• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

মাতামুহুরী নদী পলি জমে ভরাট, ভয়াবহ নাব্য সঙ্কট


নিজস্ব প্রতিবেদক জানুয়ারি ২৩, ২০১৬, ০৪:৩৯ পিএম
মাতামুহুরী নদী পলি জমে ভরাট, ভয়াবহ নাব্য সঙ্কট

এম.মনছুর আলম, চকরিয়া
এক দশকের ব্যবধানে এককালের খরস্রোতা মাতামুহুরী নদীতে পলি জমে একাধিক ছোট বড় চর জেগে ভরাট হয়ে গেছে। বর্তমানে নদীতে ভয়াবহ নাব্য সঙ্কটে পড়েছে বুড়া এ মাতামুহুরী নদী। গেল বছর কয়েকদফা ভয়াবহ বন্যার কারণে খরস্রোতা এ নদীর বুকে জেগে উঠেছে অসংখ্য ডুবোচর। বর্ষা শেষ হওয়ার কয়েক মাস যেতে না যেতেই নদীতে নৌ-চলাচল, কাঠ ও বাঁশ পরিবহনে যেন দুর্ভোগের অন্তনেই।

খরস্রোতা বুড়া এ মাতামুহুরী নদীর উৎপত্তি পার্বত্য বান্দরবান জেলার আলীকদম উপজেলার দুর্গম পাহাড়ী এলাকায়। বিগত দুই দশকে এ নদীর গভীরতা ছিল ৩০-৪০ফুট, প্রস্থ ছিল ১৪শ থেকে ১৫শ ফুট পর্যন্ত। নদীতে ছিল বিশাল বড় বড় কুম। এককালের গভীর জলরাশি সম্পন্ন প্রমত্তা মাতামুহুরী এখন মরা নদীতে রূপ নিয়েছে। নদীতে পানির প্রবাহ কমে যাওয়ায় মৎস্য ভান্ডারেও দেখা দিয়েছে মাছের অকাল প্রভাব। এতে বিভিন্ন এলাকায় জেলে পরিবার গুলোতে দেখা দিয়েছে চরম উৎকন্টা ও হতাশা।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও এলাকার সচেতন মহল দাবী করেছে, মাতামুহুরী নদী ভাঙনের ভয়াবহতা রোধকরতে হলে প্রয়োজন নদীতে নতুন করে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে জমে থাকা পলি অপসারণ। বিশেষ করে মাতামুহুরী ব্রীজের চিরিঙ্গা পয়েন্ট থেকে ড্রেজিং শুরু করে উজানে মানিকপুর-সুরাজপুর ও কাকারা পয়েন্ট পর্যন্ত। এ ছাড়া নীচে বেতুয়া বাজার থেকে কুরিইল্যারকুম এবং আনিছপাড়া থেকে পালাকাটা রাবার ড্যাম পর্যন্ত এলাকায় পলিতে জমে ভরাট হওয়া মাতামুহুরী নদী নতুন করে ড্রেজিং করা প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। বর্ষা মৌসুম শুরুর পূর্বেই ড্রেজিং ব্যবস্থা করা না হলে গেল বছরের ন্যায় এ বছরও বন্যার পানিতে তলিয়ে যাবে বিস্তীর্ণ এলাকা। তা নাহলে অদূর ভবিষৎতে নাব্য সঙ্কটে পড়ে হারিয়ে যবে এ মাতামুহুরী নদীর মানচিত্র প্রমত্তা মাতামুহুরী নদীর উজানে পার্বত্য এলাকার লামা-আলীকদমে পাহাড়ী এলাকা থেকে  দুই দশক ধরে পাহাড়ে ব্যাপক হারে বৃক্ষনিধন, বাঁশকর্তন ও পাহাড়ে জুমচাষের কারণে পাহাড়ের মাটি ক্ষয়ে পড়েছে নদীতে।

ফলে নদীর তলদেশ দিন দিন ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়াও পাহাড় কাটা, ঝিরি খুঁড়ে ও বিস্ফোরণ ঘটিয়ে অবাধে পাথর উত্তোলনের কারণে মুলত; পাহাড়ী পলি জমে এ অবস্থার সৃষ্টি । এতে প্রতি বর্ষাকালে নদীতে পানির প্রবাহ কমে গেছে। নদীর তলদেশ ভরাট হওয়ায় অল্প বৃষ্টিতেই পাহাড়ী ঢলে নদীর দুই তীরে নতুন নতুন এলাকায় ভাঙ্গনের সৃষ্টি হচ্ছে। গেল বছর কয়েকদফা ভয়বহ বন্যায় উপজেলার আঠার ইউনিয়ন ও পৌরসভা এলাকায় নিন্মাঞ্চল প্লাবিত হয়ে জনবসতির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।

