• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

মনোনয়ন ঝুঁকিতে আ. লীগের ৫০ এমপি!


সোনালী বিশেষ আগস্ট ১০, ২০১৭, ০২:৫১ পিএম
মনোনয়ন ঝুঁকিতে আ. লীগের ৫০ এমপি!

ঢাকা : দলীয় কর্মকাণ্ডে নিষ্ক্রিয়তা, নানা বিতর্কিত কাজ, স্বজনপ্রীতি, জনবিচ্ছিন্নতা এবং দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে সম্পর্কহীনসহ নানা কারণে চলমান সংসদের প্রায় অর্ধ শতাধিক সংসদ সদস্য (এমপি) এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন থেকে বঞ্চিত হতে যাচ্ছেন। ওই আসনগুলোয় যাঁরা ভোট টানতে পারবেন, সাধারণ মানুষের কাছে যাঁদের গ্রহণযোগ্যতা ও পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি আছে এমন প্রার্থীদের মনোনয়ন দেওয়া হবে।

বেশ কিছু আসনে অধিকতর যোগ্য প্রার্থীদের সুযোগ দিয়ে দলের বিজয়ের সম্ভাবনা বাড়াতেও প্রার্থী পরিবর্তন করবে আওয়ামী লীগ। প্রতিদ্ধন্ধিতাপূর্ণ একটি নির্বাচনে জয় নিশ্চিত করতেই এ পরিবর্তন আনবে ক্ষমতাসীন দলটি।

আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের একাধিক নেতা, দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক সূত্র এবং একাধিক সরকারি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবার সারা দেশে অর্ধশতাধিক সংসদ সদস্য মনোনয়ন-ঝুঁকিতে  পড়ে গেছেন। কোনো কোনো সূত্র বলছে, নির্বাচন ঘনিয়ে এলে  এ সংখ্যা আরো বাড়তে পারে।

সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারি বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে প্রতিটি আসনে প্রার্থীদের তথ্য সংগ্রহ করছেন। সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে প্রতিটি আসনেই পাঁচ থেকে সাতজন প্রার্থীর তালিকা পাঠানো হচ্ছে। তিন মাস পর পর এ তালিকা হালনাগাদ করা হচ্ছে। সরকারি সংস্থাগুলোর প্রতিবেদনে বহু এমপির বিরুদ্ধে অপকর্ম, জন-অসন্তোষ, দলীয় নেতাকর্মীদের ক্ষোভসহ নানা নেতিবাচক তথ্য উঠে আসছে।

এর পাশাপাশি আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের কয়েকজন সদস্য ৩০০ আসনে দলীয় প্রার্থীদের তালিকা তৈরি করছেন। তাঁরা বহু এমপির জনপ্রিয়তা না থাকার তথ্য পেয়েছেন। এমনকি আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর একাধিক সদস্যও নিজ নিজ উদ্যোগে বিভিন্ন আসনের তথ্য সংগ্রহ করছেন। তাঁরাও অর্ধশতাধিক আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বদল করতে হবে বলে মনে করছেন।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ড ও দলীয় সভাপতিম-লীর সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন,এখন কেউ এমপি আছেন বলে তাঁকেই মনোনয়ন দিতে হবে, এমন কোনো কথা নেই। যাঁরা জনপ্রিয়তা হারিয়েছেন, মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা কমে গেছে, তাঁদের বাদ দেওয়া হবে। তবে অনেক সময় তাঁদের বিকল্প প্রার্থীও পাওয়া যায় না।

যেখানে ভালো প্রার্থী পাওয়া যাবে তাঁকেই মনোনয়ন দেয়া হবে। আগে একটা বিষয় ছিল যে, কেউ একবার এমপি হলে তাঁকে তিনবার মনোনয়ন দেওয়া হতো। কিন্তু এখন আর সে রকমটা করার উপায় নেই। অনেক এমপি এমনভাবে জনপ্রিয়তা হারান যে তাঁদের পরিবর্তন না করলে ওই আসনগুলোই হারাতে হয়।

আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ড ও সভাপতিম-লীর আরেক সদস্য মুহম্মদ ফারুক খান বলেন, এলাকায় জনপ্রিয়তা ও দলের মধ্যে অবস্থান এই দুটি বিষয় সমন্বয় করে প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়া হবে। এবার তরুণ মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে অনেকেই মনোনয়ন পাবেন। আর প্রতি নির্বাচনেই বেশ কিছু প্রার্থী পরিবর্তন করা হয়ে থাকে। এবারও হবে। যাঁরা এলাকায় জনপ্রিয়তা রক্ষা করতে পারেননি, দলের কাছে যাঁদের গ্রহণযোগ্যতা নেই, তাঁরা এবার মনোনয়ন পাবেন না।

