• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

প্রাণের খোঁজে শনির চাঁদে সাবমেরিন পাঠাচ্ছে নাসা


নিজস্ব প্রতিবেদক ফেব্রুয়ারি ২, ২০১৬, ০৫:৫৫ পিএম
প্রাণের খোঁজে শনির চাঁদে সাবমেরিন পাঠাচ্ছে নাসা

সোনালীনিউজ ডেস্ক

কোনো মহাকাশযান নয়।
নয় কোনো ভিন গ্রহের মাটি ঢুঁড়ে-ফুঁড়ে বেড়ানো কোনো‘রোভার’ যানও।
এবার সাবমেরিন পাঠানো হচ্ছে মহাকাশে! সমুদ্রের তলায় ডুব দিয়ে প্রাণের অস্তিত্বের সন্ধানে।
সাবমেরিন যখন, তখন তাকে তো নামতেই হবে সমুদ্রের অতলে। তা অবশ্য আমাদের এই বাসযোগ্য গ্রহের কোনো অতলান্ত সাগর বা মহাসাগর নয়। ২০৪০ সালের মধ্যেই নাসা ওই সাবমেরিন পাঠানোর প্রস্তুতি-তোড়জোড় শুরু করেছে। এই সৌরমণ্ডলের ষষ্ঠ গ্রহ শনির বৃহত্তম চাঁদ- ‘টাইটান’-এ। যে আদিগন্ত, অতলান্ত মহাসাগরটি ভরে রয়েছে তরল ইথেন বা মিথেনের মতো হাইড্রোকার্বনে। যার তলায় জল তরল বা জমাট বাঁধা অবস্থায় থাকতে পারে বলে মনে করছেন জোতির্বিজ্ঞানীরা।
পাসাডেনায়, নাসার জে়ট প্রোপালসান ল্যাবরেটরির (জেপিএল) মিডিয়া সেলের মুখপাত্র এলিজাবেথ ল্যান্ডু এই খবর দিয়ে ই-মেলে জানিয়েছেন, ‘পরিকল্পনাটি প্রাথমিক স্তরে থাকলেও আর দেড় দশকের মধ্যেই তা বাস্তবায়িত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। আর সেটা হলে মঙ্গলে ‘রোভার’ ও ‘৬৪/পি-শ্যুরিমোভ-গেরাশিমেঙ্কো’ ধূমকেতুতে ‘ল্যান্ডার’ মহাকাশযান নামানোর পর মহাকাশে তৃতীয় বৃহত্তম পদক্ষেপ করবে মানবসভ্যতা।’
ওই প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত মার্কিন মুলুকের মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং‌ ও রোবটিক্স বিভাগের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর উদ্দালক মিশ্র জানাচ্ছেন, ‘প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে এই প্রথম কোনও রোবটিক সাবমেরিন যাবে মহাকাশে। সাবমেরিনটি নামানো হবে শনির বৃহত্তম চাঁদ টাইটানের উত্তর মেরুর সবচেয়ে বড় মহাসাগর ‘ক্র্যাকেন মেয়ার’-এর তলায়। শনির ৬২টি চাঁদের মধ্যে সবচেয়ে বড় চাঁদ টাইটানের দুই মেরুতে রয়েছে তরল মিথেন ও ইথেনের তিন-তিনটি মহাসাগর। ক্র্যাকেন মেয়ার, পাঙ্গা মেয়ার ও লিগেরাই মেয়ার। ক্র্যাকেনই তার মধ্যে সবচেয়ে বড় আর গভীর মহাসাগর। শূন্যের নিচে ১৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের (বা, মাইনাস ২৯০ ডিগ্রি ফারেনহাইট) হাড়-জমানো ঠাণ্ডায় তরল মিথেনের মহাসাগরের তলায় তরল বা জমাট বাঁধা বরফ হিসেবে প্রচুর পরিমাণে জলও রয়েছে বলে জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের ধারণা। থাকতে পারে অণু-জীবও। তাদের সন্ধান করাটাই হবে শনির চাঁদের মহাসাগরে সাবমেরিন নামানোর অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য।’
ভারতে ভিন গ্রহ নিয়ে গবেষণায় পুরোধা জ্যোতির্বিজ্ঞানী, বেঙ্গালুরুর ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ অ্যাস্ট্রোফিজিক্সের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর সুজন সেনগুপ্ত জানাচ্ছেন, ‘বৃহস্পতির চাঁদ গ্যানিমিদের পরেই এই সৌরমণ্ডলের দ্বিতীয় বৃহত্তম চাঁদ টাইটান যে শুধুই আধখানা পৃথিবীর মতো গায়ে-গতরে বড়, তা-ই নয়, এই সৌরমণ্ডলে আর কোনও চাঁদেরই যে ‘বিশেষ গুণ’টি নেই, সেই ‘বিশেষ গুণ’টিই টাইটানকে জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের কাছে ‘সোনার চাঁদ’ করে