• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

প্রধানমন্ত্রীকে আজ কাছে পাচ্ছে পাবনাবাসী, থাকছে যেসব উপহার


নিজস্ব প্রতিবেদক জুলাই ১৪, ২০১৮, ১২:৩৪ পিএম
প্রধানমন্ত্রীকে আজ কাছে পাচ্ছে পাবনাবাসী, থাকছে যেসব উপহার

ঢাকা : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আজ কাছে পাচ্ছে পাবনাবাসী। একরাশ উপহার নিয়ে শনিবার (১৪ জুলাই) পাবনায় যাচ্ছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা। তার আগমনকে ঘিরে পাবনায় সাজ সাজ রব পড়েছে। পাবনা শহর থেকে ঈশ্বরদী-পাকশী মহাসড়কে বিপুলসংখ্যক তোড়ন নির্মাণসহ সৌন্দয্য বর্ধন করা হয়েছে বিভিন্ন স্থান। নেওয়া হয়েছে নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা।  

প্রধানমন্ত্রী পাবনার ঈশ্বরদীর রূপপুরে দ্বিতীয় ইউনিটে পারমাণবিক চুল্লি বসানোর কাজের (ফাষ্ট কংক্রিট পোরিং ডেট বা এফসিডি) এবং পাবনা-ঈশ্বরদীর নুতন রেললাইন ও রেল চলাচলসহ ৩১টি প্রকল্পের উদ্ধোধন ও ১৮টি প্রকল্পের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করবেন। দুপুর ১২টায় প্রকল্পগুলোর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ও উদ্বোধনের পর বিকাল ৩টায় তিনি পাবনা পুলিশ লাইন মাঠে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় ভাষণ দেবেন।

পাবনায় তার আগমন কেন্দ্র করে পদ্মার তীরঘেঁষা পাকশীকে নতুন সাজে সাজানো হয়েছে। রূপপুর মোড়, হার্ডিঞ্জব্রিজ এলাকা, রেলওয়ে অফিস এলাকা, রেলওয়ে মাঠসহ সর্বত্র মানুষের মনে খুশির আমেজ। পারমাণবিক চুল্লির দ্বিতীয় ইউনিটের কাজের উদ্বোধন উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী বাণী দিয়েছেন।

বাণীতে তিনি বলেন, ‘আশা করি, আমরা নির্ধারিত সময়েই পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্মাণকাজ সম্পন্ন করতে পারব।’

রাশিয়ান ফেডারেশনের সহযোগিতায় রূপপুরে পদ্মা নদীর তীরে নির্মিত হচ্ছে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। গত বছরের ৩০ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে প্রথম ইউনিটের পারমাণবিক চুল্লি বসানোর কাজের অর্থাৎ ফার্স্ট কংক্রিট পোরিং ডেট বা এফসিডি কাজের উদ্বোধন করেন।

ওই অনুষ্ঠানে রোসাটমের মহাপরিচালক মি. আলেক্সি লিখাচেভ, আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার পরিচালক তৌহি হানসহ দেশি-বিদেশি বিশিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।

প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, প্রথম ইউনিটের কংক্রিটের কাজ চলমান রয়েছে। নির্ধারিত সময়ে শেষ করতে কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। একই সঙ্গে দ্বিতীয় ইউনিটের কাজ শুরু করার জন্যও সব প্রাক-প্রস্তুতি এরই মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী ফার্স্ট কংক্রিট পোরিং ডেট বা এফসিডি উদ্বোধনের দিন থেকে ৬৩ মাসের মধ্যে এ প্রকল্পে উৎপাদিত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ হবে। বর্তমানে পৃথিবীর ৩১টি দেশে ৪৩৭টি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র রয়েছে।

৩০ নভেম্বর এফসিডি কাজের উদ্বোধনের পর বাংলাদেশ বিশ্বের ৩২তম পারমাণবিক দেশের স্বীকৃতি অর্জন করেছে। ২০১০ সালের ১০ নভেম্বর জাতীয় সংসদে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ২০১১ সালের ২ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে রাশিয়ান ফেডারেশন ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে প্রকল্প নির্মাণে সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

২০১৪ সালের ২ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এ সময় রাশিয়ান ফেডারেশনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী সের্গেই কিরিয়েঙ্কো এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন। উদ্বোধনের পর থেকেই দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের নির্মাণকাজ চলছে।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক মন্ত্রী ড. ইয়াফেস ওসমান প্রতি মাসেই দু-একবার সশরীরে ঈশ্বরদীর রূপপুরে এসে প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি নিয়মিত দেখছেন। রাশিয়া ও বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞ ও কর্মী মিলে সহস্রাধিক মানুষ দিনরাত কাজ করে চলেছেন।

২০২০ সালের মধ্যেই মূল রিঅ্যাক্টর ভেসেলসহ সব যন্ত্রপাতিই রাশিয়া থেকে চলে আসবে বলে প্রকল্প সূত্র নিশ্চিত করেছে। এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দুটি ইউনিট থেকে ১২০০ করে ২৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হবে।

২০২৩ সালে প্রথম ইউনিটে উৎপাদিত বিদ্যুৎ এবং ২০২৪ সালে দ্বিতীয় ইউনিটের বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সঞ্চালিত হবে। এদিকে মূল প্রকল্প এলাকার বাইরে নির্মিত হচ্ছে অত্যাধুনিক আবাসন পল্লী ‘গ্রিন সিটি’।

প্রকল্পে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ২০ তলাবিশিষ্ট ১১টি বিল্ডিং এবং ১৬ তলার ৮টি বিল্ডিংয়ের কাজ চলছে। ২২টি সুউচ্চ বিল্ডিং তৈরি হবে এই চত্বরে। গ্রিন সিটিতে থাকবে মাল্টিপারপাস হল, চিকিৎসা কেন্দ্র, মসজিদ ও স্কুলসহ বিভিন্ন স্থাপনা।

