• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

পৃথিবীতে ৩৫০ টি লাইব্রেরী বন্ধ, ১১১ টি সেই পথে


নিজস্ব প্রতিবেদক এপ্রিল ২, ২০১৬, ০৫:৩১ পিএম
পৃথিবীতে ৩৫০ টি লাইব্রেরী বন্ধ, ১১১ টি সেই পথে

সোনালীনিউজ ডেস্ক

নিউটন কি লাইব্রেরিতে বসে মধ্যাকর্ষণ শক্তি আবিষ্কার করেছিলেন? প্রশ্নের উত্তরে সবাই জানা কথা বলবেন যে, না নিউটন মহাশয় তা করেননি। কিন্তু নিউটনদের অগ্রগতির পেছনে কিন্তু ঢাউস ঢাউস সব বইয়ের অবদান ছিল। আর এই বইগুলো পাওয়া যেত কোনো না কোনো লাইব্রেরীতে। মানবজাতির ইতিহাসে বেশ কয়েকটি প্রসিদ্ধ লাইব্রেরী ছিল, যা বর্তমানে আর নেই। তাদেরই মধ্যে একটি হলো আলেকজান্দ্রিয়ার লাইব্রেরী বা পাঠাগার। বেশ কয়েকজন শাসক মিলে এই লাইব্রেরীটি ধ্বংস করেছেন, ইতিহাস যার সাক্ষ্য দেয়। বলা হয়, বহু দুষ্প্রাপ্য বই এবং পাতার স্ক্রল ধ্বংস হয়ে যায় সেসময়। ইতিহাস ঘাটলে দেখা মিলবে, শাসক বা ক্ষমতাধর শ্রেণি আগাগোড়াই লাইব্রেরীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন। কারণ শিক্ষিত জনগোষ্ঠিকে আর যাই হোক, ঠকানো সহজ নয়।

আমাদের সংস্কৃতিতে লাইব্রেরী মানেই একটি শুদ্ধ স্থান যেখানে বসে জ্ঞানচর্চা করা হয়। এই লাইব্রেরীতে বসেই কত মানুষের সুকুমারবৃত্তির বিকাশ ঘটেছে তার উদাহরণ দেয়া যাবে ভুরি ভরি। বন্ধুদের নিয়ে দলবেধে লাইব্রেরিতে বসে পড়াশোনার পাশাপাশি চলতো আড্ডায় মেতে থাকা প্রতিটি সময়ই ছিল অনেক শিক্ষণীয়। কিন্তু যতই দিন যাচ্ছে ততই বাড়ছে প্রযুক্তির ব্যবহার। প্রযুক্তি মানুষকে এখন আর আগের মতো ধরে রাখতে পারছে না। ছোট ছোট বন্ধুদের দলগুলো যেন ক্রমশ আরো ছোট হতে চলেছে। যতই দিন যাচ্ছে ততোই মানুষ প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে পড়ছে। ক্ষমতাধরদের প্রযুক্তি এখন মানুষকে আরও একা থেকে একাকী করে দিচ্ছে।

আগে যেখানে লাইব্রেরীতে একটি বই সংগ্রহের জন্য কমপক্ষে পাঁচ জন অপেক্ষমান সারিতে দাড়িয়ে থাকতো। আর এখন প্রযুক্তির বদৌলতে একটি বই পাওয়ার জন্য গুনতে হয় না অপেক্ষার প্রহর। চাইলেই হাতে কাছে পাওয়া যাবে বহুবছর আগের বইটি। এমন অবস্থায় লাইব্রেরীর ভূমিকা দৈন্দিন জীবনে ক্রমশ কমছে বললেই চলে। কয়দিন পর হয়তো দেখা যেতে পারে, একটি শহরে খুব কষ্টে খুঁজে পাওয়া যাবে একটি লাইব্রেরী। অথচ যুগে যুগে জ্ঞানীরা বলে গেছেন যে, একটি সমাজ চিনতে হলে যেতে হবে সেই সমাজের লাইব্রেরীতে। আর সেই লাইব্রেরীতে পড়ুয়া মানুষদের মানসিকতা দেখেই বোঝা যাবে সমাজের অবস্থা।

সম্প্রতি এই বিষয়টি নিয়ে একটি তথ্য প্রকাশ করেছে বিবিসি। সেখানে বলা হয়েছে গত ছয় বছরে পৃথিবীতে ৩৫০ টি লাইব্রেরী বন্ধ হয়ে গেছে। আরো ১১১ টি লাইব্রেরী বন্ধের আশঙ্কা করা হচ্ছে। আর এই লাইব্রেরীগুলো বন্ধের কারণে চাকরি হারিয়েছে আট হাজার মানুষ। লাইব্রেরীর বিকল্প হিসেবে মানুষ বেছে নিচ্ছে অনলাইনকে। অনলাইনে চাইলে ঘরে বসেই পাওয়া যায় অনেক বছরের পুরণো বই। আবার অনেকে এমনও আছেন যারা ঘরে এসে বই দিয়ে যায়। পুরে অনলাইন বই ব্যবস্থা এখন চলে গেছে ই-বুকের দখলে। আর এই ই-বুকের জন্য আমাজানের কিনডলে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে আছে।

২০১০ সাল থেকে এই পর্যন্ত ৪৫০ টি লাইব্রেরী বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। আর দিনে দিনে লাইব্রেরীতে আসা পাঠকদের সংখ্যাও অনেক হ্রাস পাচ্ছে। সবচেয়ে বেশি করুণ অবস্থা হলো পাবলিক লাইব্রেরীগুলোর। এখানে পাঠকের আনাগোনা তেমন থাকে না বললেই চলে। তবে অনেক কবি সাহিত্যিকরা মনে করেন একটি দেশের লাইব্রেরী বন্ধ হয়ে যাওয়া সেই দেশের জাতির জন্য মোটেও শুভকর না। আমাদের দেশের পাবলিক লাইব্রেরীর অবস্থাও খুব একটা ভালো নয়, মানুষ এখন আর সেখানে জ্ঞান-বিজ্ঞানের সন্ধানে যায় না। বরংচ বিসিএস বা পরীক্ষায় সহজে পাশ করার জন্য লাইব্রেরীতে যান এক শ্রেণির পাঠক।

পাঠকের অনুপস্থিতির কারণে লাইব্রেরীগুলো মোটেও বন্ধ করা উচিত নয় বলে মনে করেন অনেকেই। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে লাইব্রেরী বন্ধ হয়ে যাওয়া নিয়ে জ্ঞানী-গুনী মহল নানান কায়দায় বিক্ষোভও করে আসছে। যদিও লাইব্রেরী মালিকরা বলছে ভিন্নকথা। তাদের কাছে এতো স্বল্প পাঠক দিয়ে লাইব্রেরী চালানো সম্ভনা না বলে মনে করছেন তারা। তবে লাইব্রেরীর বিপর্যয় ঠেকাতে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করছে দেশের শিক্ষিত সমাজ। শুধু শিক্ষিত সমাজ নয়, একটা ভূখন্ডের সার্বিক শিক্ষাকাঠামোর উপর নির্ভর করে লাইব্রেরী টিকে থাকবে কি থাকবে না। তাই সবার আগে লাইব্রেরীবান্ধব শিক্ষাকাঠামো প্রনয়ন করতে হবে সমাজ বুঝে। তবেই একবিংশ শতাব্দীতে মানুষ অনলাইনের এই দাসত্ব এড়িয়ে মানবিক সমাজের দিকে যাত্রা শুরু করতে পারবে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/আকন

Wordbridge School
Link copied!