• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় : জীবন অন্বেষণের শিল্পী


শামস্ আল্ দীন মে ১৯, ২০১৬, ০১:২০ পিএম
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় : জীবন অন্বেষণের শিল্পী

১৯৫৪ সালে ‘কেন লিখি’ নামে একটি সংকলন বেরিয়েছিল ফ্যাসিস্টবিরোধী লেখক ও শিল্পী সংঘের পক্ষে। সংকলনটির সম্পাদক ছিলেন হিরণকুমার সান্যাল ও সুভাষ মুখোপাধ্যায়। ‘বাংলাদেশের বিশিষ্ট কথাশিল্পীদের জবানবন্দি’- এই ঘোষণা থাকলেও সংকলনটিতে কথাশিল্পীদের সঙ্গে কবিরাও অংশগ্রহণ করেছিলেন। ওই সংকলনটিতে অন্যদের সঙ্গে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ও একটি লেখা লিখেছিলেন। 

নিতান্তই ফরমায়েশি রচনা। কিন্তু বাস্তবিকই সেটি ছিল তাঁর অসাধারণ রচনা। তার মধ্যে প্রতিভাসিত হয়েছে শিল্পীমাত্রই, কিন্তু বিশেষভাবে প্রতিবিম্বিত হয়েছেন মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে সুন্দর সমাজ সচেতন জীবন ঘনিষ্ঠ সাহিত্যকর্মে নিবেদিত প্রাণ লেখক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় (১৯০৮-১৯৬৫)-এর জন্ম হয়। 

আসল নাম সুবোধকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় হিসাবেই তিনি সর্বাধিক পরিচিত। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পিতার নাম হরিহর বন্দ্যোপাধ্যায়। পিতার চাকরি সূত্রে সাঁওতাল পরগনার দুমকায় তাঁর পরিবার চলে আসেন। এইখানেই মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্ম হয়।

কিন্তু পূর্ববঙ্গের নদীনালা, খালবিল, তেলে-জলেই তিনি বড় হয়ে ওঠেন। তাই সেই অঞ্চলের সাধারণ মানুষের কথা, জীবন, পারিপার্শ্বিক চিত্রগুলো নিপুণ দক্ষতার সাথে ফুটিয়ে তুলতে সক্ষম হন। অসংখ্য অভিজ্ঞতার ভারে নুইয়ে পড়া মানিক পাঠককে তার অভিজ্ঞতার পাশে আবদ্ধ রাখতেই লেখা শুরু করেন।

সামাজিক শ্রেণি বৈষম্য, শোষণ, নিপীড়ন, অসঙ্গতির বিরুদ্ধে সোচ্চার তার লেখনি মার্কসবাদে দীক্ষা নেয়। জীবনের একটা পাঠান্তর হিসেবে ধরে নেয়া যায়। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় ১৯৩৫ সাল থেকেই লেখালেখি শুরু করেন। তিনি যখন সাহিত্য জগতে প্রবেশ করেন, তখন ফ্রয়েডীয় মনোবিকারতত্ত্ব সাহিত্যিক মহলে খুব জনপ্রিয়তা পান এবং এবং পাঠকপ্রিয় হয়ে ওঠেন।

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় মূলত তার লেখনীতে বিশাল বিস্তীর্ণ নদ-নদীর পটভূমিকায় সাধারণ মানুষের কথা যেমন বস্তুনিষ্ঠ জীবনচিত্র অঙ্কন করেছেন, তেমনি মানুষের কর্মে পিপাসায় জীবনচিত্র তুলে ধরতে গিয়ে আদিমতার অন্ধকারে ফিরে গেছেন বার বার। অদ্ভুত নিরাসক্তভাবে তিনি মানুষের জীবন ও সমস্যাকে দেখেছেন, সমাধানের চেষ্টাও করেছেন বুদ্ধি ও লেখনীতে। নর-নারীর জৈবসত্তা বিকাশের নানাদিক তাকে আকৃষ্ট করেছিল। তার লেখায় জৈবসত্তা ও দৈহিক বর্ণনায় ছিলেন কিছুটা বেপরোয়া প্রকৃতির।

