• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বাহরাইনে ভাগ্যবঞ্চিত ৫ হাজার বাংলাদেশি


নিজস্ব প্রতিবেদক জানুয়ারি ১১, ২০১৬, ০৬:১৭ পিএম
বাহরাইনে ভাগ্যবঞ্চিত ৫ হাজার বাংলাদেশি

বিশেষ প্রতিনিধি
বাহরাইন থেকে পাঁচ হাজার বাংলাদেশি কর্মীকে দেশে ফিরে আসতে হচ্ছে। তারা বাহরাইনে বৈধ হওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ওসব বাংলাদেশি কর্মী সেখানে বৈধ হওয়ার ক্ষেত্রে মূলত দালালের মাধ্যমে আবেদন করেছিল। কিন্তু দালালরা সেই আবেদন যথাযথ প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন করেনি। ফলে এখন যেকোনো সময় তাদের দেশে ফেরত পাঠানো হতে পারে। বর্তমানে বাহরাইনে ৪৩ হাজার বাংলাদেশি কর্মীর মধ্যে ওই পাঁচ হাজারের মতো কর্মী ভাগ্যবঞ্চিত হিসেবে হতাশার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। জনশক্তি রপ্তানি সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বাহরাইনে অবৈধ বাংলাদেশি শ্রমিকদের বৈধ হওয়ার শেষ সময় ছিল গতবছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত। ওই সময়ের মধ্যে প্রায় ৩৮ হাজার বাংলাদেশী কর্মী বাহরাইন কর্তৃপক্ষের কাছে বৈধ হওয়ার জন্য আবেদন করেন। এখন বাহরাইন কর্তৃপক্ষ আবেদনকারীদের বৈধ করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। আগামী দু’এক মাসের মধ্যে অবৈধ কর্মীরা বৈধ হতে পারবেন। মূলত প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অনুরোধেই ওই দেশের কর্তৃপক্ষ অবৈধ বাংলাদেশীদের বৈধ করার সিদ্ধান্ত নেয়। ইতোমধ্যে বাহরাইন লেবার মার্কেট রেগুলেটরি অথরিটি (এলএমআরএ) অবৈধদের বৈধ করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। একই সঙ্গে বন্ধ শ্রমবাজার বাহরাইনে নতুন করে কর্মী নিয়োগের জন্য আলাপ-আলোচনা চলছে। দীর্ঘ চার বছর ধরে ওই শ্রম বাজারটি বন্ধ রয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের ওই বাজারটি খুলে গেলে অনেক কর্মীই চাকরি নিয়ে সেখানে যেতে পারবেন।
সূত্র জানায়, ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ও বাহরাইনের এলএমআরএর সাথে অবৈধ কর্মীদের বৈধ করার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছিল। এ নিয়ে কয়েক দফা বাহরাইনের প্রতিনিধি দল এদেশে এসেছে। বাংলাদেশ থেকেও প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রীর নেতৃত্বে প্রতিনিধি দল কয়েক দফা বাহরাইন সফর করেছেন। তারপরই এলএমআরএ বিষয়টি নিষ্পত্তি করার উদ্যোগ নেয়। দীর্ঘ অপেক্ষার পর অবৈধ বাংলাদেশিদের বৈধ করার কাজ শুরু করে এলএমআরএ। একই সাথে বাহরাইন কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগের বিষয়েও আগ্রহ দেখিয়েছে। তবে তারা কিছু শর্ত দিয়েছে। ওই শর্ত পূরণ করার পর কর্মী নেবে বলে জানিয়েছে।