সূত্র জানায়, চট্টগ্রামে বেশ কয়েকটি আসনে প্রার্থী পরিবর্তন করতে পারে আওয়ামী লীগ। এর মধ্যে দক্ষিণ চট্টগ্রামেই তিনটি আসনের সম্ভাবনা রয়েছে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য হওয়া তিন সংসদ সদস্য চট্টগ্রাম-১৪ আসনে নজরুল ইসলাম চৌধুরী, চট্টগ্রাম-১৫ আসনে আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভী, চট্টগ্রাম-১৬ আসনে মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী মনোনয়ন নাও পেতে পারেন। দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে দূরত্বের কারণে বাদ পড়তে পারেন চট্টগ্রাম-৪ আসনে দিদারুল আলম, চট্টগ্রাম-১১ আসনে এম আব্দুল লতিফ।

সাধারণ ভোটারদের পক্ষে টানতে পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির প্রার্থীদের মনোনয়ন দিতে কয়েকটি আসনে প্রার্থী পরিবর্তন হতে পারে। সে ক্ষেত্রে মনোনয়ন নাও পেতে পারেন টাঙ্গাইল-৬ আসনের সংসদ সদস্য খন্দকার আবদুল বাতেন। এ আসনটিতে মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিমের। কিশোরগঞ্জ-২ আসনেও প্রার্থী পরিবর্তন হতে পারে। এ আসনের সংসদ সদস্য সোহরাব উদ্দিনকে আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া নাও হতে পারে। এখানে সাবেক আইজিপি নূর মোহাম্মদ গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী।

বয়োবৃদ্ধ বেশ কয়েকজন সংসদ সদস্যের আসনে প্রার্থী পরিবর্তন হতে পারে। এসব আসনে তরুণ নেতাদের মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বয়সের কারণে বাদ পড়তে পারেন বাগেরহাট-৪ আসনে ড. মোজাম্মেল হোসেন, নাটোর-৪ আসনে আবদুল কুদ্দুস, শরীয়তপুর-২ আসনে কর্নেল (অব.) শওকত আলী, নরসিংদী-৫ আসনে রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু।

মনোনয়ন নাও পেতে পারেন মাগুরা-১ আসনে এ টি এম আবদুল ওহাব, দিনাজপুর-১ আসনে মনোরঞ্জন শীল গোপাল, সিরাজগঞ্জ-৩ আসনে গাজী ম ম আমজাদ হোসেন মিলন, যশোর-২ আসনে মনিরুল ইসলাম, খুলনা-৬ আসনে শেখ মো. নুরুল হক,  বরিশাল-২ আসনে তালুকদার মো. ইউনুস, মুন্সীগঞ্জ-১ আসনে সুকুমার রঞ্জন ঘোষ, জামালপুর-২ আসনে ফরিদুল হক খান দুলাল, নেত্রকোনা-৩ আসনে ইফতিকার উদ্দিন তালুকদার পিন্টু, নেত্রকোনা-৪ আসনে রেবেকা মোমিন, ঠাকুরগাঁও-২ আসনে দবিরুল ইসলাম, নড়াইল-১ কবিরুল হক মুক্তি, ঢাকা-৫ আসনে হাবিবুর রহমান মোল্লা, নওগাঁ-৫ আসনে আবদুল মালেক, পিরোজপুর-১ আসনে এ কে এম এ আউয়াল, মেহেরপুর-১ ফরহাদ হোসেন, নীলফামারী-৩ আসনে গোলাম মোস্তফা।

জানা গেছে, বিতর্কিত কয়েকজন মন্ত্রীও আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত হতে পারেন। আর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট মেয়ে শেখ রেহানা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় নির্বাচনে অংশ নিলে গোপালগঞ্জ ও রংপুরের দুটি আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী পরিবর্তন হবে।

সূত্রগুলো জানায়, রাজশাহী, সিরাজগঞ্জ, ময়মনসিংহ, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর, খুলনা, ঢাকার একাধিক আসনেও প্রার্থী পরিবর্তন করতে পারে আওয়ামী লীগ। যশোর, চাঁদপুর জেলার একাধিক এমপিও মনোনয়ন-ঝুঁকিতে আছেন।

সোনালীনিউজ/জেডআরসি/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!