দৈহিকভাবে অসুস্থ হলেও মানসিকভাবে যথেষ্ট বলিষ্ঠ ছিলেন মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই বলিষ্ঠতা রক্তের উষ্ণ-স্রোত উত্তাপ টের পাওয়া যায় তার গল্প-উপন্যাসের চরিত্রের বর্ণনায়, পেশায়, কাজে-কর্মে। মানিকের সাহিত্যাঙ্গনে প্রবেশটা একটা চমক এবং চমক ‘অতসী মামী’ রচনার ইতিহাস, চমক ‘দিবারাত্রির কাব্য (১৯৩৫), ‘জননী’ (১৯৩৫), ‘পদ্মানদীর মাঝি’ (১৯৩৬), ‘পুতুলনাচের ইতিকথা’ (১৯৩৬), ‘অহিংসা’ (১৯৪৮) ও চতুষ্কোণ (১৯৪৩) প্রভৃতি। পাঠকের চেতনাকে নাড়া দিতে পেরেছেন বলেই এগুলো পাঠকের কাছে আদরণীয়।

‘অতসী মামী’ গল্পের মাধ্যমে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাহিত্যাঙ্গনে যাত্রা। পরবর্তীতে তিনি ‘প্রাগৈতিহাসিক’ ‘সরীসৃপ’ ‘হারাধনের নাতজামাই’ ‘ছোট বকুলপুরের যাত্রী’ ‘ফেরিওয়ালা’ ‘বৌ’ ‘সমুদ্রের স্বাদ’-এর মতো জীবন-সমৃদ্ধ শিল্পসার্থক গল্প লিখলেন। তাঁর এই সফলতা ও সার্থকতার কারণ রয়েছে। তাঁর অভিজ্ঞতার পসরা ছিল বিচিত্র ও বিস্তীর্ণ। মধ্যবিত্ত অভিযাত্রিক সচেতনতার মধ্যে জন্ম বর্জিত হলেও বিত্তের অসচ্ছলতার চাপ শিল্পীকে ব্যক্তিগতভাবে ভোগ করতেই হয়েছে প্রায় আগাগোড়া। এককথায় মানবিক বিশ্বাসের মূলে চিড় ধরেছিল। আসলে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন মানব সত্যের প্রাণ ও স্বপ্নপুরুষ।

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের জীবন অভিজ্ঞতা ছিল ব্যাপক ও গভীর। ফলে তিনি জীবনের দিকটি দেখতেন তার সমগ্রতায়, খণ্ড খণ্ড করে নয়, অখণ্ডতায়। এটি তাঁর প্রধান গুণ এবং লেখক মাত্রেরই শ্রেষ্ঠ গুণ। তিনি যেমন ফ্রয়েডীয় মতবাদে প্রভাবিত হয়েছিলেন, ঠিক তেমনি জীবনের, মনুষ্য জীবনের মুক্তি দেখেছিলেন মার্কসবাদে। মার্কসবাদই তাঁকে দীক্ষা দেয়। এই মতবাদেই তিনি জীবন ও জগৎ সম্পর্কে যে বিশ্বাস পোষণ করেন, তাই তাঁর সাহিত্য জীবনের পাথেয়।

মনে রাখতে হয়, ব্যক্তিগতভাবে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন মধ্যবিত্ত মানসিকতারই উত্তরাধিকারী। তাঁর প্রথম গল্পগুচ্ছ ‘অতসী মামী ও অন্যান্য’ সংকলনে সব কয়টি গল্প এবং প্রথম উপন্যাস ‘দিবারাত্রির কাব্য’ মধ্যবিত্ত জীবনভিত্তিক কাহিনী নিয়ে গড়া। মানিক বন্দোপাধ্যায় যখন কৈশোর পেরিয়ে যৌবনের মুখে এসেছিলেন, তখন থেকেই বাঙালির মধ্যবিত্ত জীবনে সার্বিক অবক্ষয়ের চেতনা চারপাশ হতে ঘিরে চেপে বসতে চাইছিল।

