• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ভালবাসার টানে সাইকেলে ভারত থেকে ইউরোপ!


নিজস্ব প্রতিবেদক জানুয়ারি ১৬, ২০১৬, ১০:২৩ পিএম
ভালবাসার টানে সাইকেলে ভারত থেকে ইউরোপ!

 

বিনোদন ডেস্ক
আমরা প্রেমের ক্ষেত্রে অনেক বিষ্ময়কর ঘটনা শুনেছি,কখনো বা দেখেছি ,আবার আমরা যারা প্রেম করেছি তারা হয়ত কিছু ঘটনার জন্ম দিতে চেষ্টা করেছে। সম্প্রতি প্রেমের জগতে জানা গেল এরকম এক বিষ্ময়কর ঘটনা।একটা প্রেমিক তার প্রেমিকের জন্যে কতটা পাগল হতে পারে এ ঘটনা জানা না গেলে হয়ত বোঝা যেত না, ভালবাসা আসলে কি?ভালবাসা মানুষকে শুধু ঘর ছাড়ায় না, অনেক সময় দেশান্তরী করে। ঘটনাটা ১৯৭৫ সালে ভারতের দিল্লীর। যেখানে ভারতীয় যুবক মহানান্দিয়া প্রেমিকা শার্লোট ভন শেডভিনের জন্য ইউরোপে পাড়ি জমিয়ে ছিল । বিমানে বা ট্রেনে নয়,প্রেমিকার জন্য সাইকেল চালিয়ে গিয়েছিলেন সুদূর সুইডেনে।

প্রেমের প্রমান দিতে বিমানের টিকেট কাটার মতো টাকা নেই মহানান্দিয়ার। তাতে কী। সব বিক্রি করে একটা সাইকেল কিনলেন। তাতে চড়ে নানা দেশ পাড়ি দিয়ে পৌঁছে গেলেন ইউরোপে, প্রেমিকার কাছে।

বিবিসি মহানান্দিয়া-শার্লোটের প্রেমকাহিনী নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

বিবিসি মহানান্দিয়া-শার্লোটের প্রেমকাহিনী নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

১৯৭৫ সালে প্রথম ভারতে যান শার্লোট। তবে তিনি  ইউরোপ থেকে দিল্লি এসেছিলেন এসেছিলেন বন্ধুদের সঙ্গে দল বেঁধে গাড়ি চালিয়ে। সেখানেই দেখা হয় পি কে মহানন্দিয়ার সঙ্গে। প্রেমও হয়ে যায় দুজনের মধ্যে। মেয়েটি ফিরে গেলো ইউরোপে। ছেলেটি কথা দিল, আবার দেখা হবে দুজনের।

তাদের দুজনের প্রথম দেখা হয়েছিল দিল্লিতে শীতের এক সন্ধ্যায়। মেয়েটি অনুরোধ করলো তার ছবি এঁকে দিতে। সেই প্রথম দেখাতেই প্রেম। সেই প্রেমের টানেই ছেলেটি একদিন পথে নামলো।

মহানন্দিয়া শিল্পী। ছবি আঁকেন। দশ মিনিটে একেঁ ফেলতে পারেন যে কারও অবিকল প্রতিকৃতি।

দিল্লির কনট প্লেসে একদিন শার্লোট গেলেন মহানন্দিয়ার কাছে, অনুরোধ করলেন তার ছবি এঁকে দিতে। শার্লোটকে দেখে মহানন্দিয়ার মনে পড়ে গেল তার মায়ের করা ভবিষ্যদ্বাণী।

মহানন্দিয়ার জন্ম ভারতের উড়িষ্যা রাজ্যে। দলিত শ্রেনীর এক দরিদ্র পরিবারে। ভারতীয় সমাজের একেবারে নীচুতলার মানুষ। উঁচু জাতের লোকের কাছে অস্পৃশ্য।

মা তাকে বলেছিলেন, তার ভাগ্যফলে লেখা আছে, একদিন বৃষরাশির এক মেয়ের সঙ্গে তার বিয়ে হবে, মেয়েটি আসবে অনেক দূর দেশ থেকে, মেয়েটি সঙ্গীতানুরাগী হবে। মেয়েটি হবে অনেক ধনী, এক বিরাট বনের মালিক।

শার্লোটের জন্মরাশি বৃষ, সুইডেনের এক অভিজাত পরিবারের বংশধর, সঙ্গীতেও তার আগ্রহ আছে। আর তাদের পরিবার সত্যি এক বনাঞ্চলের মালিক।

“আমার ভেতর থেকে কেউ যেন বললো, এই সেই মেয়ে। প্রথম দর্শনেই যেন আমরা পরস্পরের দিকে আকৃষ্ট হলাম চুম্বকের মতো। এ যেন প্রথম দর্শনেই প্রেম।”

শার্লোটকে চায়ের আমন্ত্রণ জানালেন মহানন্দিয়া। অনেক সংকোচ ছিল তার। কিন্তু শার্লোট যেন এরই প্রতীক্ষায় ছিলেন। দুজনে বেড়াতে গেলেন উড়িষ্যায়। কোনারক মন্দির দেখে মুগ্ধ শার্লোট।

শাড়ি পরে মহানন্দিয়ার বাবা-মার সঙ্গে দেখা করতে গেলেন শার্লোট। তাদের উপজাতীয় রীতি মেনে দুজনের বিয়ে হলো। এর পর শার্লোট ফিরে এলেন ইউরোপে। মহানন্দিয়ার কাছ থেকে কথা আদায় করলেন, সুইডেনের বস্ত্র শিল্প শহর বোরাসে দেখা হবে আবার দুজনের।

বছর গড়ালো। দুজনের মধ্যে কেবল চিঠিপত্রে যোগাযোগ। প্লেনের টিকেট কাটার টাকা নেই মহানন্দিয়ার। সব বিক্রি করে দিয়ে কিনলেন একটা সাইকেল। তারপর শুরু হলো প্রেমিকার কাছে যাওয়ার জন্য ইউরোপের পথে মহাযাত্রা।

১৯৭৭ সালের ২২শে জানুয়ারি মহানন্দিয়া শুরু করেছিলেন তার এই অভিযান। প্রতিদিন গড়ে ৭৭ কিলোমিটার করে পথ পাড়ি দিতেন।

এভাবে আফগানিস্তান, ইরান, তুরস্ক ভিয়েনা  হয়ে সেখান থেকে ট্রেন ধরে গোথেনবার্গ পৌঁছালেন মহানন্দিয়া। দেখা হলো শার্লোটের সঙ্গে। তবে বিয়ের ব্যাপারে শার্লোটের বাবা-মাকে রাজী করাতে বেগ পেতে হলো। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সুইডেনের আইন-কানুন মেনে আনুষ্ঠানিক বিয়ে হলো তাদের মধ্যে।

৬৪ বছর বয়সী মহানন্দিয়া এখনো সুইডেনেই থাকেন তার স্ত্রী শার্লোট এবং দুই সন্তানকে নিয়ে। কাজ করে শিল্পী হিসেবে। তিনি সাইকেল চালিয়ে ইউরোপে এসেছিলেন, সেটা শুনে যখন অনেকেই অবাক হয়, সেটা ঠিক বুঝতে পারেন না মহানন্দিয়া।

 


সোনালীনিউজ/ঢাকা/মে

 

Wordbridge School
Link copied!