• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিনিয়োগ পরিস্থিতির স্থবিরতায় সংকুচিত কর্মসংস্থানের


নিজস্ব প্রতিবেদক এপ্রিল ২০, ২০১৬, ১২:৪৩ পিএম
বিনিয়োগ পরিস্থিতির স্থবিরতায় সংকুচিত কর্মসংস্থানের

সোনালীনিউজ রিপোর্ট

দেশে পর্যাপ্ত অর্থ থাকলেও আশানুরূপ বিনিয়োগ হচ্ছে না। ফলে তৈরি হচ্ছে না কর্মসংস্থানের সুযোগ। মূলত গ্যাস ও জমির সঙ্কট নিরসনে তেমন কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় কয়েক বছর ধরেই বেসরকারি বিনিয়োগে মন্দাবস্থা চলছে। অথচ প্রায় পৌনে দুই লাখ কোটি টাকা নিয়ে ব্যাংকগুলো বসে আছে।

কিন্তু নতুন বিনিয়োগে বেসরকারি উদ্যোক্তারা এগিয়ে আসছেন না। আর উদ্যোক্তা না পেয়ে ব্যাংকগুলো ওই বিপুল অর্থ নামমাত্র সুদে বিভিন্ন বন্ডে বিনিয়োগ করে রেখেছে। ব্যবসায়ী ও ব্যাংকিং খাত সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, আশানুরূপ বিনিয়োগ না হওয়ায় দেশে পর্যাপ্ত কর্মসংস্থানের সুযোগও তৈরি হচ্ছে না। বিগত দু’বছরে মাত্র ৬ লাখ নতুন কর্মসংস্থান হয়েছে। অর্থাৎ বছরে গড়ে মাত্র ৩ লাখ লোক চাকরি বা কাজ পেয়েছেন। এ পরিস্থিতিতে বেকারত্বের হার বেড়েছে। যদিও এর আগের এক দশক ধরে দেশে বছরে গড়ে ১৩ লাখের বেশি কর্মসংস্থান হয়েছে।

মূলত জমি না পাওয়া, পরিবহন খাতে দুর্বলতা ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতাকেই বিনিয়োগের প্রধান অন্তরায় মনে করছেন ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদরা। আর বেসরকারি খাতের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়লেও তা বেশ ব্যয়বহুল। যা নতুন বিনিয়োগকারীদের উৎসাহিত করছে না। তাছাড়া দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন এখন কিছুটা শান্ত থাকলেও ব্যবসায়ীদের মধ্যে বেশ অনিশ্চয়তা রয়েছে।সেই কারণেই বিপুল পরিমাণ মূলধন দেশের বাইরে চলে গেছে।

সুত্র জানায়, সরকারের প্রাক্কলন হচ্ছে চলতি অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি হবে ৭ দশমিক ০৫ শতাংশ। কিন্তু প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশ ছাড়ালেও বিনিয়োগ বাড়িয়ে তা হয়নি। মূলত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বাড়ানোর কারণেই জিডিপি বেড়েছে। বরং বেসরকারি বিনিয়োগের স্থবিরতা রয়েই গেছে। আর জিডিপির প্রবৃদ্ধি বাড়লেও কমেছে বেসরকারি বিনিয়োগের হার। ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ গত প্রায় এক দশক ধরে জিডিপির ২১-২২ শতাংশের মধ্যেই ঘোরাফেরা করছে।

তবে সরকারি বিনিয়োগ বেড়েছে। যদিও ওই বিনিয়োগের গুণ ও মান নিয়েও রয়েছে নানা সমালোচনা। কারণ ৬ বছরের পরিবতে ১১ বছরেও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করার কাজ শেষ হয়নি। তাছাড়া জমির সঙ্কট দূর করতে ১শ’টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠনেরও ঘোষণা দেয়া হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত উদ্বোধন হয়েছে মাত্র ১০টি। যদিও প্রতিবার বাজেট বক্তৃতায় সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের (পিপিপি) বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা বলেন অর্থমন্ত্রী। কিন্তু পিপিপিতে এখনো নতুন বড় প্রকল্প হয়নি।