বিশ্বজোড়া মধ্যবিত্ত বৈমানসিকতা বোধের তাড়নায় বাংলা সাহিত্য তখন পীড়িত। পাঠকের অভিজ্ঞতাতেও এ নিয়ে তারতম্য ছিল না। তবু তাঁর অন্তরের আকাক্সক্ষা ছিল অন্ধকারের নিরবচ্ছিন্নতাকে উতরিয়ে উত্তরণের পথ খোঁজার। সে জন্যই তিনি চিরস্মরণীয় ও বরণীয়।

ছোটগল্প রচনায় রোমাঞ্চ আছে। এতে গভীর মনোসংযোগ করতে হয়। এত দ্রুত তালের সঙ্গে সঙ্গতি রক্ষা করে চলতে হয় বলেই মন কখনো বিশ্রাম পায় না। ছোটগল্প লেখার সময়ে প্রতি মুহূর্তে রোমাঞ্চ বোধ করি।

–সাক্ষাৎকার : মানিক বন্দোপাধ্যায়, ১৯৫৬/

১৯৫৪ সালে ‘কেন লিখি’ নামে একটি সংকলন বেরিয়েছিল ফ্যাসিস্টবিরোধী লেখক ও শিল্পী সংঘের পক্ষে। সংকলনটির সম্পাদক ছিলেন হিরণকুমার সান্যাল ও সুভাষ মুখোপাধ্যায়। ‘বাংলাদেশের বিশিষ্ট কথাশিল্পীদের জবানবন্দি’- এই ঘোষণা থাকলেও সংকলনটিতে কথাশিল্পীদের সঙ্গে কবিরাও অংশগ্রহণ করেছিলেন। ওই সংকলনটিতে অন্যদের সঙ্গে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ও একটি লেখা লিখেছিলেন।

নিতান্তই ফরমাশি রচনা। কিন্তু বাস্তবিকই সেটি ছিল তাঁর অসাধারণ রচনা। তার মধ্যে প্রতিভাসিত হয়েছে শিল্পীমাত্রেই, কিন্তু বিশেষভাবে প্রতিবিম্বিত হয়েছেন মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে। ‘লেখা ছাড়া অন্য কোনো উপায়েই যে সব কথা জানানো যায় না সেই কথাগুলো জানাবার জন্যই আমি লিখি।’ -এই কথাটিই উক্ত রচনাটির প্রথম চরণ।

‘আড়াই বছর বয়স থেকে আমার দৃষ্টিভঙ্গির ইতিহাস আমি মোটামুটি জেনেছি।’-

এই উক্তিটির মধ্যেই মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমস্ত শিল্পকর্মের যে সচেতন বুদ্ধির প্রকাশ পায় তাই স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ‘কেন লিখি’র তিন বছর পরে ১৯৪৭ সালে, শারদীয় ‘স্বাধীনতা’ পত্রিকায় মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় ‘প্রতিভা’ নামে আরেকটি প্রবন্ধ লিখেন। ওই প্রবন্ধে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় বুঝাতে চেয়েছেন প্রতিভা কোনো ‘ঈশ্বরপ্রদত্ত রহস্যময় জিনিস’ নয়। বুঝালেন, ‘প্রতিভা আসলে এক। বৈজ্ঞানিক আর কবির প্রতিভায় মৌলিক পার্থক্য কিছু নেই- পার্থক্য শুধু বিকাশ আর প্রকাশে।’ এখানে ‘কবি’ বলতে লেখক শিল্পী মাত্রকেই বুঝিয়েছেন মানিক। আর প্রতিভা জিনিসটা কী?- না, ‘দক্ষতা অর্জনের বিশেষ ক্ষমতা।’ এছাড়া আর কিছুই নয়।

