• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
বাজেট অর্থবছর ২০১৬-২০১৭

শিক্ষায় বরাদ্দ ৪৯ হাজার ১৯ কোটি টাকা


বিশেষ প্রতিনিধি জুন ১, ২০১৬, ০৭:৪২ পিএম
শিক্ষায় বরাদ্দ ৪৯ হাজার ১৯ কোটি টাকা

২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেট হবে ৩ লাখ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটি টাকার। এবার সর্বোচ্চ বরাদ্দ থাকছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ রয়েছে শিক্ষায়। এবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ২৬ হাজার ৮৫৭ কোটি এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ২২ হাজার ১৬২ কোটি টাকা মিলিয়ে সর্বমোট ৪৯ হাজার ১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকছে।

এরপরই প্রতিরক্ষা ও অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ। প্রতিরক্ষা ২২ হাজার ১১৫ কোটি, স্থানীয় সরকার ২১ হাজার ৩২৬ কোটি, স্বরাষ্ট্র ১৯ হাজার ২৮৫ কোটি, স্বাস্থ্য ১৭ হাজার ৫১৬ কোটি, কৃষি ১৩ হাজার ৬৭৮ কোটি, খাদ্য ১২ হাজার ৯২ কোটি এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয় ১৩ হাজার ৬২ কোটি টাকা। হাজার হাজার কোটি টাকার এ হিসাবের মধ্যে শিক্ষার অবস্থান আশার সঞ্চার করে বৈকি। তবে ক্যাডেট কলেজের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যয় বরাদ্দ শিক্ষার সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত করে আগের মতো কোনো গোঁজামিল দেয়ার চেষ্টা হয়েছে কি-না তা পূর্ণাঙ্গ বাজেট বিবরণী দেখে বলা যাবে।

অর্থমন্ত্রী ইতিমধ্যে বলেছেন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য দুটি খাতে বরাদ্দ বাড়বে। শিক্ষামন্ত্রীও আশ্বস্ত করেছেন, চলতি অর্থবছরের শিক্ষা বরাদ্দের টাকা ফেরত যাবে না। শিক্ষার কয়েকটি স্তর নিয়ে অবশ্য অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেছেন, দেশে প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থা ভালো।

বর্তমানে প্রায় ৯০ শতাংশ শিশু স্কুলে যাচ্ছে। কিন্তু মাধ্যমিক পর্যায়ে এখনও সমস্যা রয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে শেষ করা ৪০ শতাংশ শিশু মাধ্যমিকে যাচ্ছে না। তারা ঝরে পড়ছে। অর্থাৎ জ্ঞানের জগতে প্রবেশের আগেই শেষ হয়ে যাচ্ছে তাদের শিক্ষাজীবন। তার আশা, বর্তমান সরকারের শেষ সময় পর্যন্ত এ অবস্থার উন্নতি হবে। মাধ্যমিক পর্যায়ে ঝরে পড়ার হার ২০ শতাংশ কমবে।

গত চার দশকে বাংলাদেশের অর্জন উল্লেখযোগ্য। মাথাপিছু জাতীয় আয় বৃদ্ধি, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষায় অভিগম্যতা শতভাগের কাছাকাছি পৌঁছানো, মেয়েশিশুদের অধিকহারে প্রাথমিকে ভর্তি, সে সঙ্গে বাল্যবিয়েসহ নানা উৎপাতে মাধ্যমিকে ঝরে পড়ার হার বৃদ্ধি, কারিগরি ও বৃত্তিমূলক এবং উচ্চশিক্ষায় মেয়েদের পিছিয়ে থাকা ইত্যাদি অর্জন ও সীমাবদ্ধতা দুটোকেই তুলে ধরছে।

তবে ১৯৭৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ৬টি পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার কোনোটিতেই জিডিপির নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হলেও প্রতিকূল বিশ্ব অর্থনৈতিক অবস্থাতেও বাংলাদেশের বার্ষিক প্রবৃদ্ধি অগ্রসরমান এবং প্রশংসার দাবি রাখে।

বাজেটের কলেবর বৃদ্ধি পাওয়ায় শিক্ষা খাতে অর্থায়নের পরিমাণ বেড়েছে। কিন্তু জিডিপির হারে, বাজেটে মোট ব্যয়ের অনুপাতে বরাদ্দ কমেছে।

বৃহস্পতিবার (২ জুন) অর্থমন্ত্রী যে বাজেট পেশ করতে যাচ্ছেন তাতে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য বরাদ্দ বাড়বে বলা হয়েছে। কিন্তু বরাদ্দ বৃদ্ধি ভারসাম্যপূর্ণ সহায়ক না হয়ে সমাজে বিরাজিত বৈষম্য সম্প্রসারণে সহায়ক হলে এর ফল বিপরীত হবে। এমনিতেই গ্রাম ও শহর, সরকারি-বেসরকারি, সাধারণ ও কারিগরি, নারী ও পুরুষের মধ্যে শিক্ষা ক্ষেত্রে শিক্ষা সুযোগের ব্যবধান বিরাট। শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানেও নানা ছুতায় অভিভাবকের কাঁধে সন্তানের শিক্ষা ব্যয়ের বোঝা বেড়েই চলেছে। জনসংখ্যা অনুপাতে বরাদ্দের তেমন লক্ষণ নেই।

সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় এমপিও নীতিমালা বিকেন্দ্রীকরণের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু বিকেন্দ্রায়ন তো পরের কথা, এমপিও নীতিমালাই সরকার এখনও তৈরি করতে পারেনি।

দেড় লক্ষাধিক শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী বিনা বেতনে কাজ করে যাচ্ছেন। তাদের আশার বাণী সময়ে সময়ে শোনানো হলেও এখন পর্যন্ত সরকারের কোনো সিদ্ধান্ত নেই। কবে হবে তাও অনিশ্চিত। যদিও বিনা বেতনে/বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করানো মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লংঘন। দেশে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যাপক প্রসার নিয়ে প্রশ্ন না থাকলেও কম্পিউটার শিক্ষক, অনার্স-মাস্টার্স পাঠদানকারী শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির বিষয়টি কেন বছরের পর বছর ঝুলে আছে তার কোনো সদুত্তর নেই। অন্যদিকে শিক্ষক সংগঠন ও শিক্ষাবিদরা কোথায় কয়টি প্রতিষ্ঠান দরকার তা জরিপের জন্য তাগিদ দিলেও সেদিকে কর্তৃপক্ষের কোনো দৃষ্টি নেই।

এ পরিস্থিতিতে অর্থমন্ত্রীর কালকের বাজেটে শিক্ষায় অর্থ বরাদ্দে, অর্থায়নের ধারায় কি বাস্তবতার প্রতিফলন দেখা যাবে? নাকি পুরনো গোঁজামিলের সঙ্গে নতুন কোনো চমক সৃষ্টির চেষ্টা থাকবে?


সোনালীনিউজ/ঢাকা/ জেডআরসি
 

Wordbridge School
Link copied!