সূত্র জানায়, এখন থেকে সাশ্রয়ীভাবে বাহরাইনে কর্মী পাঠাতে হবে। পাশাপাশি চাকরির মেয়াদের বেশি সময় থাকতে পারবে না। এমন কিছু শর্তের কথা আরোপ করা হয়েছে। বর্তমানে জনশক্তি রপ্তানিকারকরা ৩ থেকে ৫ লাখ টাকা করে নিয়ে বাহরাইনে কর্মী নিয়োগ করেছে। তাতে কর্মীরা সেখানে কাজ করে তাদের খরচের টাকাই তুলতে পারছে না। এ কারণে অনেক কর্মী লুকিয়ে লুকিয়ে কাজ করছে। যার কারণে বাংলাদেশি কর্মীরা অবৈধ হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় এলএমআরএর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ওসামা আবদুল্লা আল আবছি সম্প্রতি সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেন। ওই ঘোষণা অনুযায়ী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বৈধ হওয়ার সুযোগ ছিল। যারা এই সুযোগ নিতে পারেননি তাদের দেশে ফিরে আসতে হবে। কাজে অনুপস্থিত বা কাজ থেকে পলাতক, কাজ শেষে অতিরিক্ত সময় অবস্থান, কাজ শেষের পর পলাতক ও ভিসার মেয়াদ শেষ হবার পর নবায়ন না করে অতিরিক্ত সময় অবস্থানকারী প্রবাসী কর্মীরা সাধারণ ক্ষমার আওতাভুক্ত। এখন বাংলাদেশি কর্মীরা বৈধ হওয়ার পর ৬ মাসের জন্য যেকোনো প্রতিষ্ঠানে কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবেন। একই সাথে যদি কেউ দেশে ফিরতে চায় তাহলে দেশেও ফিরতে পারবেন। বাহরাইন ইমিগ্রেশন তাদের কোনো বাধা দেবে না। যদি সাধারণ ক্ষমার সময় পার করে কেউ দেশে ফিরতে চান তাহলে তারা কালো তালিকাভুক্ত হবেন। সেক্ষেত্রে তাদের বিরুদ্ধে ইমিগ্রেশন পুলিশ ব্যবস্থা নেবে।
সূত্র আরো জানায়, বাহরাইনের শ্রমবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা লেবার মার্কেট রেগুলেটরি অথরিটির (এলএমআরএ) তথ্যানুযায়ী ওই দেশটিতে বিভিন্ন দেশের ৬১ হাজারের মতো অবৈধ অভিবাসী আছে। তারমধ্যে প্রায় ৪৩ হাজারই বাংলাদেশি নাগরিক। এ অবস্থায় বৈধ হওয়ার সুযোগ পাওয়ার পরপরই ১০ হাজার অবৈধ প্রবাসী সাধারণ ক্ষমার সুযোগ চেয়ে আবেদন করেছেন। তারমধ্যে ভিসা পরিবর্তন করে বৈধভাবে বাহরাইনে কাজ করার সুযোগ চেয়েছেন ৮ হাজার প্রবাসী। ২ হাজার অবৈধ প্রবাসী পুলিশের হাতে আটক হলেও পরে তারা কোনো রকম জরিমানা ছাড়াই দেশে ফিরেছেন। এখন যারা সঠিকভাবে আবেদন করতে পারেননি তারা আবার সুযোগ পাবেন কি না এ বিষয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় কিছুই জানাতে পারেনি।
এ প্রসঙ্গে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, দীর্ঘদিন বাংলাদেশের ওই শ্রমবাজারটি বন্ধ ছিল। ওই কারণে সেখানে থাকা হাজার হাজার বাংলাদেশিসহ বিভিন্ন দেশের কর্মীরা অবৈধ হয়ে পড়েন। কেউ কেউ ৭ থেকে ৮ বছর ধরে দেশটিতে অবৈধভাবে বসবাস করে আসছেন। সাধারণ ক্ষমার মাধ্যমে তারা এখন বৈধ হওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। দীর্ঘদিনের চেষ্টার পর বাহরাইন কর্তৃপক্ষ এমন সিদ্ধান্তকে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় স্বাগত জানিয়েছে। প্রায় চার বছরের চেষ্টার ফলে বাহরাইনে অবৈধ কর্মী বৈধ হচ্ছে। মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি দল একাধিকবার দেশটির কর্তৃপক্ষের সাথে এ বিষয়ে আলাপ-আলোচনাও করেছেন।

 

সোনালীনিউজ/এমএইউ

Wordbridge School
Link copied!