• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

মধ্যপ্রাচ্য ফেরত প্রবাসীদের নজরদারির উদ্যোগ


নিজস্ব প্রতিবেদক জানুয়ারি ১৯, ২০১৬, ০৯:১৩ পিএম
মধ্যপ্রাচ্য ফেরত প্রবাসীদের নজরদারির উদ্যোগ

বিশেষ প্রতিনিধি
শতাধিক বাংলাদেশি তরুণ আন্তর্জাতিক জঙ্গি গোষ্ঠি ইসলামিক স্টেটের (আইএস) সঙ্গে সম্পর্ক গড়তে এবং সিরিয়া গিয়ে যুদ্ধ করতে আগ্রহী ছিল। ইতোমধ্যে গোয়েন্দারা তাদের চিহ্নিত করেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের বিভিন্ন ফ্যান পেজ থেকে তাদের চিহ্নিত করে এখন পুলিশ গ্রেপ্তারে অভিযান চালাচ্ছে। একই সঙ্গে আইএসের অন্তত ৪টি  ফ্যান পেজও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি আইএস সংশ্লিষ্ট যেসব মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসী দেশে ফেরত এসেছে তাদের ওপর গোয়েন্দা নজরদারির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বিগত কয়েক মাসে আইএস সংশ্লিষ্টতায় আগ্রহী অন্তত ২০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তার মধ্যে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এক ব্রিটিশ নাগরিকও রয়েছেন। সামিউন রহমান ইবনে হামদান নামে ওই তরুণ আইএসের সদস্য সংগ্রহ করে সিরিয়ায় পাঠানোর জন্য বাংলাদেশে এসেছিলেন। তার প্রধান এজেন্ট হিসেবে বাংলাদেশে কাজ করতেন এক বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের আইটি বিভাগের প্রধান আমিনুল ইসলাম। পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। বর্তমানে একের পর এক পুলিশি অভিযানের মুখে আইএসপ্রেমী ওসব তরুণরা গা-ঢাকা দিয়েছে। আর তার আগেই গোয়েন্দাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে বেশ কয়েকজন তরুণ আইএসের হয়ে যুদ্ধে অংশ নিতে দেশ ছেড়েছে।
সূত্র জানায়, মধ্যপ্রাচ্য থেকে ফিরে আসা বাংলাদেশি কোনো নাগরিক যাতে আইএসের পক্ষে কাজ করতে না পারে সেজন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সতর্ক করেছে। এ মর্মে মন্ত্রণালয় পুলিশ সদর দপ্তরকে চিঠিও দিয়েছে। তাতে ৮০’র দশকে পাকিস্তান হয়ে আফগান যুদ্ধে অংশ নিয়ে দেশে ফেরত আসাদেরও কঠোর নজরদারির আওতায় আনার তাগিদ দেয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের ওয়েবসাইট ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন তালিকায় যে জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের নাম রয়েছে তাদের বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে নিয়মিত খোঁজ-খবর রাখতে বলা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে বলা হয়- ইরাক, সিরিয়া, লিবিয়া, তুরস্ক, সৌদি আরব ও ইয়েমেনসহ আইএস অধ্যুষিত এলাকায় বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশি নাগরিক অবস্থান করছে। সেখানে প্রবাসীদের মধ্যে কেউ কেউ আইএসের মতাদর্শে উদ্বুদ্ধ হতে পারে। অর্থসহ বিভিন্ন প্রলোভনেও আকৃষ্ট অথবা বাধ্য হয়ে কেউ আইএসে যোগ দেয়াসহ তাদের পক্ষে কাজ করতে পারে।
সূত্র আরো জানায়, ২০১৩ সালে আইএসের উত্থান এবং সম্প্রতি প্যারিস, লিবিয়া, লেবানন, সৌদি আরব, মিসর ও মালির বিভিন্ন স্থানে হামলার বিষয়ে আইএসের দায় স্বীকারের পর বিশ্বব্যাপী উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। আইএসের ধারাবাহিক সন্ত্রাসী কর্মকা- ও বিস্তৃতির প্রেক্ষাপটে এবং বাংলাদেশের নিরাপত্তা ও শান্তি-শৃঙ্খলার স্বার্থে এখনই ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি বলে সরকার মনে করছে। কারণ ১০ ডিসেম্বর সিরিয়ার রাকায় বিমান হামলায় সাইফুল হক নামে এক বাংলাদেশি যুবক নিহত হন। আইএসবিরোধী ওই বিমান হামলার পর যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট আইএসের ১০ গুরুত্বপূর্ণ নেতার নাম প্রকাশ করে। ওই তালিকায় সাইফুল হকের নামও রয়েছে। বলা হয়, সাইফুল হক বহির্বিশ্বের সাথে যোগাযোগ, হ্যাকিং, নজরদারি প্রতিরোধ প্রযুক্তি এবং অস্ত্র উন্নয়নের কাজে নিয়োজিত ছিলেন। সাইফুল নিহত হওয়ার পর বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত তরুণদের আইএসে যুক্ত হওয়ার বিষয়টি সামনে চলে আসে।