সূত্র আরো জানায়, বর্তমানে গ্যাস-সংযোগের অভাবে বহু কারখানাই চালু করা যাচ্ছে না। ১৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা থাকলেও শিল্প খাতে নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। দেশে অনেক অর্থনৈতিক অঞ্চল করা হলেও তাতে জ্বালানিসহ অন্য অবকাঠামো গড়ে ওঠেনি। তবে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সাময়িক হিসাব অনুযায়ী চলতি অর্থবছরে জিডিপির ২১ দশমিক ৭৮ শতাংশ হবে বেসরকারি বিনিয়োগ। গত অর্থবছরে এর অংশ ছিল ২২ দশমিক ০৭ শতাংশ।

কিন্তু জিডিপির আকার যে হারে বাড়ছে বেসরকারি বিনিয়োগ সে হারে বাড়ছে না। অর্থবছর শেষে বেসরকারি বিনিয়োগের পরিমাণ দাঁড়াবে চলতি মূল্যে ৩ লাখ ৭৬ হাজার ৭৫৪ কোটি টাকা। আর চলতি অর্থবছরে সরকারি বিনিয়োগের পরিমাণ চলতি মূল্যে ১ লাখ ৩১ হাজার ৩৮৩ কোটি টাকা। জিডিপিতে সরকারি বিনিয়োগ অংশীদারত্ব ৫ বছরে ৫ দশমিক ৭৬ শতাংশ থেকে বেড়ে ৭ দশমিক ৬ শতাংশ হয়েছে।

এদিকে ২০১৫ সালের জুন শেষে ব্যাংকগুলোর কাছে নগদ তারল্য ছিল ২ লাখ ৩৯ হাজার ৫৭৮ কোটি টাকা। আর চলতি বছরের জানুয়ারি শেষে নগদ তারল্য বেড়ে দাঁড়ায় ২ লাখ ৫৩ হাজার ৪৯৬ কোটি টাকা। নগদ জমা সংরক্ষণ হার (সিআরআর) হিসেবে ৫১ হাজার ২১০ কোটি টাকা, বিদেশি মুদ্রায় ৬ হাজার ৭৪২ কোটি টাকা রাখা রয়েছে। বাকি অর্থের মধ্যে উৎপাদন খাতে বিনিয়োগ না করতে পেরে ব্যাংকগুলো বিভিন্ন বন্ডে বিনিয়োগ করে রেখেছে ১ লাখ ৭৭ হাজার ৪৪৬ কোটি টাকা।

যদিও কম মুনাফার বন্ডে বিনিয়োগ করে রাখায় বাংলাদেশ ব্যাংক এই অর্থকে অলস টাকা বলতে রাজি নয়। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এই অর্থ অলস টাকাই। সব মিলিয়ে  বিনিয়োগের জন্য অর্থ প্রস্তুত থাকলেও নতুন প্রকল্পে খুব বেশি ঋণ যায়নি। বরং ব্যাংক থেকে বেশি ঋণ গেছে বিদ্যমান কারখানা বা ব্যবসা সম্প্রসারণে।

অন্যদিকে বিনিয়োগ স্থবিরতা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি না হওয়া প্রসঙ্গে পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য শামসুল আলমের অভিমত হচ্ছে- বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে পুঁজির নিরাপত্তা দিতে হবে। নিয়মকানুনের মধ্যে থেকে বিদেশি বিনিয়োগকারী যেভাবে চান, সেভাবে মুনাফা নিয়ে যাওয়ার সুযোগ দিতে হবে। কারণ বিদেশীরা মুনাফা করতেই এদেশে আসেন। তাছাড়া উচ্চ করপোরেট কর হারও বিনিয়োগে বড় বাধা।

সোনালীনিউজ/আমা

Wordbridge School
Link copied!