• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

যুক্তরাষ্ট্রে চিংড়ি বাজার ফিরে পেতে বাণিজ্য মন্ত্র


নিজস্ব প্রতিবেদক ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০১৬, ০৩:৪৯ পিএম
যুক্তরাষ্ট্রে চিংড়ি বাজার ফিরে পেতে বাণিজ্য মন্ত্র

নিজস্ব প্রতিবেদক

আশঙ্কাজনক পরিমাণ কমে গেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এদেশের চিংড়ি রফতানি। বিগত ১০ বছরে যুক্তরাষ্ট্রে চিংড়ি রফতানি প্রায় ৭৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। আর এ ধারা অব্যাহত থাকলে স্বল্পসময়ের মধ্যেই ওদেশে বাংলাদেশের চিংড়ি রফতানি বাণিজ্যের কোনো অস্তিত্বই থাকবে।

এ পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রে হারানো চিংড়ি রফতানির বাজার ফিরে পেতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে। এ লক্ষ্যে আগামী মার্চে সেদেশে আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীর পাশাপাশি বিভিন্ন সেমিনারে অংশ নিতে যাচ্ছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। যুক্তরাষ্ট্রে চিংড়ির বাজার ধরতে আগামী মাসের ৩/৪ তারিখে একটি প্রতিনিধিদল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের নেতৃত্বে সেখানে যাবেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বিভিন্ন কারণে বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের চিংড়ি রফতানি বাণিজ্যে দুরবস্থা বিরাজ করছে। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে এক পাউন্ড চিংড়ি রপ্তানি হতো ৫ ডলার ৮৫ সেন্টে। কিন্তু গত ২০১৪-১৫ অর্থবছরে তা রপ্তানি হয়েছে ৪ ডলার ০৭ সেন্টে। ফলে এক বছরেই রফতানি মূল্য কমেছে ৪৩ দশমিক ৭৩ শতাংশ। তাতে চিংড়ি রফতানি খাত সংশ্লিষ্টদের চরম সংকটে পড়তে হচ্ছে। মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন দেশের ভেনামী চিংড়ির ব্যাপকহারে বাজারজাত হওয়া এবং চিংড়ি উৎপাদন কমে যাওয়ার কারণে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে ইন্ডিয়া, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, চীন, ইন্দোনেশিয়া, কম্বোডিয়ার ভেনামী চিংড়ি সাইজে ছোট আর দামেও সস্তা হওয়ায় এর প্রভাব পড়ছে এদেশের বাগদা চিংড়ির ওপর। এ অবস্থায় আগামী মার্চে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে বিদ্যমান সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।

সূত্র জানায়, ২০০৫-২০০৬ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে হিমায়িত মাছ রফতানি হয়েছিল ১৬২ দশমিক ৩৮ মিলিয়ন ডলার। সেখানে চিংড়ি রফতানি হয় ১৫৯ দশমিক ৩৯ মিলিয়ন ডলার আর সাদা মাছ রফতানি হয় ২ দশমিক ৯৯ মিলিয়ন ডলার। কিন্তু বিগত ১০ বছরের ব্যবধানে ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে এ খাতে মোট রফতানি দাঁড়িয়েছে মাত্র ৩৮ দশমিক ৯০ মিলিয়ন ডলার। তারমধ্যে চিংড়ি রফতানি হয় ৩৫ দশমিক ২৭ মিলিয়ন ডলার আর সাদা মাছ রফতানি হয় ৩ দশমিক ৬৩ মিলিয়ন ডলার।

সূত্র আরো জানায়, রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্যানুযায়ী বিগত বছরে ৫৬৮ মিলিয়ন ডলার সমপরিমাণ হিমায়িত খাদ্য রফতানি হয়েছে। তারমধ্যে ৫০৯ দশমিক ৭২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এসেছে চিংড়ি থেকে আর অন্যান্য মাছ থেকে আয় হয়েছে ৪৯ দশমিক ০৮ শতাংশ। দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে মাছের অবদান ২৫ শতাংশ। আর বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম হিমায়িত মাছের তালিকায় প্রায় ৯০ শতাংশই রফতানি হয় সাদা সোনা খ্যাত চিংড়ি। বাকি ১০ শতাংশ রফতানি হয় মিঠা পানির অন্যান্য মাছ। আগামী মাসে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের নেতৃত্বে একট প্রতিনিধি দল যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে সেদেশের চিংড়ি আমদানিকারকদের সাথে আলোচনার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীতেও অংশ নেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। মন্ত্রণালয় ও রফানিকারকদের আশা- এ উদ্যোগের মাধ্যমে বাংলাদেশ আবারো যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাগদা চিংড়ির বাজার ফিরে পাবে। কারণ বর্তমানে সেখানে নতুন প্রজাতির ভেনামী চিংড়ি একদিকে যেমন দামে সস্তা, অন্যদিকে সাইজেও ছোট। এর সাথে ব্লাক টাইগারের (বাগদা চিংড়ি) অসম প্রতিয়োগিতা, প্রক্রিয়াজাত কারখানায় কাঁচামাল সংকট, অর্থ সংকটে কারখানা বন্ধ, সনাতন চাষ পদ্ধতিতে চিংড়ি উৎপাদন এ খাতের সংকটকে আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে। ফলে বেকার হয়ে পড়ছে এ খাতে জড়িত হাজার হাজার শ্রমিক।

এদিকে ফ্রোজেন ফুটস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি গোলাম মোস্তফার মতে- সরকারের পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগ না নেয়া হলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজার একসময় বাংলাদেশ হারিয়ে ফেলবে। এখন সেখানে এক্সপো এবং দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের মাধ্যমে তাদের কাছে এদেশের চিংড়ির বিষয়টি তুলে ধরার পাশাপাশি বাগদা চিংড়ির ব্র্যান্ডডিং করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বর্তমানে সেদেশের ক্রেতারা বাংলাদেশ থেকে চিংড়ি আমদানি না করে থাইল্যান্ড, চীন, ইন্দোনেশিয়াসহ বিভিন্ন দেশের ভেন্নামি চিংড়ি কম দামে আমদানি করছে। কিন্তু তাদের কাছে এদেশের বাগদাকে উপস্থাপন করা গেলে হারারো বাজার ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন বলেন, চিংড়ি রফতানিতে আমেরিকায় বাজার আবারো ফিরে পাবার চেষ্টা করা হচ্ছে। আগামী মার্চে সেখানে বাগদা চিংড়িকে ব্র্যান্ডডিং করার পরিকল্পনা রয়েছে। পাশাপাশি প্রমোট করারও চেষ্টা করা হবে। বর্তমানে দেশীয় রফতানিকারকদের ইউরোপের দিকে নজর বেশি। এদেশের বাগদাকে সেখানে ব্র্যান্ডডিং করা গেলে আশা করা যায় ভালো ফল লাভ করা যাবে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!