• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
কর্পোরেট অপচুক্তির তালিকায় সবার উপরে বাংলাদেশ

বিনিয়োগের উছিলায় ৭০০ কোটি টাকার কর ফাঁকি!


বিশেষ প্রতিনিধি মে ২৮, ২০১৬, ০৫:৪৮ পিএম
বিনিয়োগের উছিলায় ৭০০ কোটি টাকার কর ফাঁকি!

বাংলাদেশে বিনিয়োগের সুযোগ নিয়ে বিদেশি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিবছর প্রায় ৭০০ কোটি টাকার কর ফাঁকি দিচ্ছে। ১৮টি দ্বি-পাক্ষিক ‘চুক্তি’র মাধ্যমে ১৫টি দেশের কয়েকটি প্রতিষ্ঠান দেশ থেকে এ টাকা নিয়ে যাচ্ছে।

বেসরকারি সংস্থা একশনএইড-এর এক গবেষণায় এ চিত্র উঠে এসেছে। ওই গবেষণায় চুক্তিগুলোকে ‘কর্পোরেট অপচুক্তি’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এতে বলা হয়, মূলত রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান ও সরকারের কাছ থেকে সুবিধা নিয়ে বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের মতো নিয়ন্ত্রণমূলক ‘অপচুক্তি’ করিয়ে আর্থিক সুবিধা নিচ্ছে। কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দক্ষতা বৃদ্ধি এবং পুনরায় বিনিয়োগের কথা থাকলেও কর্পোরেটরা লাভকেই বেশি গুরুত্ব দেয় দাবি করে গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, এদেশ থেকে মুনাফা নেয়ার পাশাপাশি ফাঁকি দেয়া করের টাকাও নিয়ে নিচ্ছে প্রতিষ্ঠানগুলো।

শনিবার (২৮ মে) রাজধানীর মহাখালীর ব্র্যাক সেন্টারে ‘দুর্বিনীত কর-আঘাত, অসমর্থিত বাজেট’ বিষয়ে আলোচনায় একশনএইড পরিচালিত ‘অপচুক্তি’ প্রতিবেদনের ফলাফল তুলে ধরা হয়। অনুষ্ঠানে ‘অপচুক্তি’ নামের গবেষণাটি তুলে ধরেন একশনএইড বাংলাদেশের ডিরেক্টর আজগর আলী সাবরি।

গবেষণাটিতে ৫০০’রও বেশি আন্তর্জাতিক চুক্তি নিয়ে সমীক্ষা করা হয়। যেখানে দেখা যায়, বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশেই সর্বোচ্চ সংখ্যক ১৮টি ‘অপচুক্তি’ আছে এবং বেশি কর ফাঁকির ঘটনা ঘটছে। এই চুক্তিগুলোর একটি ধারার কারণে বিদেশী শেয়ারহোল্ডারদের টাকার উপর করের লভ্যাংশ নিতেও বাংলাদেশের ক্ষমতা সীমিত। কর ফাঁকির এই টাকা দিয়ে বাংলাদেশে প্রতিবছর ৩৪ লাখ মানুষের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা যেতো বলে গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

এ প্রসঙ্গে একশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবির বলেন, আমাদের সক্ষমতার অভাবে কর্পোরেটরা বেশি সুযোগ নিচ্ছে। আমরা বলছি বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। তবে সেটা করতে গিয়ে আমরা যদি তাদের কর ফাঁকি দেয়ার সুযোগ করে দেই, সেটা যৌক্তিক না। আমাদের গরীব মানুষের সুবিধা বাড়াতে হবে কর বাড়ানোর মধ্য দিয়ে।

প্রতিবেদন নিয়ে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি এবং অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক বলেন, কর্পোরেট ট্যাক্স এর মতো প্রত্যক্ষ কর আদায়ে আমরা খুব বেশি চতুর ও দক্ষ হতে পারিনি। এছাড়া বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে আমাদের সুযোগ দিতে হয়েছে। তবে এক্ষেত্রে আমাদের যতটা কঠোর ও কৌশলি হওয়া উচিৎ ছিল সেটা আমরা হতে পারিনি।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ বলেন, আশির দশকে আমাদের বেশি বিদেশি বিনিয়োগ দরকার ছিল। তাই বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোকে ডেকে আনতে হয়েছে। সেই সুযোগে তারা তাদের মতো করে চুক্তি করেছে এদেশের নীতিনির্ধারকদের দিয়ে। আমাদের দেশে কর ফাঁকি দিয়ে টাকা নিয়ে যাচ্ছে। এটা হতে পারে না।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের সদস্য ড. স্বপন কুমার বালা বলেন, যে দেশগুলোর সঙ্গে চুক্তি করা হয়েছে, সেদেশে যদি আমাদের বিনিয়োগ করা যেতো তবে চুক্তির আলোকে আমরা কথা বলতে পারতাম। চুক্তি থেকে কিভাবে সুবিধা নিতে হবে সে বিষয়ে সচেতনতা দরকার। আমরা অনেক ক্ষেত্রে সচেতন ছিলাম না।

বাংলাদেশ বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্ট এর প্রধান নির্বাহী ফেরদৌস আরা বেগম বলেন, আমাদের বিদেশী বিনিয়োগের মূল লক্ষ্য ছিল দেশে কর্মসংস্থান তৈরি করা। সেটি হয়নি। উল্টো টাকা নিয়ে যাচ্ছে। তাই বিদেশী বিনিয়োগ আমাদের প্রযুক্তি, কর্মসংস্থান কিংবা দক্ষতা বৃদ্ধিতে কতটা কাজে আসছে? এই বিষয়গুলোও বিবেচনায় আনতে হবে’।

কী করা যেতে পারে এ বিষয়ে আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘জাতিসংঘের বা বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার যে নীতিমালা আছে বিদেশী বিনিয়োগের ক্ষেত্রে, সেটি যদি আমাদের দেশে বাস্তবায়ন করা যায তবে ফাঁকির পরিমান কমিয়ে আনা যাবে। একটি আন্তর্জাতিক ফ্রেমওয়ার্কের মাধ্যমে তা করতে হবে। সেটি না হলে অন্য দেশ সুযোগ বেশি দিয়ে বিনিয়োগকারীদের নিয়ে যাবে। তাই আন্তর্জাতিক মানদণ্ড থাকলে এবং সবাই সেটি মানলে আমরা কর আদায় বেশি করতে পারবো।

অনুষ্ঠানে কর্পোরেট ট্যাক্স ফাঁকি কমাতে কিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়। সেখানে বলা হয়, সব দেশ মিলে একটা একটা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্র তৈরি করতে হবে যাতে কেউ সুযোগ না নিতে পারে। দেশীয় পর্যায়ে চুক্তিগুলো জনমস্মুখে প্রকাশ করতে হবে। সচেতনতা বাড়াতে হবে সরকারসহ সব পর্যায়ে।

সোনালীনিউজ/ ঢাকা/ জেডআরসি

Wordbridge School
Link copied!