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় কবিতা লিখেছেন, নাটক লিখেছেন, প্রবন্ধ লিখেছেন; কিন্তু আসলে তিনি কথাশিল্পী, ঔপন্যাসিক ও ছোট গল্পকার। যা তাঁর প্রতিভার বিচ্ছুরণ ঘটিয়েছে।

যতটুকু জানা যায়, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা ছাপার অক্ষরে প্রকাশ পেতে থাকে তাঁর ২০/২১ বছর বয়সে। ১৯২৮ সালে প্রথম লিখতে শুরু করেন গল্প আর প্রথম মুদ্রিত গল্প ‘অতসী মামী’। আর প্রথম উপন্যাস ‘দিবারাত্রির কাব্য’ ১৯২৯ সালে প্রথম প্রকাশিত হয়। তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে ঔপন্যাসিক হিসাবেই চিহ্নিত করতে চেয়েছেন-অন্য কিছু নন তিনি, তিনি ঔপন্যাসিক। কিন্তু আমরা মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিহ্নিত করবো একই সঙ্গে গল্পকার ও ঔপন্যাসিক হিসাবে।

কারণ তিনি কেবল ঔপন্যাসিক হিসাবে সফল নন, বরঞ্চ গল্পকার হিসাবে সফলতা অর্জন করেছেন। এ প্রসঙ্গে সুকুমার সেন মনে করেন, ‘ছোটগল্পগুলিতেই শিল্পী মানিকবাবুর শ্রেষ্ঠ পরিচয় নিহিত।’ মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় প্রায় তিন দশক ধরে লিখেছিলেন প্রায় ৪০টির মতো উপন্যাস এবং তিনশতর মতো গল্প। তিনি তাঁর সংক্ষিপ্ত ৪৮ বছরের জীবনকে সম্পূর্ণ উৎসর্গ করেছিলেন সাহিত্যে।

অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত মানিককে বলেছেন, ‘কল্লোলের কুলবধন।’ বুদ্ধদেব বসু বলেছেন, কল্লোলের সর্বজ্যেষ্ঠ লেখক নরেশচন্দ্র সেনগুপ্ত (১৮৮২-১৯৬৪) আর আনুজ বিষ্ণু দে (১৯০৯-’৮২))। দিনেশরঞ্জন দাশ সম্পাদিত কল্লোল পত্রিকা চলছিল বছর সাতেক। রবীন্দ্রোত্তর তরুণ লেখকদের মুখ্যতম মাধ্যম ছিল এই পত্রিকা। ‘কালিকলম’, ‘প্রগতি’ ইত্যাদি আরো অনেক পত্রিকা ছিল তরুণ সাহিত্যের বাহন। কিন্তু ‘কল্লোল’ এর নামেই আধুনিক উত্তর জৈবিক আধুনিক সাহিত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। ‘কল্লোল’ সম্পর্কে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন শ্রদ্ধাশীল।

বুদ্ধদেব বসু ও অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্তের ভাষ্য অনুসারে আমরা মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিলম্বিত কল্লোলীয় বলেই মনে করি।

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের জীবদ্দশায় তার ১৬টি গল্পগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছিল। গল্পগুলোর নাম নিম্নে উল্লেখ করা হলো।