এদিকে জঙ্গি সংগঠনের বিস্তার রোধে জড়িত পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, গত বছরের প্রথমদিকে আইএসের সাথে বাংলাদেশের কিছু তরুণ ফেসবুক এবং টুইটারের মাধ্যমে যোগাযোগ শুরু করে। আইএস বাংলাদেশ নামে ফেসবুক পেজ খুলে সদস্য সংগ্রহে প্রচারণাও শুরু করা হয়। বিষয়টি নজরে আসার পরই গোয়েন্দা পুলিশ অনুসন্ধান শুরু করে। তবে পেজগুলো ছদ্মনামে পরিচালনা করায় প্রকৃত অপরাধীদের শনাক্তে কিছুটা বেগ পেতে হয়। তাছাড়া আইএস বাংলাদেশ পেজে দেড় লাখেরও বেশি লাইক ছিল। বন্ধ হয়ে যাওয়ার আগে শেষ সপ্তাহে পেজটিতে লাইক পড়ে ৩ হাজার। জঙ্গি সংগঠনটির সদস্য সংগ্রহের জন্য আরো ৪ থেকে ৫টি ফেসবুক পেজ ছিল। বিষয়টি গোয়েন্দাদের নজরে আসার পর পরই ওই পেজগুলোও বন্ধ করে দেয়া হয়।
অন্যদিকে জঙ্গি তৎপরতা প্রতিরোধ প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার শেখ নাজমুল আলম জানান, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সূত্র ধরেই গতবছর থেকে শতাধিক তরুণকে শনাক্ত করা হয়। তাদের মধ্যে কয়েক মাসে কমপক্ষে ২০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা সিরিয়া অথবা ইরাকে গিয়ে আইএসে যুক্ত হয়ে কথিত জিহাদে অংশ নিতে ব্যাকুল ছিল। তাছাড়া আইএসের হয়ে সদস্য সংগ্রহের কাজ করছিল এমন দু’জনকেও তখন গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের একজন আমিনুল। সে বরিশাল ক্যাডেট কলেজের ছাত্র ছিল। মালয়েশিয়ার এক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়েছে। দেশে ফিরে কয়েকটি মোবাইল ফোন কোম্পানিতে চাকরি করার পর সর্বশেষ কোকাকোলার আইটি বিভাগের প্রধান হিসেবে কাজ করতো। গ্রেপ্তারের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত আমিনুল আইএসের নির্দেশিত খিলাফত প্রতিষ্ঠায় কাজ করে গেছে। সে নানাভাবে তথ্য প্রচার, গোপনে অর্থ ও কর্মী সংগ্রহ ছাড়াও আইএসের বাংলাদেশ সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করছিল। তার অনুপ্রেরণায় অন্তত ৫ বাংলাদেশি আইএসের হয়ে সিরিয়ায় যুদ্ধে অংশ নিয়েছে। তাছাড়া গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জেএমবির ভারপ্রাপ্ত আমির আবদুল্লাহ আল-তাসনিম ওরফে নাহিদসহ ৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে আইএসের যোগাযোগের প্রমাণ পাওয়া যায়। পরে তাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী সাখাওয়াতুল কবির, আনোয়ার হোসেন বাতেন, রবিউল ইসলাম আর নজরুল ইসলাম নামে চারজনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। সাখাওয়াতের ভায়রা শামীম ও বাতেনের ভগ্নিপতি সায়েম পাকিস্তানে থাকত। তারা দু’জনেই আইএসের সঙ্গে জড়িত ছিল। পাকিস্তানে জঙ্গিবিরোধী এক অভিযানে শামীম ও সায়েম নিহত হয়েছে।
আইএস সংশ্লিষ্ট জঙ্গিদের প্রতিরোধ বিষয়ে পুলিশের মহাপরিদর্শক একেএম শহীদুল হক বলেন, পুলিশ এ ব্যাপারে আগে থেকেই সতর্ক রয়েছে। পুলিশি সতর্কতার কারণেই বাংলাদেশে জঙ্গি সংগঠনগুলো মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারেনি। তারপরও এ ব্যাপারে সব সংস্থাকে আরো বেশি সতর্ক হওয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

 

সোনালীনিউজ/এমএইউ

Wordbridge School
Link copied!