২০১৫ সালে চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলায় সৃষ্ট কয়েকদফা ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধের ভাঙন এলাকায় পরিদর্শনে আসেন সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত পানি সম্পদ মন্ত্রী ব্যারিষ্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। তিনি পরিদর্শন শেষে চকরিয়াস্থ মাতামুহুরী সেতুর উত্তর পার্শ্বে তাকে দেয়া উপজেলা আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির উদ্যোগে আয়োজিত সম্বর্ধনা সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন-বন্যার কবল থেকে জনগণ ও জনগণের জানমাল নিশ্চিত করতে সরকার চকরিয়াবাসীর প্রাণের দাবী মাতামুহুরী নদীতে অবশ্যই ড্রেজিং করা হবে এবং নতুন প্রকল্পের মাধ্যমে বাস্তবায়নের জন্য উদ্যোগ নেয়া হবে বলে তিনি জানান।

মন্ত্রী আরো জানান, মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ড্রেজার ক্রয় করা হবে। যাতে বন্যার সময় পলি জমে ভরাট হয়ে যাওয়া মাতামুহুরী নদীর তলদেশ ভরাট হলেই তা রোধ করতে দ্রুত সময়ে খনন করা যায়।

তার এ বক্তব্যের প্রেক্ষিতে কয়েকজন ব্যাক্তি মাতামুহুরী নদীর বিভিন্ন পয়েন্টের তাদের মালিকানাধীন জমিতে উজান থেকে নেমে আসা সৃষ্ট পাহাড়ী ঢলে বন্যার কারণে জেগে উঠছে ছোট-বড় অসংখ্য ডুবোচর। এসব বালুচরে অবাদি জমিতে ফেরানোর চেষ্টায় বালু অপসারণ করতে গিয়ে ইতিমধ্যে জায়গার মালিক পক্ষের লোকজন উল্টো হয়রানির শিকার হচ্ছে বলে এমন অভিযোগ ও করেছে কয়েকজন ভুক্তভোগী জমির মালিক।

উপজেলার সুরাজপুর-মানিকপুর ইউপি চেয়ারম্যান আজিমুল হক আজিম, বিএমচর ইউপি চেয়ারম্যান বদিউল আলম ও কোনাখালী ইউপি চেয়ারম্যান দিদারুল হক সিকদার বলেন, মাতামুহুরী নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে ডুবোচর ও নদীর দুইতীরে কতেক এলাকায় পাহাড়ী ঢলে বন্যার কারণে ভয়াবহ নতুন করে ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে এ সব ভাঙন এলাকা মেরামত করা না হলে সামনে বর্ষা মৌসুমে ফের দুর্ভোগ পোহাতে হবে প্রায় পাঁচ লক্ষাধিক জনগোষ্টিকে। এ ছাড়া নদীর নাব্যতা রোধে নদীর বুকে জেগে ঊঠা চরে বালু অপসারণ করা এখন সময়ের দাবী হয়ে দাড়িঁয়েছে।

প্রতিবছর শুস্ক মৌসুমে উজান থেকে নেমে আসা মাতামুহুরী নদীর পানি আটকিয়ে চকরিয়া-পেকুয়া উপজেলার হাজার হাজার কৃষক সেচ সুবিধা নিয়ে ইরি, বোরো ও রবি শস্যের চাষাবাদ করে আসছে। মাতামুহুরী নদীর সুফল নিয়ে কৃষকরা বিভিন্ন ফসলের চাষ করে ইতিমধ্যে অনেকে আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠেছে এবং চাষাবাদের মাধ্যমে প্রতিবছর জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে আসছেন।

চকরিয়া পৌরসভার প্যানেল মেয়র ও কাউন্সিলর শহিদুল ইসলাম ফোরকান বলেন, মাতামুহুরী নদী জনগণের জন্য আর্শবাদ হলেও বর্তমানে অভিশাপ হয়ে দাড়িঁয়েছে। এর কারণ প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে বন্যার কারণে নদীর দুই তীরে এলাকার বিভিন্ন পয়েন্টে ভয়াবহ ভাঙনের সৃষ্টি হচ্ছে। চলতি মৌসুমে পৌর এলাকার শহর রক্ষাবাঁধ ও ভাঙন এলাকা মেরামত করা না হলে ফের বর্ষা মৌসুমে দুর্ভোগ পোহাতে হবে।

এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ড কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: সবিবুর রহমানের কাছে নদীর নাব্যতা রোধের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, চলতি মাসের শেষ দিকে নদী ড্রেজিংয়ের কাজ শুরু করা হবে। মাতামুহুরী নদী ড্রেজিংয়ের জন্য তিন কিলোমিটার জায়গা অনুমোদন হয়েছে। অবশিষ্ট জায়গা গুলোও এ প্রকল্পের আওতায় রয়েছে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/আকন

Wordbridge School
Link copied!