতো করে দেখছেন। বিশেষ কোনও দুরভিসন্ধি থেকে এসব অপরাধ সংঘঠিত হচ্ছে বলেও মনে করছেন তারা।

সম্প্রতি মোহাম্মদপুরে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা গোলাম রাব্বীকে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানোর হুমকি দিয়ে আটকে রেখে নির্যাতন, দয়াগঞ্জে সিটি করপোরেশনের ক্লিনিং ইন্সপেক্টর বিকাশ চন্দ্র সাহাকে নির্যাতন, উত্তরায় এক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও তার বান্ধবীকে আটকে রেখে ইয়াবা সেবনকারী হিসেবে ফাঁসানোর হুমকি দিয়ে ঘুষ নেয়া ও সর্বশেষ মিরপুরে এ চাঁদা না পেয়ে চা দোকানিকে অগ্নিদগ্ধ করে মারার ঘটনায় পুলিশ বাহিনী এখন কাঠগড়ায়।

শাসক দলের নীতি নির্ধারকরা মনে করছেন, পুলিশের ভেতরের একটি চক্র সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বিপাকে ফেলতে অব্যাহতভাবে এসব ঘটনা ঘটিয়ে যেতে পারে। অথবা ভিন্ন কোনও মহলের প্ররোচনায়ও এসব ঘটনা ঘটাতে পারে। এ জন্য পুলিশ বাহিনীর উচিত হবে, পুরো বিষয়টি নিবিড় পর্যবেক্ষণ করা। নির্মোহভাবে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা  নেয়া।  প্রকৃত দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, পুলিশের অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ার ঘটনাগুলো সরকারকে ও আওয়ামী লীগকে বিব্রত করে তুলছে। তিনি বলেন, পুলিশ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে, সেখানে পুলিশ জনগণের জন্য হুমকি হয়ে ওঠা অশুভ লক্ষণ। সম্প্রতি পুলিশের অপরাধে জড়িয়ে পড়ার কারণ খুঁজে বের করে দোষী পলিশ সদস্যদের দ্রুত বিচারের মুখোমুখি করার দাবি জানান তিনি। সুরঞ্জিত বলেন, এতে পুলিশ বাহিনীর যেমন সুনাম অক্ষুণ্ন থাকবে, তেমনি সরকারেরও ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে।

জানা যায়, নেতিবাচক এসব বিষয়গুলোর সুরাহা চায় সরকার। তাই বসে নেই, সরকারের বিভিন্ন সংস্থাগুলো। এসব ঘটনার সঙ্গে যাদের নাম এসেছে তাদের অদ্যোপান্ত খুঁজে বের করার কাজ চলছে। পুলিশের এসব সদস্যরা কবে নিয়োগ পেয়েছেন, কাদের চেষ্টায় পুলিশে এসেছেন, তাদের ব্যাকগ্রাউন্ড কী, আত্মীয়-স্বজন কারা ও বাড়ি কোথায়—এ বিষয়ে বিস্তারিত তদন্ত চলছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে। পুলিশের ভেতরে এসব ঘটনা এখন আর স্বাভাবিকভাবে দেখছে না সরকারের নীতি-নির্ধারকরা। 

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, পুলিশের অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ার খবর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ‘সিরিয়াস’ভাবে নিয়েছে। আমরা প্রত্যেকটি ঘটনার খোঁজ-খবর নেয়া শুরু করেছি। তিনি বলেন, এখানে ভিন্ন কোনও ষড়যন্ত্র কাজ করছে কি না তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এছাড়া, অপরাধের সঙ্গে জড়িত প্রত্যেক পুলিশ সদস্যের বিস্তারিত তথ্য জানার চেষ্টা চলছে। অপরাধ করলে সবাইকে শাস্তির আওতায় আসতে হবে। আইন-কানুন সবার জন্য সমান। তিনি বলেন, শুধু  দুই-একজন পুলিশ সদস্যের ব্যক্তিগত অপকর্মের কারণে পুরো পুলিশ বিভাগকে দোষারোপ করা ঠিক নয়।

পুলিশের এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে পড়ার বিষয়টি ভালো করে খতিয়ে দেখার দাবি জানিয়ে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব উল আলম হানিফ বলেন, ভিন্ন কারও প্ররোচনায় এ বাহিনীর সদস্যরা এসব অনৈতিক কর্মকাণ্ড করছে কি না তা দেখতে হবে। সুশৃঙ্খল এ বাহিনীর সুনাম ফিরিয়ে আনতে অভিযুক্তদের দ্রুত বিচারের মুখোমুখি করে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। সম্প্রতি পুলিশ বাহিনীর কতিপয় সদস্যের অপরাধ প্রবণতা দেখে এটাই প্রমাণ হয় এ বাহিনীতেও অবক্ষয়ের ছোঁয়া লেগেছে।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নূহ-উল আলম লেনিন বলেন, পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের ভেতরে অপরাধ সংঘটিত করার প্রবণতা সাধারণ কোনো বৈশিষ্ট্য নয়। আবার এটাও সত্য এসব বাহিনীগুলোয় একেবারেই কিছু ঘটবে না এটা আশা করাও অতিরিক্ত হয়ে যায়। তবে মাঝে-মধ্যেই এসব ঘটনা সরকারকে বিব্রত করে তোলে। তিনি বলেন, অপরাধের সঙ্গে জড়িত হওয়ার পরে সরকার চোখ বুজে থাকে— তাও না। ইতোমধ্যে বিভিন্ন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা  নেয়া হয়েছে। লেনিন বলেন, ঘটনাগুলোর মূলোৎপাটন করতে আরও গভীরে যাওয়া উচিত।

সোনালীনিউজ/এমএইউ

Wordbridge School
Link copied!