• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

প্রবাসী মন্ত্রণালয়ের অর্জন, নারী নির্যাতনে বিসর্জন


নিজস্ব প্রতিবেদক জানুয়ারি ১, ২০১৬, ০৯:৫৪ এএম
প্রবাসী মন্ত্রণালয়ের অর্জন, নারী নির্যাতনে বিসর্জন

সোনালীনিউজ ডেস্ক:

লতি বছর লক্ষ্যণীয় সাফল্য অর্জন করেছে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। এ বছর ৫ লাখ ৬ হাজার ৯৪৯ জনকে প্রবাসে কর্মী হিসেবে পাঠানো মন্ত্রণালয়টির সাফল্যের মধ্যে অন্যতম, যেখানে গত বছর ৪ লাখেরও কম কর্মী প্রবাসে গিয়েছিল। তবে এ অর্জন ম্লান হয়েছে প্রবাসে গৃহকর্মী নির্যাতনের ঘটনায়। আর কার্যকরি পদক্ষেপ নিতে না পারায় পুরো বছরই সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে মন্ত্রণালয়টিকে।

মধ্যপ্রাচ্যের সৌদিআরব, ওমান ও দুবাই মিলে গত আগস্ট, সেপ্টেম্বর ও নভেম্বরে ১৯০ জন নারী শ্রমিক নির্যাতিত হয়েছে। এই তিন দেশে আগস্টে নির্যাতিত হয়েছে ৭৭, সেপ্টেম্বরে ৫৩ ও অক্টোবরে ৬০ জন নারী। গড়ে প্রতিমাসে ৫০ জন করে ওই তিন দেশ থেকে ৬শ’র বেশি নারী কর্মীর অভিযোগ জমা পড়েছে। এসব অভিযোগের অধিকাংশের কোনো সুরাহা হয়নি।

অপরদিকে নভেম্বর পর্যন্ত বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশি নারী কর্মী মারা গেছে ১৬০ জন। জানুয়ারিতে ১২, ফেব্রুয়ারিতে ৭, মার্চে ১২, এপ্রিলে ১৪, মে ১৫, জুনে ১৯, জুলাইয়ে ২১, আগস্টে ১৮, সেপ্টেম্বরে ১৫, অক্টোবর ১২ ও নভেম্বরে ১৫ জন প্রবাসী কর্মী বিভিন্ন দেশের মাটিতে মারা গেছে। এদের বেশিরভাগই স্ট্রোক ও দুর্ঘটনায় মারা যায়। স্বাভাবিকভাবে মৃত্যুর সংখ্যা খুবই কম।
নারী নির্যাতনের কারণ হিসেবে সরকারের নীতিমালা, দূতাবাসগুলোর দায়িত্বে অবহেলা ও প্রাইভেট এজেন্সিগুলোর দৌরাত্ম্যকে দুষলেন অভিবাসী কর্মী উন্নয়ন প্রোগ্রামের (ওকাপ) নির্বাহী পরিচালক ওমর ফারুক চৌধুরী। আর বিদেশে শ্রমিক পাঠানোর আগে উভয় দেশের মধ্যে সচেতনতা না থাকার ঘাটতি বলে জানালেন আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) প্রোগ্রাম অ্যাসোসিয়েট অনিন্দ্য দত্ত।

ওমর ফারুক চৌধুরী বলেন, ‘নারী নির্যাতনের কয়েকটি কারণ আছে। তার মধ্যে প্রবাসী নারী শ্রমিক প্রেরণের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট নীতিমালা না থাকা, নীতিমালা থাকলেও তার যথাযথ প্রয়োগ না করা, প্রাইভেট এজেন্সিগুলোর দৌরাত্ম্য ও দূতাবাসগুলোর দায়িত্ব অবহেলা। এগুলো একটির সঙ্গে অপরটি সম্পর্কযুক্ত।’

তিনি বলেন, ‘সরকারের যদি নির্দিষ্ট নীতিমালা থাকত তাহলে সেখানে অবশ্যই গৃহকর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে কিছু ক্যাটাগরি থাকত। এতে প্রাইভেট এজেন্সিগুলো ইচ্ছেমতো কর্মী পাঠাতে পারত না। তারা বিদেশে এমন নারী শ্রমিক পাঠায় যারা নিজের নামও লিখতে পারে না। একটি ভিন্ন দেশে গিয়ে ভিন্ন ভাষা ও কালচারের সঙ্গে মিশতে সমস্যা হবেই। যে কারণে বেশি নির্যাতন হচ্ছে ও মারা যাচ্ছে।’

অনিন্দ্য দত্ত বলেন, ‘নির্যাতনের কারণ হচ্ছে আমরা যে দেশে যাচ্ছি সে দেশের কালচারের সঙ্গে অ্যাডজাস্ট করতে না পারা। ভাষাগত সমস্যা বড় কারণ। লোক পাঠানোর আগে উভয় দেশেই সচেতনতা বাড়াতে হবে। যারা নির্যাতিত হচ্ছেন তাদের ব্যাপারে দ্রুত খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নিতে হবে।’

