• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১
সাংবাদিক হাসান শান্তনু-এর ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে

মিলনে হাসে মন, বিরহে কান্দে রে


নিউজ ডেস্ক মে ২৯, ২০১৬, ০৩:৩০ পিএম
মিলনে হাসে মন, বিরহে কান্দে রে

কৈশোর বা যৌবনের প্রেমে বিচ্ছেদের বিরহ কি জীবনের প্রৌঢ়ত্বেও মানুষকে সমান কষ্ট দেয়? জীবনের শেষ দিনগুলো পর্যন্ত কি এ কষ্ট বুকের মধ্যে জেগে থাকে? সংসার, অন্য নারী বা পুরুষের সঙ্গে দাম্পত্য জীবন যাপন, সন্তান, নিত্যদিনের লেনদেন, স্নেহ-ভালোবাসা- এতোসবের মধ্যেও কি প্রথম প্রেমকে মানুষ জীবনের কোনো অংশে এসেই ভুলতে পারে না?

সব ব্যর্থ প্রেমিকের জীবনকে একই চেহারার যন্ত্রণার আগুনে জ্বালায়? প্রেমে বিচ্ছেদের বেলায় বেদনার যে তীব্রতা থাকে, সারাজীবন তা একই রকম হয়? কৈশোর, যৌবনে মানুষ যা সহ্য করতে পারেন, জীবনের অন্য কালে তা সহ্যের শক্তি, ধৈর্য সবার থাকে?

শনিবার এগারোটার দিকে ঢাকার কারওয়ান বাজারের একটা গলির এক পাশে রিকশা থামিয়ে তাতে বসে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন মধ্য বয়সের সুঠাম শরীরের এক পুরুষ। তিনি প্রায় বিশ বছর ধরে ঢাকায় রিকশা চালান। নাম আসগর বিশ্বাস, বাড়ি গাইবান্ধায়। তার মুঠোফোন থেকে গান বাজছিলো- 'অন্তরে অন্তরে পিরিতি বাসা বান্ধে রে, মিলনে হাসে মন, বিরহে কান্দে রে'। 'অন্তরে অন্তরে' সিনেমার 'শিরোনাম গান', গেয়েছিলেন প্রয়াত খালিদ হাসান মিলু। সালমান, মৌসুমী অভিনীত এ সিনেমা বলিউডের 'আও পেয়ার কারে'র নকল। নিজের জীবনের কোনো স্মৃতি, দুঃখময় ঘটনার সঙ্গে মিলে যাওয়া গানগুলো কি দুঃখ ভুলিয়ে দেয়, নাকি অতীতের স্মৃতিকে উস্কানি দিয়ে মানুষকে আরো কাতর করে তোলে?

আসগর বিশ্বাসের সঙ্গে আলাপ ঘনিষ্ঠতার রুপ পাওয়ার পর জানলাম, তিনি কৌশোরে গাইবান্ধায় তার পাশের বাড়ির এক মেয়েকে ভালোবাসতেন। মেয়েটির অন্য কোথাও বিয়ে হয়। স্বামীসহ এখন কোথায় থাকেন, তা তিনি জানেন না। পরিবারের সদস্যদের চাপে এক পর্যায়ে আসগর আরেক নারীকে বিয়ে করেন। সংসার করছেন। তাদের চার ছেলে-মেয়ে। টানাপোড়েনের হলেও সংসারটা বেশ সুখের।

আজও আসগর ভুলতে পারেননি প্রথম প্রেমকে। ত্রিশ বছর আগে তিনি শেষবারের মতো দেখেছিলেন ওই প্রেমিকাকে। বয়স ওই নারীর শরীরে যতোই রেখা একে দিক, এখনও দেখা হলে নাকি তাকে চিনতে আসগরের সামান্যও দেরি হবে না। এ জন্যই বোধহয় কবি পূর্ণেন্দু পত্রী বলে গেছেন, প্রেমিকার চোখে আলাদা করে কাজল মাখানোর দরকার নেই। কাজল কালো চোখ প্রেমিক এমনিতেই চেনে। আসগর বিশ্বাসকে বিদায় জানানোর আগে তার মুঠোফোনে বাজছিলো পঙ্কজ উদাসের গাওয়া শ্রোতানন্দিত সেই গান- 'যেখানেই থাকো, ভালো থেকো তুমি, সুখেই থাকো, পুরানো দিনের কথা ভেবে ভুল করো না, কবে কোন ফুল দিয়েছিলাম, কখন শুকিয়ে গেছে...।'

প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পী ফকির আলমগীরের 'অ সখিনা গেছস কী না, ভুইল্যা আমারে' গানের সখিনাই তার প্রথম প্রেম। তাদের বিয়ে হয়নি। সখিনা অন্য পুরুষকে বিয়ে করে সংসার করছেন। এখন তিনি স্বামী, সন্তানসহ থাকেন ঢাকার খিলগাও এলাকায়। ফকির আলমগীরও সংসার সাজিয়েছেন। 

প্রায় নয়/দশ বছর আগে সাপ্তাহিক এখন পত্রিকার জন্য একটা সাক্ষাৎকার নিতে গিয়ে ফকির আলমগীরের কাছে জানতে চেয়েছিলাম, 'সখিনাকে ভুলতে পারবেন কি কখনো?' বলেছিলেন, 'না, এ জীবনে পারবো না।' পরে নানাভাবে চেষ্টা করে সখিনার ঠিকানা সংগ্রহ করে তার সঙ্গে দেখা করেছিলাম। জানতে চেয়েছিলাম, 'ফকির আলমগীরকে কি ভুলে গেছেন?'

তার উত্তর ছিলো, 'আমাদের প্রেমের সত্যটাকে সারা বাংলাদেশ জানে, তা রটে গেছে গেছে গানে গানে, আমি তা কিভাবে ভুলে থাকতে পারি?' সেদিন তার চোখে বেদনার রুপ দেখেছি। তবে কণ্ঠে ছিলো অহংকারের সুর। প্রথম প্রেমে বিচ্ছেদের যন্ত্রণা মানুষ জীবনভর ভোগ করলেও এর ভেতরেও কি অহংকার, গৌরব লুকিয়ে থাকে?

# লেখাটি হুবহু নেয়া হয়েছে, সাংবাদিক হাসান শান্তনু-এর ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে...

সোনালীনিউজ/ঢাকা/ জেডআরসি

Wordbridge School
Link copied!