তুলেছে। সেই গুণটি হল- টাইটানেরও অত্যন্ত পুরু বায়ুমণ্ডল রয়েছে। ৬০০ কিলোমিটার জুড়ে বা তারও বেশি। অনেকটা পৃথিবীর মতোই। সেই বায়ুমণ্ডলের পুরোটাই ভরা রয়েছে মেঘে। সেই বায়ুমণ্ডলের ৯৫ শতাংশই ভরা রয়েছে নাইট্রোজেন গ্যাসে। মিথেন সেখানে গ্যাস হিসেবে রয়েছে মাত্র্ই পাঁচ শতাংশ। হু হু করে বাতাস বয়ে চলে টাইটানেও। টাইটানের দুই মেরুতে তরল মিথেনের তিনটি মহাসাগরের তলায় তরল বা জমাট বাঁধা বরফ হিসেবে প্রচুর পরিমাণে জল থাকারও যথেষ্টই সম্ভাবনা রয়েছে। মাইনাস ১৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের হাড়-জমানো কনকনে ঠাণ্ডাই টাইটানে মিথেন গ্যাসের বিশাল ভাণ্ডারকে তরল অবস্থায় ধরে রেখেছে। আর সেই তরল মিথেন বা ইথেনের মহাসাগরের তলায় জলকে মূলত বরফ করেই বেঁধে রেখেছে। আমাদের বাসযোগ্য গ্রহের মতো টাইটানের পিঠেও রয়েছে প্রচুর ধুলো-বালি ও পাথর। তাই তার রংটাও হলদেটে বাদামি। পাথুরে গ্রহে-উপগ্রহেই প্রাণ বা অণু-জীবের অস্তিত্বের সম্ভাবনাটা বেশি থাকে। পাথুরে গ্রহ বলেই পৃথিবী বাসযোগ্য গ্রহ হয়ে উঠতে পেরেছে।’
কিন্তু প্রাণের সন্ধানে যেমন ‘অপরচুনিটি’ বা ‘মিস কিউরিওসিটি’র মতো দু’টি মার্কিন ‘রোভার’ মহাকাশযান পাঠানো হয়েছে মঙ্গলে, তা না করে ‘প্রাণ’ খুঁজতে কেন সাবমেরিন পাঠানোর কথা ভাবা হয়েছে শনির চাঁদ টাইটানে?
জবাবে নাসার রোবটিক সাবমেরিন প্রকল্পে জড়িত কম্পিউটার বিজ্ঞানী উদ্দালক মিশ্র মেরিল্যান্ড থেকে ই-মেলে আনন্দবাজারকে জানিয়েছেন, ‘শনির চাঁদে তরল মিথেনের মহাসাগরের অতল অন্ধকারে ঢুঁ মারতে হবে বলেই সাবমেরিন পাঠানোর কথা ভাবা হয়েছে। জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের অনুমান, যদি অণু-জীব থেকেও থাকে টাইটানে, তা হলে তা মিথেন মহাসাগরের অতলে থাকারই সম্ভাবনা বেশি। মিথেন, ইথেন বা টাইটানের বায়ুমণ্ডলে থাকা বিষাক্ত গ্যাস অ্যামোনিয়াতেও বাঁচতে পারে, এমন ব্যাকটেরিয়া বা অণু-জীবের (মাইক্রো-ফনা) সন্ধানে‌ই সাবমেরিন নামানো হবে শনির চাঁদের মহাসাগর ক্র্যাকেন মেয়ারের তলায়। যেহেতু সেই মিথেন মহাসাগরের তলায় তরল বা জমাট বাঁধা বরফ হয়ে প্রচুর জল থাকতে পারে বলে মনে করছেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা, তাই প্রাণের হদিশ সেখানেও মিলতে পারে বলে অনুমান করা হচ্ছে। পৃথিবীতে যে ভাবে সাগর-মহাসাগরের জন্ম হয়েছিল, কোটি কোটি বছর আগে সেই ভাবেই তুমুল মিথেন-বৃষ্টি থেকে মিথেন মহাসাগরের জন্ম হয়েছিল টাইটানে। মিথেন কিন্তু আবহাওয়া-চক্রের একটি বড় নির্ণায়ক অংশ। মঙ্গলেও মিথেনের অস্তিত্বের প্রাথমিক প্রমাণ মিলেছে। সূর্যের আলোয় সেই মিথেনের ভেঙে যাওয়ার কথা। তার পরিমাণ কমে যাওয়ার কথা দীর্ঘ সময়ের ব্যবধানে। তা সত্ত্বেও কী ভাবে কোটি কোটি বছর ধরে মিথেনের মহাসাগর টিঁকে রয়েছে টাইটানে, সেই কৌতুহল এখনও মেটেনি। জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের একাংশের অনুমান, অণু-জীবের অস্তিত্বই টাইটানের মিথেন-চক্রকে স্বাভাবিক রেখেছে। শনির চাঁদে মিথেনের ভাঁড়ারে টান পড়তে দেয়নি।  প্রায় দেড় দশক ধরে শনির কক্ষপথে চক্কর মারা নাসার ‘ক্যাসিনি’ ও ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির ‘হাইগেন্‌স’ মহাকাশযানের পাঠানো তথ্যই টাইটানে সাবমেরিন পাঠানোর ভাবনা বিজ্ঞানীদের মাথায় ঢুকিয়েছে।’সূত্র: আনন্দবাজার

সোনালীনিউজ/এইচএআর

Wordbridge School
Link copied!