• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মাইক্রোচিপ বলে দেবে ভবিষ্যত


নিজস্ব প্রতিবেদক এপ্রিল ৩০, ২০১৬, ০৫:৪৭ পিএম
মাইক্রোচিপ বলে দেবে ভবিষ্যত

অধ্যাপক ক্রিস তমাঝৌ সম্পর্কে আমরা তেমন কিছু জানি না। ব্রিটিশ হওয়া স্বত্ত্বেও এই অধ্যাপককে খোদ ব্রিটিশরাই ভালো করে চেনেন কিনা তাতেও যথেষ্ট সন্দেহ আছে। অন্তত শিক্ষাকালীন সময়ে তমাঝৌর সঙ্গে যারা পড়ালেখা করেছিলেন তারাও কোনোদিন কল্পনা করেননি যে তমাঝৌ একদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক উচূ সারির একজন অধ্যাপক হবেন। কারণ যে ছাত্র পড়ালেখাই শেষ করেনি তিনি কিভাবে আবার অধ্যাপক হবেন। মাত্র ১৬ বছর বয়সে শিক্ষাজীবন শেষ করেন তিনি। তাকে কোনোদিন কোনো গবেষণাগার কিংবা বুনসেন বার্নারটিও ধরাতে দেখা যায়নি। তাহলে এই ৫৪ বছর বয়সে এসে তিনি লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজের অধ্যাপক হলেনই বা কিভাবে?

‘আমার শিক্ষাজীবন মোটেও ভালো ছিল না। কিন্তু আমার মনে হয় এটাই আমাকে আরও অন্তর্জ্ঞানলব্ধ করে তুলেছে।’ কথাগুলো তমাঝৌ তার কলেজের সাউদ কেসিংটন ক্যাম্পাসে বসে মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএনকে বলছিলেন। ব্রিটেনের রাজপরিবারের বিশেষ নির্দেশে তাকে বর্তমানে অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ইম্পেরিয়াল কলেজের প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপকের পাশাপাশি তিনি সেন্টার ফর বায়ো-ইন্সপায়ারড টেকনোলজির প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন।

‘আমাকে অনেক কঠিক পরিশ্রম করতে হয়েছে।’ কারণ প্রাতিষ্ঠানিক কোনো শিক্ষাগ্রহন না করেও একটি কলেজের অধ্যাপক হওয়া চাট্টিখানি কথা নয়। ইম্পেরিয়াল কলেজে থেকেই তিনি পরবর্তী সময়ে পিএইডডি ডিগ্রি অর্জন করেন এবং কলেজটির তত্ত্বাবধানেই তিনি গবেষণা করতে থাকেন। ইলেকট্রনিক্সের দুনিয়ায় একই মাইক্রোচিপের বহুমুখী কাজের বিষয়টি সর্বপ্রথম আবিস্কার করেছিলেন তিনিই। পাশাপাশি এই মাইক্রোচিপকে আরও উন্নত করার পেছনেও তার মেধাই কাজ করেছে। তার উদ্ভাবিত আবিস্কারগুলোর মধ্যে রয়েছে কোহলার নামের একটি কোম্পানির জন্য একটি মাইক্রোচিপ ডিজাইন করা। এই মাইক্রোচিপের মাধ্যমে যারা জন্ম থেকেই কানে শুনতে পান না, তারাও শুনতে পান। এছাড়াও তার তৈরি করা কৃত্তিম অগ্ন্যাশয় ডায়াবেটিকে আক্রান্ত রোগিদের জন্য অনেক কার্যকরী। অবশ্য এই চিপটি তিনি উদ্ভাবন করেন তার নিজের সন্তানের দুরারোগ্য কিডনিজনিত রোগ ধরা পরলে।

‘সেনসিয়াম’ নামক প্যাড তৈরির পেছনের মানুষটিও তমাঝৌ। এই প্যাডের মাধ্যমে ডাক্তাররা এখন খুব সহজেই রোগির শ্বাস-প্রশ্বাস, তাপমাত্রা এবং ইসিজি পরিমাপ করতে পারেন একটি নির্দিষ্ট দূরত্ব থেকেই। এর বাইরে তিনিই প্রথম এমন একটি মোবাইল তৈরি করেছিলেন যা একাধারে এনালগ ও ডিজিটাল পদ্ধতিতে চলে। কিন্তু এতকিছু উদ্ভাবনও তমাঝৌকে কাঙ্ক্ষিত স্বপ্নের কাছাকাছি নিয়ে যেতে পারেনি। তাই তিনি শুরু করলেন নতুন কিছু উদ্ভাবনের।

নিজের বুদ্ধিবৃত্তিক চাহিদা অনুসারে তিনি বানালেন ‘ল্যাব অন অ্য চিপ’। এই চিপটি তিনি তৈরি করেন সিলিকন দিয়ে একটি ইউএসবি স্টিকের সহায়তায়। চিপটি মাত্র ত্রিশ মিনিটের মধ্যে ডিএনএ পরীক্ষা করতে পারে এবং ব্যয় হয় মাত্র বিশ ডলার। শুধু তাই নয়, এই চিপ শরীরে প্রতিস্থাপন করা থাকলে শরীরের আগাম ঝুঁকিও জানান দেবে চিপটি। কারও যদি ডায়াবেটিকে আক্রান্ত হবার ঝুঁকি থাকে তবে চিপটি আগেই ওই ব্যক্তিকে জানিয়ে দেবে তার শরীরের বাজে কোষগুলো সম্পর্কে।

এই চিপ আবিস্কারের জন্য ২০১৪ সালে তমাঝৌকে ইনভেন্টর অব দ্য ইয়ার ঘোষণা করা হয়েছিল। এই চিপের ফলে চিকিৎসাশাস্ত্র রাতারাতি অনেকটা পথ এগিয়ে যায় এবং মানুষকে রোগাক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচানোর ক্ষেত্রেও একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হয়। মানুষের মুখের লালাকে কাজে লাগিয়ে এই চিপ মানবশরীরের বিভিন্ন রোগ সম্পর্কে সহজেই বলতে পারে। এমনকি কোন রোগের জন্য কোন ওষুধ খাওয়া যেতে পারে সেই পরামর্শও দিতে পারে চিপটি। অর্থাৎ, একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের মতোই কাজ করবে চিপটি।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/আকন

Wordbridge School
Link copied!