• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

রেমিট্যান্স কমেছে আড়াই শতাংশ


নিজস্ব প্রতিবেদক মে ২৯, ২০১৬, ০২:১৯ পিএম
রেমিট্যান্স কমেছে আড়াই শতাংশ

চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স আগের তুলনায় কমেছে। এ সময়ে প্রবাসী শ্রমিকেরা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩০ কোটি ডলার কম অর্থ পাঠিয়েছেন। এই ১০ মাসে প্রবাসী আয় কমেছে ২ দশমিক ৩৯ শতাংশ। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের এপ্রিলে প্রবাসী আয় কমেছে ১০ কোটি ডলার। গেল বছরের এপ্রিলে দেশে যেখানে ১২৯ কোটি ৭৪ লাখ ডলার প্রবাসী আয় আসে, সেখানে চলতি বছরের এপ্রিলে এসেছে মাত্র ১১৯ কোটি ৭৪ লাখ ডলার। এ ছাড়া চলতি বছরের মার্চে প্রবাসী আয় আসে ১২৮ কোটি ৫৫ লাখ ডলার। গেল বছরের মার্চ মাসে প্রবাসী আয় এসেছিল ১৩৩ কোটি ৮৩ লাখ ডলার।

একইভাবে চলতি অর্থবছরের জুলাই, নভেম্বর, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসেও আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রবাসী আয় কম এসেছে। জানা গেছে, গত এপ্রিল মাসে রাষ্ট্রীয় মালিকানার বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে প্রবাসী আয় এসেছে ৩৬ কোটি ৪৯ লাখ ডলার। বিশেষায়িত খাতের ব্যাংকের মাধ্যমে আসা প্রবাসী আয়ের পরিমাণ ১ কোটি ১৯ লাখ ডলার। 

দেশীয় মালিকানাধীন বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৮০ কোটি ৭১ লাখ ডলার। আর বিদেশি মালিকানার ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে আসা প্রবাসী আয়ের পরিমাণ ১ কোটি ৩৩ লাখ ডলার। বরাবরের মতো এপ্রিলে সবচেয়ে বেশি প্রবাসী আয় এসেছে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে। এ ব্যাংকটির মাধ্যমে আসা প্রবাসী আয়ের পরিমাণ ৩০ কোটি ৪২ লাখ ডলার। 

সূত্রমতে, ডলারের বিপরীতে বাংলাদেশে টাকার মান দীর্ঘদিন ধরেই শক্ত অবস্থানে আছে। টাকার মান বেড়েছে। এর ফলে, প্রবাসীরা ডলার পাঠিয়ে আগের চেয়ে কম টাকা পান। দুই বছর আগে প্রবাসীরা এক ডলার পাঠালে ৮০ টাকা পেতেন। এখন পান ৭৮ টাকা। সেই হিসাবে, এ বছরের প্রথম ১০ মাসে ১ হাজার ২২৫ কোটি ডলার পাঠিয়ে প্রবাসীরা কমবেশি ৯৫ হাজার ৫৫০ কোটি টাকা পেয়েছেন।

দুই বছর আগে একই পরিমাণ ডলার পাঠিয়ে ৯৮ হাজার কোটি টাকা পেতেন তাঁরা। অর্থাৎ শুধু মুদ্রা বিনিময় হারের কারণেই দুই বছরের ব্যবধানে আড়াই হাজার কোটি টাকা কম পেয়েছেন প্রবাসীরা। রেমিট্যান্সই বাংলাদেশের বৈদেশিক আয়ের দ্বিতীয় প্রধান উৎস। মূলত গার্মেন্টস সামগ্রী রপ্তানি করেই বাংলাদেশের বৈদেশিক আয়ের সর্বোচ্চ পরিমাণ অর্জিত হয়। জিডিপি বা মোট দেশজ উৎপাদনেও রেমিট্যান্সের ভূমিকা ব্যাপক।

চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রথম থেকেই অর্থনীতির আস্থার সূচক প্রবাসী-আয়ে মন্দাভাব চলছে। তবে প্রবাসী আয়ে মন্দাভাব দেখা দিলেও বাংলাদেশের রপ্তানি পরিস্থিতি ভালো থাকায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে টান পড়েনি। তবে অর্থনীতিতে এর ভিন্ন প্রভাব দেখা যাচ্ছে। 

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, যেসব দেশ থেকে বেশি প্রবাসী আয় আসে, সেখানে ডলারের দাম বেড়ে গেছে। ফলে প্রবাসীরা আগের মতো প্রবাসী আয় পাঠালেও আমরা কম পাচ্ছি। এ ছাড়া তেলের দাম কমে যাওয়ায় প্রভাব পড়েছে প্রবাসীদের আয়ে। মূলত এ দুই কারণে প্রবাসী আয় কিছুটা কমে গেছে। প্রবাসী আয় বেসরকারি খাতের ভোগ বাড়াতে যথেষ্ট মাত্রায় সহায়তা করে। জিডিপি গণনায় একটি বড় অংশই আসে বেসরকারি খাতের ভোগ থেকে। তাই প্রবাসী আয় নেতিবাচক হলে বছর শেষে জিডিপিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিটের (রামরু) 

একটি সূত্র অনুযায়ী, সাম্প্রতিক সময়ে যেসব শ্রমিক যাচ্ছেন, তার বড় একটা অংশ নারী কর্মী। পুরুষ কর্মীদের তুলনায় নারী কর্মীর আয় কম, ফলে জনশক্তি রপ্তানি বাড়লেও প্রবাসী আয় বাড়ছে না। এ ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থ চুরি যাওয়ার কারণে প্রবাসীদের মধ্যে ব্যাংকিং চ্যানেলে অর্থ পাঠানোতে আস্থাহীনতা তৈরি হয়েছে।

এদিকে, এরই মধ্যে বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবে কাজ করতে যাওয়া নারী গৃহকর্মীদের মধ্যে ৪০ হাজার নারীকে দেশে ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছে দেশটির জনশক্তি নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। কাজে অযোগ্য হওয়ার কারণেই তাদের ফেরত পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে সৌদি গণমাধ্যম সৌদি গেজেট। বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবে নতুন করে নারী গৃহকর্মী নিয়োগ শুরু হওয়ার পর থেকে তাদের মধ্যে অযোগ্যদের ফেরত পাঠানো হচ্ছে। 

দেশটির একটি নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের মালিক হোসাইন আল হার্দি জানান, বাংলাদেশ থেকে আমদানি করা ৪০ হাজার নারী গৃহকর্মীকে ফেরত পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে, যা সৌদি আরবে মোট বাংলাদেশি গৃহকর্মীদের ৫০ শতাংশ। এই ঘটনা অর্থনীতিতে আরও বিরূপ প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/আমা

Wordbridge School
Link copied!