• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

মামলার তদন্তের দায়িত্ব পায় না পিবিআই


নিজস্ব প্রতিবেদক মার্চ ২৯, ২০১৬, ০৩:০৫ পিএম
মামলার তদন্তের দায়িত্ব পায় না পিবিআই

সোনালীনিউজ রিপোর্ট

বিভিন্ন মামলার দীর্ঘসূত্রিতা কমিয়ে আনতে ও পুলিশের তদন্ত কাজে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করে রহস্য উদঘাটনের লক্ষ্যে তৈরি হয়েছে পুলিশ ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো (পিবিআই) নামের বিশেষ বাহিনী।

যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (এফবিআই) আদলে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সজ্জায় তৈরি করা হয়েছে পুলিশের বিশেষ এ ইউনিটকে। কিন্তু কোনো থানাই তাদের আওতাধীন মামলাগুলোর তদন্তের কর্তৃত্ব হাতছাড়া করতে চাইছে না। ফলে বিশেষায়িত বাহিনী হয়েও সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া চাঞ্চল্যকর মামলাগুলোর একটিরও তদন্তভার পাচ্ছে না বাংলাদেশ পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট পিবিআই।

পিবিআইর একজন শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উদ্যোগে এবং পুলিশকে আধুনিকায়ন করার জন্যই পিবিআই গঠন করা হয়। কিন্তু পুলিশের ঊর্ধ্বতন কমর্তাদের একটি পক্ষ চাঞ্চল্যকর মামলা তদন্তে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ও সিআইডির অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে চান। ওই কর্তকর্তারা প্রথম দিকে নতুন এ ইউনিট গঠনে বিরোধিতাও করেন। তবে প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক চেষ্টায় একপর্যায়ে বিশেষ এ ইউনিট গঠনে বাধ্য হয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। 

এ প্রসঙ্গে পিবিআই’র কয়েকজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সংস্থাটির জন্মই হয়েছে বিভিন্ন সমস্যা মোকাবিলা করে চলার জন্য। একটি বিধিমালার জন্য স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয়ে দীর্ঘ লড়াই করতে হয়েছে। প্রতিষ্ঠার এক বছরেরও বেশি সময় পেরিয়ে চলতি বছরের শুরুতে পুলিশের তদন্তকাজে বিশেষজ্ঞ এই ইউনিটের বিধিমালা গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়। কিন্তু তার তিন মাসেও পুরোপুরি দায়িত্ব পায়নি পিবিআই।

সূত্র মতে, পিবিআই যাত্রা শুরু করেছিল ২০১২ সালের ১৮ অক্টোবর। কিন্তু নতুন একটি ইউনিটের বিশেষ ধরনের কাজগুলো আটকে ছিলো এই বিধিমালার অভাবে। নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে বিধিমালা হলেও গুরুত্বপূর্ণ বা চাঞ্চল্যকর মামলাগুলো তদন্ত করতে পারছে না। এখন পিবিআই যে মামলাগুলো তদন্ত করছে তার প্রায় সবগুলোই এসেছে আদালতের নির্দেশে।

পুলিশ সদর দফতর সূত্র জানা গেছে, থানায় পর্যাপ্ত জনবল প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা চাহিদা অনুযায়ী না থাকায় এবং নানা ধরনের কাজে সব সময় ব্যস্ত থাকায় যথাযথ মনোযোগ ও একনিষ্ঠতায় তদন্ত কার্যক্রমের প্রত্যাশিত মান অর্জন সম্ভব হচ্ছে না। তাই কার্যকর তদন্তের জন্য প্রয়োজন আধুনিক প্রযুক্তি ও পদ্ধতি গ্রহণে সক্ষম প্রশিক্ষিত বিশেষায়িত পৃথক তদন্ত ইউনিট পিবিআই গঠন করা হয়। যার উদ্দেশ্য তদন্তের মান বৃদ্ধি এবং মামলায় সাজার হার বাড়ানো।

পিবিআই কর্মকর্তারা জানান, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে পিবিআই নিজস্ব বিধিমালা পেলেও এখন মামলা পাওয়া যাচ্ছে না। মামলার জন্য এখন যুদ্ধ করতে হচ্ছে বিভিন্ন থানা পুলিশের সঙ্গে। কারণ থানা-পুলিশ কোনো মামলাই হাতছাড়া করতে চায় না।

ফলে বিশেষায়িত এই বাহিনী আদালতের নির্দেশে পাওয়া কিছু মামলা তদন্ত করছে। এর বাইরে পুলিশ সদর দফতর থেকে কয়েকটি মামলা তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছে পিবিআই। পিবিআই বিধিমালায় বলা হয়েছে পিবিআই আগাগোড়াই একটি তদন্ত ইউনিট। তাদের কাজের সুনির্দিষ্ট সিডিউল আছে। সিডিউল মতো তারা নিজেরাই নিজস্ব উদ্যোগে মামলা তদন্তের জন্য গ্রহণ করতে পারে। বিধিতে পিবিআইকে ১৫ ধরনের মামলা তদন্তের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।

এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে খুন, ডাকাতি, অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়, চোরাচালান ও কালোবাজারি, মানবপাচার, সাইবার ক্রাইম, ধর্ষণ, অস্ত্র এবং বিস্ফোরক দ্রব্য সংক্রান্ত মামলা।

সূত্র জানায়, প্রায় বছরখানেক ধরে পিবিআই আদালতের নির্দেশে বেশকিছু মামলার তদন্ত সম্পন্ন করেছে। নরসিংদী জেলার এক আদালত থেকে নির্দেশিত হয়ে ২০১৫ সালের ১০ জানুয়ারি পিবিআই তাদের ইতিহাসের সর্বপ্রথম মামলাটি তদন্তের জন্য গ্রহণ করে। তাদের তদন্তের মান, ধরন ও আদালতে উপস্থাপিত পুলিশ প্রতিবেদনে সংশ্লিষ্ট আদালত সন্তুষ্ট হয়ে একাধিক আদালত তাদের অর্ডার সিটে পিবিআইর উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছিলেন। রংপুর পীরগঞ্জ থানার একটি নারী নির্যাতনের অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনালে গেলে ট্রাইব্যুনাল তা তদন্ত করার জন্য পিবিআইর রংপুর অফিসকে দায়িত্ব দেন। আদেশটিও ছিল মনে রাখার মতো।

আদালতের আদেশে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, পিবিআইকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল উক্ত অভিযোগটি অফিসার-ইনচার্জ, পীরগঞ্জ থানার মাধ্যমে নিয়মিত মামলা হিসেবে রুজু করে ট্রাইব্যুনালে প্রতিবেদন দিতে। এ ধরনের দায়িত্ব অর্পণ প্রমাণ করে আদালত পিবিআই নামক তদন্ত সংস্থাটির প্রতি বেশ আস্থাশীল। এর বাইরেও থানা পুলিশ বা পুলিশের অন্য ইউনিট থেকে দাখিলকৃত তদন্ত প্রতিবেদনের ওপর নারাজিজনিত অনেক মামলাই অধিকতর তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে পিবিআইকে।

এরমধ্যে গত বছর পহেলা বৈশাখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় নারীদের শ্লীলতাহানির ঘটনায় দায়ের করা মামলার পুনঃতদন্তের দয়িত্বও পিবিআই’কে দেওয়া হয়েছিলো।

সোনালীনিউজ/আমা

Wordbridge School
Link copied!