১. অতসী মামী (১৯৩৫), ২. প্রাগৈতিহাসিক (১৯৩৭), ৩. মিহি ও মোটা কাহিনী (১৯৩৮), ৪. সরীসৃপ (১৯৩৯), ৫. বৌ (১৯৪০/দ্বিতীয় সং ১৯৪৬), ৬. সমুদ্রের স্বাদ (১৯৪৩), ৭. ভেজাল (১৯৪৪), ৮. হলুদপোড়া (১৯৪৫), ৯. আজ কাল পরশুর গল্প (১৯৪৬/দ্বিতীয় সং ১৯৫০), ১০. পরিস্থিতি (১৯৪৬), ১১. খতিয়ান (১৯৪৭), ১২. মাটির মাশুল (১৯৪৮), ১৩. ছোট বড় (১৯৪৮), ১৪. ছোট বকুলপুরের যাত্রী (১৯৪৯), ১৫. ফেরিওলা (১৯৫৩/দ্বি-সং ১৯৫৫), ১৬. লাজুকতা (১৯৫৪)।

এই ষোলটি গল্পগ্রন্থে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রায় ২০০টি গল্প অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। সেগুলোর এখানে উল্লেখ করা হলো :

১. অতসী মামী, ২. নেকী, ৩. বৃহত্তর-মহত্তর, ৪. শ্রিপার অপমৃত্যু, ৫. সর্পিল, ৬. পোড়াকপালী, ৭. আগন্তুক, ৮. মাটির সাকী, ৯. মহাসংগম, ১০. আত্মহত্যার অধিকার (অতসী মামী), ১১. প্রাগৈতিহসিক, ১২. চোর, ১৩. যাত্রা, ১৪. প্রকৃতি, ১৫. ফাঁসি, ১৬. ভূমিকম্প, ১৭. অন্ধ, ১৮. চাকরি, ১৯. মাথার রহস্য (প্রাগৈতিহসিক), ২০. টিকটিকি, ২১. বিপত্নীক, ২২. ছায়া, ২৩. হাত, ২৪. বিড়ম্বনা, ২৫. রকমারি, ২৬. কবি ও ভাস্করের লড়াই, ২৭. আশ্রয়, ২৮. শৈলজ শিলা, ২৯. খুকী, ৩০. অবগুণ্ঠিত, ৩১. সিঁড়ি (মিহি ও মোটা কাহিনী), ৩২. মহাজন, ৩৩. বন্যা, ৩৪. মমতাদি, ৩৫. মহাকালের জটার জট, ৩৬. গুপ্তধন, ৩৭. প্যাঁক, ৩৮. বিষাক্ত প্রেম, ৩৯. দিক-পরিবর্তন, ৪০. নদীর বিদ্রোহ, ৪১. মহাবীর ও অবলার ইতিকথা, ৪২. দুটি ছোটগল্প : বোমা, ৪৩. পার্থক্য, ৪৪. সরীসৃপ (সরীসৃপ), ৪৫. দোকানির বৌ, ৪৬. কেরানীর বৌ, ৪৭. সাহিত্যিকের বৌ, ৪৮. বিপতœীকের বৌ, ৪৯. তেজী বৌ, ৫০. কুষ্ঠরোগীর বৌ, ৫১. পূজারীর বৌ, ৫২. রাজার বৌ, ৫৩. উদারচরিতানামের বৌ, ৫৪. প্রৌঢ়ের বৌ, ৫৫. সর্ববিদ্যাবিশারদের বৌ, ৫৬. অন্ধের বৌ, ৫৭. জুয়াড়ীর বৌ (বৌ), ৫৮. সমুদ্রের স্বাদ, ৫৯. ভিক্ষুক, ৬০. পূজা কমিটি, ৬১. আফিম, ৬২. গুণ্ডা, ৬৩. কাজল, ৬৪. আততায়ী, ৬৫. বিবেক, ৬৬. ট্র্যাজেডির পর, ৬৭. মালী, ৬৮. সাধু, ৬৯. একটি খোয়া, ৭০. মানুষ হাসে কেন (সমুদ্রের স্বাদ), ৭১. ভয়ংকর, ৭২. রোমান্স, ৭৩. ধন জন যৌবন, ৭৪. মুখে ভাত, ৭৫. মেয়ে, ৭৬. দিশেহারা হরিণী, ৭৭. মৃতজনে দেহ প্রাণ, ৭৮. যে বাঁচায়, ৭৯. বিলাসমন, ৮০. বাস্, ৮১. স্বামী-স্ত্রী (ভেজাল), ৮২. হলুদ পোড়া, ৮৩. বোমা, ৮৪. তোমরা সবাই ভালো, ৮৫. চুরি চুরি খেলা, ৮৬. ধাক্কা, ৮৭. ওমিলনাইন, ৮৮. জন্মের ইতিহাস, ৮৯. ফাঁদ, ৯০. ভাঙা ঘর, ৯১. অঙ্ক ও ধাঁধা (হলুদ পোড়া), ৯২. আজ কাল পরশুর গল্প, ৯৩. দুঃশাসনীয়, ৯৪. নমুনা, ৯৫. বুড়ী, ৯৬. গোপাল শাসুমল, ৯৭. মঙ্গলা, ৯৮. নেশা, ৯৯. বেড়া, ১০০. তারপর, ১০১. স্বার্থপর ও ভীরুর লড়াই, ১০২. শত্রু-মিত্র, ১০৩. রাঘব মালাকার, ১০৪. যাকে ঘুষ দিতে হয়, ১০৫. কৃপাময় সামন্ত, ১০৬. নড়ী, ১০৭. সামঞ্জস্য (আজ কাল পরশুর গল্প), ১০৮. প্যানিক, ১০৯. সাড়ে সাত সের চাল, ১১০. প্রাণ, ১১১. রাসের মেলা, ১১২. মাসি পিসি, ১১৩. অমানুষিক, ১৪১৪. পেটব্যথা, ১১৫. শিল্পী, ১১৬. কংক্রীট, ১৪১৭. রিকশাওয়ালা, ১১৮. প্রাণের গুদাম, ১১৯. ছেঁড়া (পরিস্থিতি), ১২০. খতিয়ান, ১২১. ছাঁটাই রহস্য, ১২২. চক্রান্ত, ১২৩. ভণ্ডামি, ১২৪. কানাই তাঁতি, ১২৫. চোরাই, ১২৬. চালক, ১২৭. টিচার, ১২৮. ছিনিয়ে খায়নি কেন, ১২৯. একান্নবর্তী (খতিয়ান), ১৩০. মাটির মাশুল, ১৩১. বক্তা, ১৩২. ঘর ও ঘরামি, ১৩৩. পারিবারিক, ১৩৪. ট্রামে, ১৩৫. ধর্ম, ১৩৬. দেবতা, ১৩৭. নব আলপনা, ১৩৮. ব্রিজ, ১৩৯. আপদ, ১৪০. পক্ষান্তর, ১৪১. সিদ্ধপুরুষ, ১৪২. হ্যাংলা, ১৪৩. বাগ্দীপাড়া দিয়ে (মাটির মাশুল), ১৪৪. ভালোবাসা, ১৪৫. তথাকথিত, ১৪৬. ছেলেমানুষি, ১৪৭. স্থানে ও স্তানে, ১৪৮. স্টেশন রোড, ১৪৯. পেরানটা, ১৫০. দিঘি, ১৫১. হারানোর নাতজামাই, ১৫২. ধান, ১৫৩. সাথী, ১৫৪. গায়েন (ছোট বড়), ১৫৫. ছোট বকুলপুরের যাত্রী, ১৫৬. মেজাজ, ১৫৭. প্রাণাধিক, ১৫৮. ঘর করলাম বাহির, ১৫৯. নিচু চোখে দু আনা দুপয়সা, ১৬০. নিচু চোখে একটি মেয়েলি সমস্যা (ছোটবকুলপুরের যাত্রী), ১৬১. ফেরিওয়ালা, ১৬২. সংঘাত, ১৬৩. সতী, ১৬৪. লেভেল ক্রসিং, ১৬৫. ধাত, ১৬৬. ঠাঁই নাই ঠাঁই চাই, ১৬৭. চুরিচামারি, ১৬৮. দায়িক, ১৬৯. মহাকর্কট বটিকা, ১৭০. আর না কান্না, ১৭১. এদিক-ওদিক, ১৭৬. এপিঠ-ওপিঠ, ১৭৭. পাশ-ফেল, ১৭৮. কলহান্তরিত, ১৭৯. গুণ্ডা, ১৮০. বাহিরে ঘরে, ১৮১. চিকিৎসা, ১৮২. মীমাংসা, ১৮৩. সুবালা, ১৮৪. অসহযোগী, ১৮৫. স্বাধীনতা, ১৮৬. নিরুদ্দেশ, ১৮৭. পাষণ্ড (লাজুকতা)।

