• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বাংলাদেশ ব্যাংকের নিরাপত্তা ব্যবস্থা খুবই দুর্বল


নিজস্ব প্রতিবেদক এপ্রিল ২৫, ২০১৬, ০১:৫৯ পিএম
বাংলাদেশ ব্যাংকের নিরাপত্তা ব্যবস্থা খুবই দুর্বল

সোনালীনিউজডেস্ক

বাংলাদেশ ব্যাংকের নেটওয়ার্ক সিস্টেমে ফায়ারওয়াল (কম্পিউটারের ডাটা সংরক্ষণ সিস্টেম) ব্যবস্থা না থাকায় হ্যাকাররা ৮১ মিলিয়ন ডলার চুরি করতে সক্ষম হয়। এই ঘটনাকে বিশ্বের সবচাইতে বড় ব্যাংক কেলেঙ্কারি বলে অভিহিত করা হয়েছে। তবে হ্যাকারদের লক্ষ্য আরো বড় থাকলেও বানান ভূলের কারণে তারা ধরা পড়ে।

এমি গর্ডন এর লেখা ডেইলি মেইলের প্রতিবেদনে এ ধরনের মন্তব্য করে বলা হয়, হ্যাকাররা যদি ডিকশনারি ব্যবহার করত তাহলে তারা পুরো ১ বিলিয়ন ডলারই হ্যাক করতে পারত।

৮১ মিলিয়ন ডলার স্থানান্তরের পর বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে আরো ৮৫০ মিলিয়ন ডলার স্থানান্তর করার জন্য নিউইয়র্ক ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের নেটওয়ার্কে বার্তা পাঠায় হ্যাকাররা। এই বার্তায় ‘ফাউন্ডেশন’ বানান ‘ফানন্ডেশন’ লিখায় ভুল ইউজারকারীকে সনাক্ত করা যায়। প্রায় বিশজন এই টাকা চুরির সাথে যুক্ত ছিল। চুরি হওয়া ৮১ মিলিয়ন ডলারের মধ্যে তারা ৬০ মিলিয়ন ডলার চুরি করে।

সাইবার অপরাধীরা ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সিস্টেমে প্রবেশ করে। তারা ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে মোট ৯৫১ মিলিয়ন ডলার হ্যাক করতে চেয়েছিল। বেশিরভাগ পেমেন্ট অর্ডার বন্ধ করা গেলেও ৮১ মিলিয়ন ডলার ফিলিপাইনের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে স্থানান্তরিত হয়ে ক্যাসিনোতে চলে যায়। তবে ৮১ মিলিয়ন ডলারের অধিকাংশেরই কোন হদিস পাওয়া যায়নি।

তদন্তকারী দলের সদস্যরা বলেছেন, নিরাপত্তার অভাবে বাংলাদেশ ব্যাংক হ্যাকারদের সহজ লক্ষ্যে পরিণত হয়েছে। তবে এটি বের করা কঠিন যে হ্যাকাররা কিভাবে এবং কোন জায়গা থেকে এই কাজ করেছে। অবিলম্বে অপরাধীকে সনাক্ত করতে হবে। বাংলাদেশ পুলিশ এই অপরাধের সাথে জড়িত ২০ জন বিদেশীকে সনাক্ত করেছে। কিন্ত তারা শুধুমাত্র দাবার গুঁটি। তাই মূল হোতাকে সনাক্ত করা অত্যন্ত জরুরি।

বাংলাদেশ পুলিশের তদন্ত বিভাগের ফরেনসিক ট্রেনিং ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের প্রধান মোহাম্মদ শাহ আলম বলেন, যদি ফায়ারওয়াল ব্যবহার করা হত তাহলে হ্যাক করা এত সহজ হত না। আধুনিক নেটওয়ার্কিং ডিভাইসের কোন প্রযুক্তি হ্যাকাররা ব্যবহার করেছিল তা সনাক্ত করা যাচ্ছে না। 

মোহাম্মদ আলমের এই মন্তব্যের প্রেক্ষিতে অপটিভের সাইবার ফার্ম এর পরামর্শদাতা জীফ উইচম্যান বলেন, ‘শাহ আলমের মন্তব্য অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এটি এমন একটি সংস্থা, যেখানে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার রক্ষিত আছে আর তারা বলছে এর বেসিক কোন নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই, যাতে তারা আগে থেকেই সতর্ক থাকতে পারে’।

বিশ্ব ব্যাংকের নিরাপত্তা দলের সাবেক সদস্য এবং বিনিয়োগ সংস্থা স্ট্রাটেজিক সাইবার ভেনচার এএলসি এর প্রধান নির্বাহী টম কেলারমান বলেন, আলম বাংলাদেশ ব্যাংকের নিরাপত্তা ব্যবস্থার যে শোচনীয় বর্ণনা দিয়েছেন তা খুবই গুরুতর। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে।

তিনি বলেন, অনেক ব্যাংক তাদের নেটওর্য়াকের নিরাপত্তা ব্যবস্থার সুরক্ষা করতে পারে না।  কারণ তারা তাদের সুবিধার জন্য শক্তিশালী নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য বাজেটকেই বড় করে দেখে ।

শাহ আলমের মতে, বাংলাদেশ ব্যাংকে মোট ৫ হাজার কম্পিউটার আছে। যে বিভাগ থেকে টাকা চুরি হয়েছে সেটি একটি বদ্ধ রুম। টমকেলার বলেন, ব্যাংকে দিবারাত্রি, ছুটির দিনসহ সর্বক্ষণ সব কার্যকলাপ নিরীক্ষণ করতে কর্মী মোতায়েন করা দরকার ছিল। কারণ যখন হ্যাকাররা আরো ৮৫০ মিলিয়ন ডলার চুরির জন্য ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে পেমেন্ট স্থানান্তরের অনুরোধ পাঠিয়েছিল।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮১ মিলিয়ন ডলার চুরিকে কেন্দ্র করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর , তার দুই ডেপুটি এবং উচ্চপদস্থ সচিব তাদের চাকরি হারিয়েছেন। সরকার নিদারুণভাবে কলঙ্কের হাত থেকে উদ্ধার হয়ে ক্ষতিপূরণ করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। সূত্র: ডেইলি মেইল

সোনালীনিউজ/এমএইউ

Wordbridge School
Link copied!