• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বছরজুড়ে আলোচিত ছিল ঝিনাইদহে জঙ্গি দমন অভিযান


আতিকুর রহমান, ঝিনাইদহ ডিসেম্বর ৩১, ২০১৭, ১০:১৭ এএম
বছরজুড়ে আলোচিত ছিল ঝিনাইদহে জঙ্গি দমন অভিযান

ঝিনাইদহ : ঝিনাইদহব্যাপী শত শত গ্রেফতার, একাধিক ব্যক্তিকে নিখোঁজের পর গ্রেফতার দেখানো ও জঙ্গিদমন অভিযান ছিল ২০১৭ সালে জেলার আলোচিত ঘটনা। বছর জুড়েই ছিল সাধারণ মানুষের মাঝে চরম উদ্বেগ আর উৎকন্ঠা। কে কখন সাদা পোশাকধারীদের দ্বারা গুম হয় এই ভয়ে মানুষ তটস্থ ছিল। বছর শেষেও সেই উৎকন্ঠার অবসান ঘটেনি।

এছাড়া জামায়াত বিএনপি গ্রেফতারের পাশাপাশি বিভিন্ন মামলায় পুলিশ কয়েক হাজার আসামীকে গ্রেফতার করে। উদ্ধার হয় মাদক ও দেশি বিদেশী অস্ত্র। ২০১৭ সালে ঝিনাইদহে বড় ধরণের মাদক বিরোধী সমাবেশ করে পুলিশ চমক দেখায়। সেখানে জেলার দাগী ও চিহ্নিত ৭১ জন মাদক বিক্রেতা ও ৮৭২ জন মাদকসেবী আত্মসমর্পন করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে। জেলার সার্বিক আইন শৃংখলা সন্তোষ জনক হলেও সাদা পোশাকে তুলে নিয়ে টাকা আদায়ের ফলে নীরিহ ও নিরাপরাধ মানুষ বেকায়দায় পড়ে। কোন কোন উপজেলায় বছর শেষেও সেই ধারা অব্যাহত আছে।

তথ্য নিয়ে জানা গেছে ২০১৭ সালে কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম, র্যা ব ও পুলিশ অভিযানে মহেশপুরের বজরাপুর গ্রামে নিহত হয় সদর উপজেলার পোড়াহাটি গ্রামের চৈতি বাউলের ছেলে নওমুসলিম আব্দুল্লাহ (৩৮) ওরফে প্রভাত ওরফে বেড়ে ও একই উপজেলার ধানহাড়িয়া চুয়াডাঙ্গা গ্রামের আত্তাপ ওরফে আতা ড্রাইভারের ছেলে তুহিন (২৬)। এরা জঙ্গীর সাথে সংশ্লিষ্টার দাবী করে পুলিশ ও র্যা ব। এছাড়া পোড়াহাটী, লেবুতলা, ধানহাড়িয়া চুয়াডাঙ্গা ও মহেশপুরের বজরাপুর জঙ্গী আস্তানা থেকে উদ্ধার হয় বিপুল পরিমারণ রাসায়নিক দ্রব্য, ইলেকট্রিক ডিভাইস, বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র, গুলি, মোটরসাইকেল ও বোমা তৈরির সরঞ্জাম।

২০১৭ সালের ২১ এপ্রিল ঝিনাইদহ সদর উপজেলার পোড়াহাটি গ্রামের জঙ্গী আস্তানার সন্ধান পায় পুলিশ। ওই বাড়িটি ছিল নওমুসলিম আব্দুল্লাহর। দুই দিন ব্যাপী অভিযোন শেষে সেখান থেকে ২০টি রাসায়নিক কনটেইনার, সুইসাইডাল বেল্ট ৯টি, একটি প্রেসার কুকার বোম, ৩টি সুইসাইডাল ভেষ্ট, ৮/১০টি মাইন সাদৃশ্য বস্তু, প্রচুর পরিমানে ইলেক্ট্রিক সার্কিট, একশ প্যাকেট লোহার ছোট বল, ১৫টি জেহাদী বই, ৭ রাউন্ড গুলিসহ একটি পিস্তল ও একটি চাপাতি উদ্ধার করা হয়।