এই তালিকায় যে সব গল্প একবার কোনো গ্রন্থে মুদ্রিত হয়ে পরে আবার আরেকটি গ্রন্থে মুদ্রিত হয়েছে, সেগুলো দ্বিতীয়বার আর উল্লিখিত হয়নি; যেমন- ‘অতসী মামী’র ‘মাটির সকী’ গল্পটি ‘প্রাগৈতিহাসিক’ গ্রন্থে পুনর্মুদ্রিত হয়েছিল; ‘চালক’ ‘খতিয়ানে’ প্রকাশিত হওয়ার পরে পুনর্মুদ্রিত হয়েছিল “ছোট বড়” গ্রন্থে; ‘নব আলপনা’ ও ‘ব্রিজ’ “মাটির মাশুলে” প্রকাশের পরে পুনর্মুদ্রিত হয়েছিল “ছোট বড়” গ্রন্থে; ‘বাগ্দীপাড়া দিয়ে’ “মাটির মাশুলে” প্রকাশের পরে পুনমুর্দ্রিত হয় “ছোটবকুলপুরের যাত্রী” ‘আপদ’ “মাটির মাশুলে” প্রকাশের পরে “লাজুকতা”য় পুনঃপ্রকাশিত। “মাটির মাশুল” গল্পগ্রন্থের ‘ভয়ংকর’ একাঙ্ক বলে এই তালিকায় পরিবর্জিত।

মানিকের জীবদ্দশায় তাঁর দুটি গল্পসংগ্রহ প্রকাশিত হয় :

১. মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের শ্রেষ্ঠ গল্প। ১৯৫০। দ্বি সং ১৯৫৩।

২. মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বনির্বাচিত গল্প। ১৯৫৬।

এই দুই গল্পসংগ্রহে পূর্বগ্রন্থিত তালিকার বাইরে আছে এই কয়েকটি গল্প :

১. বিচার (শ্রেষ্ঠ গল্প), ২. প্রাক-শারদীয় কাহিনী, ৩. রক্ত-নোনতা (স্বনির্বাচিত গল্প)।

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের জীবদ্দশায় তাঁর গ্রন্থভুক্ত গল্প এই ১৯০টি। আমরা সাধারণভাবে বলতে পারি শ-দুয়েক।

২. মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মৃত্যুর পরে প্রকাশিত হয় তাঁর গল্পসংগ্রহ।

এগুলো হচ্ছে :

১. মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের গল্পসংগ্রহ। ১৯৫৭।

২. উত্তরকালের গল্পসংগ্রহ। ১৯৬৩।

৩. মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের শ্রেষ্ঠগল্প (নতুনভাবে সম্পাদিত)। ১৯৬৫।

৪. মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাছাই গল্প। (১৯৮১)।

এসব সংগ্রহে ইতোপূর্বে অগ্রন্থিত যে সব নতুন গল্প সংযোজিত হয়েছে, সেগুলো হচ্ছে :