তবে মৃত্যুর কারণ হিসেবে সরকারের পলিসিগত ভুলের কথা বললেন ইউল্যাব ইউনিভার্সিটির সহকারী অধ্যাপক ও গবেষক জালাল উদ্দিন শিকদার। তিনি বলেন, ‘সরকার শ্রমিক পাঠানোর ক্ষেত্রে শুধু কোয়ান্টিটি দেখে, কোয়ালিটি দেখে না। তারা যেকোনো উপায়ে চায় রেমিটেন্স আসুক। যে কারণে প্রতিকূল আবহাওয়ায় অমানবিকভাবে কাজ করে অকালেই মারা যাচ্ছে এসব প্রবাসী শ্রমিক।’

তবে সব অভিযোগ সত্য নয় উল্লেখ করে মন্ত্রণালয়ের সচিব খন্দকার মো. ইফতেখার হায়দার বলেন, ‘অনেকেরই ভালো না লাগার কারণে অভিযোগ সাজাচ্ছেন। কেউ বা আশা অনুযায়ী কাজ না পাওয়ায় ঢালাও অভিযোগ করছেন। বিষয়গুলো তদন্ত করছি। তারপর ব্যবস্থা নিচ্ছি। তবে যারা সত্যিই নির্যাতনের শিকার, তাদেরকে আমরা দ্রুত সেফ হোমে নিয়ে আসছি। আবার যে মালিক এসব কাজের সঙ্গে জড়িত তার বিরুদ্ধে মামলা করা হচ্ছে।’

অপরদিকে বিদায় হতে যাওয়া মন্ত্রণালয়টির সাফল্যগুলো খতিয়ে দেখা যায়, দক্ষ জনশক্তি প্রেরণের লক্ষ্যে ৩০টি জেলায় কারিগরি স্থাপন করার কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। ২৪টি জেলায় কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। ১০টি জেলায় ইতোমধ্যে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। 
৫টি জেলায় ৫টি ইনস্টিটিউট অব মেরিন টেকনোলজি (আইএমটি) নির্মাণ করেছে মন্ত্রণালয়টি, যা প্রশিক্ষিত জনবল তৈরি এবং তাদের বৈদেশিক কর্মসংস্থানে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।

চলতি বছরে নতুন বাজারের অনুসন্ধানে থাইল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়াসহ বেশ কয়েকটি উন্নত দেশে ভ্রমণ করেছেন মন্ত্রী। গত ৮ আগস্ট বাংলাদেশ থেকে কর্মী প্রেরণের লক্ষ্যে জাপানের সর্বোচ্চ কর্মী নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান আইএম’র সাথে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। একই সঙ্গে মন্ত্রণালয় কর্তৃক ৩১ সেপ্টেম্বর অবৈধ অভিবাসন প্রতিরোধকল্পে টাস্কফোর্স গঠন করে।

এ বছর প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক কর্তৃক ঋণ বিতরণ ও শাখা সম্প্রসারণ ও বাণিজ্যিক ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক গত ৩০ জুন ৬৪ জেলার প্রায় ৯ হাজার ৫১৩ বিদেশগামী কর্মীকে ‘অভিবাসন ঋণ’ বাবদ প্রায় ৭৪ কোটি টাকা প্রদান করেছে। আর এসব ঋণ কোনো জামানত ছাড়াই ৯ শতাংশ মুনাফায় তিন দিনের মধ্যে দেয়া হয়। তা ছাড়া এবছর বিদেশফেরত প্রায় ১৫০ জন কর্মীকে পুনর্বাসন ঋণ দেয়া হয়েছে। বর্তমানে এই ব্যাংকের ৪৯টি শাখা আছে এবং চলতি অর্থবছরে আরো ২৫টি শাখা খোলার পরিকল্পনা আছে।

এসব ছাড়াও চলতি বছরে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের মাধ্যমে পিএসসি, জেএসসি, এসএসসি ও এইইচএসসি ক্যাটাগরিতে প্রবাসী কর্মীর মেধাবী ৭৬৮ জন সন্তানকে ১ কোটি ১০ লাখ ১৬ হাজার ১০০ টাকা এককালীন বৃত্তি দিয়েছে মন্ত্রণালয়টি। যেখানে গত বছর মাত্র ১৬৫ জন প্রবাসী কর্মীর সন্তানকে দেয়া হয়েছিল ২৪ লাখ ৩৭ হাজার টাকার বৃত্তি।

এ ব্যাপারে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি বলেন, ‘বর্তমানে প্রায় ৯৬ লাখ বাংলাদেশের নাগরিক অভিবাসী হিসেবে ১৬০টি দেশে সুনামের সাথে কাজ করছেন। বিশাল সংখ্যক এই প্রবাসীরা বেকারত্বের উপর চাপ কমানোর পাশাপাশি মেধা, শ্রম ও নিরলস প্রচেষ্টার মাধ্যমে দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।’

পরিকল্পিত সবগুলো কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপিত হলে প্রতি বছর ৪ থেকে ৫ লাখ দক্ষ জনশক্তি তৈরি হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

উল্লেখ্য, ২০০১ সালের ২০ ডিসেম্বর তারিখে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান নামে একটি পৃথক মন্ত্রণালয় স্থাপন করে বাংলাদেশ সরকার। এর পর ৪টি অধীনস্ত দপ্তর নিয়ে যাত্রা শুরু করে মন্ত্রণালয়টি।

সোনালীনিউজ/সুজন

Wordbridge School
Link copied!