যেসব প্রকল্পের উদ্বোধন : প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের জন্য যে ৩১টি উন্নয়ন প্রকল্প তালিকাভুক্ত করা হয়েছে সেগুলো হচ্ছে, পাবনার নব নির্মিত রেল লাইনের রেল চলাচল, পাবনা মেডিকেল কলেজের ছাত্রাবাস ও ছাত্রী নিবাস, ঈশ্বরদী থানা ভবন, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স, সুজানগর উপজেলার নাজিরগঞ্জ, আটঘরিয়ার মাজপাড়া, ঈশ্বরদী উপজেলার পাকশী -সলিমপুর -লক্ষীকুন্ডা-সাঁড়া, পাবনা সদর উপজেলার চরতারাপুর এবং চাটমোহর ছাইকোলার ইউনিয়ন ভূমি অফিস, ফরিদপুর উপজেলার বড়াল নদীর উপর নারায়ণপুর সেতু, ভাঙ্গুরা উপজেলার গোমানি নদীর উপর নৌবাড়িয়া সেতু, ঈশ্বরদী ও চাটমোহর উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স, পাবনা সিটি কলেজের একাডেমিক ভবন, আটঘরিয়া ও দেবোত্তর কলেজের একাডেমিক ভবন, খিদিরপুর ডিগ্রী কলেজের একাডেমিক ভবন, চাটমোহর মহিলা কলেজের একাডেমিক ভবন, বোনকোলা স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাডেমিক ভবন,  সুজানগর কলেজ ও মহিলা কলেজের একাডেমিক ভবন, শহীদ নুরুল হোসেন ডিগ্রী কলেজের একাডেমিক ভবন, সাঁথিয়া ও ঈশ্বরদী মহিলা কলেজের একাডেমিক ভবন, সরকারি অ্যাডওয়ার্ড কলেজের প্রশাসনিক ভবন, ডেঙ্গার গ্রাম ডিগ্রী কলেজ কলেজের একাডেমিক ভবন, আটঘরিয়া উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, চাটমোহর উপজেলার গোমানি নদীর উপর নিমাইচড়া সেতু,  কাটাখালী সেতু, আত্রাই নদীর উপর আত্রাই সেতু, সুজানগর উপজেলার ধোলাইখাল সেতু,  চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া-ফরিদপুর-ঈশ্বরদী-আটঘরিয়া-সাঁথিয়া-সুজানগরের শতভাগ বিদ্যুতায়ন প্রকল্প উদ্ধোধন।

অপরদিকে যে ১৮টি প্রকল্পের ভিত্তি প্রস্থর ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করবেন সেগুলো হচ্ছে, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সিগন্যালিংসহ রেললাইন নির্মাণ, পাবনা জেলা সদরে এক হাজার আসন বিশিষ্ট অডিটোরিয়াম কাম মাল্টিপারপাস হল, সুজানগর উপজেলার কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, সাঁথিয়া ও আটঘরিয়া উপজেলার ফায়ার সার্ভিস সিভিল ডিফেন্স ষ্টেশন, চাটমোহর, বেড়া ও সুজানগর উপজেলার সাব-রেজিষ্টার অফিস ভবন, জেলা রেজিষ্টারের অফিস ভবন, পুলিশ লাইনের মহিলা পুলিশ ব্যারাক ভবন, সুজানগর উপজেলার সাগড়কান্দি ইউনিয়নের ও আটঘরিয়া হাদল ইউনিয়ন ভূমি অফিস, পাবনা মেডিকেল কলেজের ৫০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল, জেলা শিল্পকলা একাডেমি, সাঁথিয়া টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ও পাবনার আদর্শ মহিলা কলেজের একাডেমিক ভবন, বেড়া-সাঁথিয়া পৌরসভার উচ্চ জলাধার ও পানি শোধনাগার নির্মাণ ও পাবনা জেনারেল হাসপাতালের ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট উর্ধমুখী সম্প্রসারণ। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে ইতোমধ্যে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।

পাবনায় উৎসবের আমেজ : প্রধানমন্ত্রীর আগমন ঘিরে পাবনা উৎসবের নগরীতে পরিণত হয়েছে। সব জায়গায় সাজ সাজ রব পড়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রীকে বরণ করতে পুরো শহরে ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে। নতুন রূপে সাজানো হয়েছে সার্কিট হাউস, সংস্কার হয়েছে রাস্তাঘাটও। প্রধানমন্ত্রীর সফর সফল করতে এরই মধ্যে জেলা প্রশাসন, জেলা-উপজেলা আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠন একাধিক প্রস্তুতি সভা করেছে।

প্রধানমন্ত্রীর জনসভাস্থল পুলিশ লাইন মাঠের সামনে নির্মাণ করা হয়েছে সুদৃশ্য গেট। সার্কিট হাউসের সামনে বেশ কয়েকটি তোরণসহ এর বাইরে পাবনা-ঢাকা ও পাবনা-ঈশ্বরদী মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে শতাধিক তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে। পাবনা জেলা প্রশাসক মো. জসিম উদ্দিন বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি। এ লক্ষ্যে জেলা প্রশাসন এবং স্থানীয় রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে সর্বত্র নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। পাবনা জেলা নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে। জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিরাপত্তা ব্যবস্থার বলয় মজবুত করতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে। পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, ভূমিমন্ত্রী এবং পাবনা-৪ আসনের (ঈশ্বরদী-আটঘরিয়া) এমপি শামসুর রহমান শরীফ, পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পাবনা সদর আসনের এমপি গোলাম ফারুক প্রিন্স এমপি এবং আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা জনসভা সফল করতে কাজ করছেন।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!