১. বড়দিন, ২. শান্তিলতার, ৩. সশস্ত্র প্রহরী, ৪. মাছের লাজ ও মাংসের ঝাঁজ, ৫. সবার আগে চাই, ৬. সবার আগে চাই, ৬. হাসপাতালে, ৭. জল-মাটি-দুধ-ভাত, ৮. খাটাল, ৯. দুর্ঘটনা, ১০. গলায় দড়ির কেন,১.. কালোবাজারের প্রেমের দর, ১২. মানুষ হতবাক নয়, ১৩. ঢেউ (গল্পসংগ্রহ), ১৪. একটি বখাটে ছেলের কাহিনী, ১৫. উপায়, ১৬. কোন দিকে (উত্তরকালের গল্পসংগ্রহ)।

যুগান্তর চক্রবর্তী মানিকের অগ্রন্থিত রচনার যে তালিকা তৈরি করেছেন (“অপ্রকাশিত মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়”, ১৯৭৬), তার অনেকগুলি গল্প : ১. স্নায়ু, ২. মানুষ কাঁদে কেন, ৩. চোখ, ৪. কলহের জের, ৫. সঞ্চয়াভিলাষীর অভিযান, ৬. অকর্মণ্য, ৭. প্রতিক্রিয়া, ৮. গৃহিণী, ৯. পুত্রার্থে, ১০. অপর্ণার ভুল, ১১. ঘটক, ১২. সন্ধ্যা ও তারা, ১৩. খুনী, ১৪. জোতদার, ১৫. ব্যথার পূজা, ১৬. সাধারণ প্রেম, ১৭. জয়দ্রথ, ১৮. শীত, ১৯. চৈতালী আশা, ২০. প্রেমিক, ২১. সমানুভূতি, ২২. বাজার, ২৩. রাস্তায়, ২৪. দলপতি, ২৫. পশুর বিদ্রোহ, ২৬. বাঘের বংশরক্ষা, ২৭. দুটি যাত্রী, ২৮. বন্ধু, ২৯. অন্ন, ৩০. ভীরু, ৩১. শারদীয়া, ৩২. ভোঁতা হৃদয়, ৩৩. গেঁয়ো, ৩৪. রূপান্তর, ৩৫. গেঁয়ো (২নং), ৩৬. বিয়ে, ৩৭. শিল্পী, ৩৮. মায়া নয়-দায়, ৩৯. স্টুডিও, ৪০. বিচিত্র, ৪১. ছোট একটি গল্প, ৪২. রতœাকর, ৪৩. অগ্নিশুদ্ধি, ৪৪. বিষ, ৪৫. গল্প, ৪৬. রোমাঞ্চকর, ৪৭. ঘাসে কত পুষ্টি, ৪৮. মতিগতি, ৪৯. চিন্তাজ্বর, ৫০. তারপর, ৫১. বিদ্রোহী, ৫২. চাওয়ার শেষ নেই, ৫৩. মেজাজের গল্প, ৫৪. পালাই! পালাই! ৫৫. সংক্রান্তি, ৫৬. ডুবুরী, ৫৭. জীবনের সমারোহ, ৫৮. রফা ও দফার কাহিনী, ৫৯. চাপা আগুন।

সব মিলিয়ে দেখা যাচ্ছে, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের জীবদ্দশায় শ-দুয়েক গল্প গ্রন্থিত হয়েছিল। লেখকের মৃত্যুর পরে আরো ষোলোটি গল্প গ্রন্থবদ্ধ হয়েছে। এর বাইরে পত্রপত্রিকায় ছড়ানো আরো আটটি গল্পের সন্ধান পাওয়া গেছে। নিশ্চিতভাবে পত্রপত্রিকায় আরো বেশ কিছু গল্প প্রকাশিত হয়ে আমাদের অগোচরে রয়ে গেছে। আমরা মোটামুটি সিদ্ধান্ত নিতে পারি, এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় কম-বেশি শ-তিনেক ছোটগল্প লিখেছিলেন।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/আমা

Wordbridge School
Link copied!