ঢাকা থেকে আসা কাউন্টার টেরিরিজম ইউনিটের ৭জন বোমা নিস্ক্রিয়কারী সহ ৩০ জন সদস্য, খুলনা রেঞ্জ পুলিশ, ঝিনাইদহ পুলিশ, এলআইসি ও পিবিআই টিমসহ ৪’শ সদস্য এ অভিযানে অংশ নেন। অভিযানকালে খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি দিদার আহমেদের নেতৃত্বে পরিচালিত এ অভিযানে টেরিরিজম ইউনিটের এডিসি নাজমুল, বোমা ডিসপোজালের এডিসি রহমত ও ঝিনাইদহ পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান অংশ নেন।

গত ৭ মে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার লেবুতলা ও মহেশপুর উপজেলার বজরাপুর গ্রামে পৃথক দুটি জঙ্গী আস্তানার সন্ধান পায় পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটি। প্রচন্ড গোলাগুলির এক পর্যায়ে মহেশপুরের বজরাপুরে নিহত হয় তুহিন ও আব্দুল্লাহ। পুলিশের ভাষ্যমতে ঘরের ভেতরে সুইসাইডাল ভেস্টেরে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আত্মঘাতি হয় জঙ্গীরা।

পরে বাড়ির মালিক জহিরুল ইসলাম ও তার ছেলে জসিমকে পুলিশ আটক করে। একই দিন ঝিনাইদহ সদর উপজেলার লেবুতলা গ্রামের শরাফত মন্ডলের বাড়িতে পুলিশ অভিযান চালিয়ে ৮টি বোমা ও ১টি নাইন এমএম পিস্তল উদ্ধার করে। ঘটনাস্থল থেকে শামীম নামের একজনকে আটক করে পুলিশ। ওই বাড়িটি জঙ্গীদের নিরাপদ ঘাটি ছিল বলে সে সময় পুলিশ দাবী করে।

একই বছরের ১৬ মে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ধানহাড়িয়া চুয়াডাঙ্গা গ্রামে সন্দেহভাজন দুটি ‘জঙ্গি আস্তানায়’ অভিযান চালিয়ে র্যা বের বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট সক্রিয় দুটি সুইসাইডাল ভেস্ট ও ৪টি বোমা উদ্ধার করে। সেলিম ও প্রান্ত নামে নব্য জেএমবি’র ২ সদস্যকে গ্রেফতারের পর তাদের স্কীকারোক্তি মোতাবেক এই অভিযান চালানো হয়। বিদায়ী বছরে র্যা ব জঙ্গী তামিম-সরোয়ার গ্রুপের প্রায় ১০/১২ জন সদস্যকে গ্রেফতার করে। এদিকে জঙ্গী দমন অভিযানের খবর মিডিয়ায় লাইভ প্রচার হলে জেলাব্যাপী বিষয়টি আলোচনায় উঠে আসে।

জঙ্গী দমন অভিযানের মাঝেই বিভিন্ন গ্রাম থেকে মাদ্রাসার ছাত্র, মসজিদের ইমাম, মোয়াজ্জিন, বিএনপি, ছাত্রদল এমনকি সরকারী দলের নেতাকর্মীরাও নিখোজ হতে থাকে। একের পর এক বিভিন্ন শ্রেনীপেশার মানুষ নিখোঁজ হওয়ান পর আইনশৃংখলা বাহিনীর অস্বীকারের ফলে পরিবারগুলোতে আতংক দেখা দেয়। পরে অবশ্য দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে জঙ্গী বা সন্ত্রাসী সন্দেহে তাদের গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করা হয়। এখনো কোটচাঁদপুরের হরিনদিয়া গ্রামের সাজেদুর রহমান ও তার ছোট ভাই মাকছুদুর রহমান রানা গুম হয়ে আছেন। তাদেরকে এখনো উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!