• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

রোহিঙ্গা শিবিরের বর্জ্যে দূষণের শঙ্কা


বিশেষ প্রতিনিধি মার্চ ১১, ২০১৮, ০২:০৪ পিএম
রোহিঙ্গা শিবিরের বর্জ্যে দূষণের শঙ্কা

ঢাকা : মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের আশ্রয়ে তড়িঘড়ি করে নির্মিত শিবিরগুলো সেখানকার পরিবেশদূষণের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবে শিবিরগুলোর মানববর্জ্য স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে বলে হুশিয়ার করেছেন বিশেষজ্ঞরা। শিগগিরই এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।

কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলার প্রায় ছয় হাজার হেক্টর জমিতে অবস্থিত বিভিন্ন আশ্রয়শিবিরে ১০ লাখ ৬৫ হাজার ৭৩৬ জন নিবন্ধিত রোহিঙ্গা বসবাস করছে। তারা প্রতিদিন কমপক্ষে ৫০০ টন মানববর্জ্য ত্যাগ করছে। ইতোমধ্যে শিবিরগুলোতে স্থাপিত স্যানিটারি টয়লেটগুলো মানববর্জ্যে ভরাট হয়ে গেছে। এগুলোর ময়লা পানি আশপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পড়া ও টিউবওয়েলের পানির সঙ্গে মিশে যাচ্ছে।

সম্প্রতি দ্য হাঙ্গার প্রজেক্ট বাংলাদেশ নামে একটি গবেষণা সংস্থার প্রতিনিধিরা শিবিরগুলো পরিদর্শন করে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে একটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। এতে শিবির ব্যবস্থাপনার বেশ কিছু বিষয়ে সরকারের সফলতার কথা বলা হলেও মানববর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে আরো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হয়। সংস্থাটির কর্মকর্তা মায়মুনা আক্তার রুবী বলেন, ‘শিবিরে রোহিঙ্গাদের জন্য স্থাপিত স্যানিটারি টয়লেটগুলোর বেশিরভাগই পূর্ণ হয়ে গেছে। ময়লা ব্যবস্থাপনা ছাড়াই পাশে আরেকটি নতুন টয়লেট বসানো হচ্ছে। এগুলোও গভীর নয়। কিছুদিন পর ওগুলোও ভরাট হয়ে যাবে।

এ ছাড়া টিউবওয়েল ও টয়লেট কাছাকাছি হওয়ায় দুই ধরনের পানি একসঙ্গে মিশে যাচ্ছে, যা স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।’ দ্রুত সরকার ও এনজিওগুলোর সমন্বয়ে মানববর্জ্য অপসারণের বিষয়ে সঠিক উদ্যোগ না নিলে পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করবে বলেও জানান তিনি।

উখিয়ার সুজন (সুশাসনের জন্য নাগরিক) সভাপতি নুর মোহাম্মদ সিকদার বলেন, ‘রোহিঙ্গা শিবিরে প্রথমদিকে বেশ কয়েকটি এনজিও টিউবওয়েল বসিয়েছিল, যেগুলোর বেশিরভাগই এখন অকেজো। টয়লেটগুলোতে বসানো হয় নরম চাকা। প্রতিটি টয়লেটে ৫টি করে চাকা দেওয়ার কথা থাকলেও দেওয়া হয়েছে ৩টি করে। টয়লেটগুলো দ্রুত ভরাট হওয়ায় সেগুলোর ময়লাকে মাটিচাপা দিয়ে পাশেই নতুন করে টয়লেট নির্মাণ করা হচ্ছে। এ ছাড়া অনেক রোহিঙ্গা যত্রতত্র মলত্যাগ করে পরিবেশ নষ্ট করছে।’ স্থানীয়দের অভিযোগ, টয়লেট ও টিউবওয়েল স্থাপনে অনিয়ম হওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

উখিয়া উপজেলার স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মেজবাহ উদ্দিন আহামদ বলেন, ‘বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা আশ্রয় নেওয়ার পরপরই শিবির নির্মাণের ফলে চারদিকে মলমূত্রের দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ত। কিন্তু এখন সেই পরিবেশ নেই। তবে বিপুল পরিমাণ মানববর্জ্য ব্যবস্থাপনার বিষয়টি নিয়ে ভাবা উচিত। আগামী বর্ষা মৌসুমে টয়লেটগুলোতে থাকা ময়লা যদি পানির সঙ্গে মিশে জমাট বাঁধে তাহলে বড় ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকির সৃষ্টি হতে পারে। টয়লেট ও টিউবওয়েল কাছাকাছি থাকলেও সমস্যা বাড়বে। এতে পানিবাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা থাকে।’

বিষয়টি নিয়ে উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নিকারুজ্জামান বলেন, ‘কিছুদিন আগে জেলা পর্যায়ে এনজিওগুলোর সঙ্গে বৈঠকে মানববর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আশা করছি, সরকার ও এনজিও মিলে মানববর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে আরো ভালো কাজ করতে পারবে।’ এ ব্যাপারে কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডা. আবদুস সালাম বলেন, ‘এখন থেকেই মানববর্জ্যরে বিষয়ে নজর দেওয়া জরুরি।’

নিকারুজ্জামান জানান, শিবিরগুলোতে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের আওতায় এ পর্যন্ত ২ হাজার ৩৪৮টি টিউবওয়েল এবং ৫ হাজার টয়লেট এবং বিভিন্ন এনজিওর মাধ্যমে ৪ হাজার ৫৩৭টি টিউবওয়েল ও ৩২ হাজার ৪৪৯টি স্যানিটারি টয়লেট বসানো হয়েছে। এ ছাড়া আরো কিছু বসানো হচ্ছে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!